২১ জানুয়ারি ২০২০, মঙ্গলবার, ৯:৫৫

আরেকটি প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত নির্বাচন দেখার অপেক্ষা!

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভবিষ্যৎ চিত্র যে কি হবে সেটি খোদ নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যেই ফুটে উঠেছে। গতকাল সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) দেয়া ইউও নোটে (আন-অফিসিয়াল নোট) নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থার সংকট নিরসন সম্ভব হবে ন। এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। সরেজমিন ঘুরে এবং মেয়র ও কাউন্সিলরদের বক্তব্যে জানা গেছে, নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ভোটারদের মাঝে অনাস্থা-অনাগ্রহ বাড়ছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের বেপরোয়া আচরণে একইসাথে ভোটারদের মাঝে শঙ্কাও বাড়াচ্ছে। তারা বলছেন, যেভাবে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, লিফলেট ছিনিয়ে নেয়া, প্রচারণায় বাধা ও নেতাকর্মীদের ওপর হামলাসহ হুমকি ধামকি চলছে তাতে ভোট নিয়ে অনাগ্রহ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত নির্বাচন দেখছে দেশের জনগণ। ভোটকেন্দ্র দখল, জালভোট প্রদান, আগের রাতে ব্যালটে সিল মারা, কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া, প্রতিদ্বন্দ্বী
প্রার্থীর এজেন্টকে কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া ও কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে যে ভোটাররা নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর কোনো আস্থাই রাখতে পারছেন না। ভোট মানেই উৎসাহ ও উদ্দীপনার ব্যাপার ছিল। তা বর্তমানে শঙ্কাতে পরিণত হয়েছে। তারা বলছেন, সিটি নির্বাচন ঘিরে আবারো সেই শঙ্কাই জনমনে ঘুরছে।

ওয়ার্ডগুলো ঘুরে দেখা যায়, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ও মেয়র প্রার্থীর তেমন কোনো পোস্টার বা ব্যানার নেই। ওয়ার্ডজুড়ে ঝুলছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের ব্যনার-পোস্টার। দু-একটি রাস্তা বা গলিতে ঝুলতে দেখা যায় বিএনপি বা অন্য সমর্থিত প্রার্থীদের কিছু পোস্টার। বিএনপির প্রার্থীরা বলেন, পোস্টার রাতে লাগালে দিনে ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। ওয়ার্ডে আমাদের কোনো পোস্টার নেই। পোস্টার লাগালেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। এছাড়াও প্রচারণা চালাতে গেলেই বাধা ও হামলা চালাচ্ছে। শুধু তাই না নারী কর্মীদের ওপরেও হামলা চালাচ্ছে। কাউন্সিলর প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ওয়ার্ডে প্রতিটি রাস্তা বা গলি থেকে তো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছেই। এমনকি আমার বাসার সামনেও কোনো পোস্টার রাখেনি। নগরীর বিভিন্নস্থানে প্রকাশ্যেই প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের পোস্টার নিয়মিত ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা পোস্টার ছেঁড়ার ঘটনাকে হীনমন্যতা ও নিচু মনমানসিকতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন। ভুক্তভোগী প্রার্থীরা এ নিয়ে প্রতিকার চেয়ে রিটার্নিং অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হচ্ছেনা।

জানা গেছে, বিরোধী পক্ষের পোস্টার ছিড়া, হামলা, হুমকি ধামকি ছাড়া ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ‘ফ্রি স্টাইলে’ চলছে আচরণবিধি লঙ্ঘন। বিএনপির অভিযোগ, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না সরকারদলীয় প্রার্থীরা। প্রার্থীদের গণসংযোগ থেকে পোস্টারিং কিংবা মাইকিং সব ক্ষেত্রেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংশ্লিষ্টরা যেন এক রকম নির্বিকার। গণসংযোগের দশ দিন পেরিয়ে গেলেও ইসির তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। তাদের এমন ভূমিকায় আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। যদিও এসব দেখার জন্য দুই সিটিতে ৪৩ জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে তাদের তেমন তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। তবে প্রার্থীদের দাবি তারা আচরণবিধি মেনেই গণসংযোগ চালাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে সামনে নির্বাচনী পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে পরিস্থিতি- এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।

জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে এ পর্যন্ত সত্তরটির অধিক অভিযোগ করেছেন মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা। অভিযোগকারীদের বেশির ভাগই বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী। অভিযোগকারীদের তালিকায় বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনও রয়েছেন। বেশির ভাগ অভিযোগের তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সতর্ক করা বা শোকজ করা ছাড়া এ পর্যন্ত আচরণ বিধি লংঘনের দায়ে তেমন কোনো কঠোর শাস্তির উদ্যোগ নেয়নি কমিশন।

জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম বলেন, আচরণবিধি প্রতিপালন ভালোভাবেই হচ্ছে। তবুও কিছু জায়গায় লংঘনের ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ পাওয়ার পরই তা ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। আমি নিজেও সরেজমিন পরিদর্শন করছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে, আর তা জানার পর ব্যবস্থা নিচ্ছি না এমন অভিযোগ সত্য নয়। নির্বাচন কমিশনার মাহুব আলমের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। তিনি বলেন, কেউ তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করলে এর দায়-দায়িত্ব কমিশন নিরূপণ করবে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে ইসি।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দুই সিটির প্রার্থীরা প্রতিনিয়ত আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন কমিশনকে এখন পর্যন্ত কোনো তৎপরতা বা হস্তক্ষেপ দেখিনি। আসলে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে চায় কিনা, তাদের সদিচ্ছা আছে কিনা- তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, এখনই যদি প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলতে বাধ্য করা না যায় তাহলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। যার ফলে নির্বাচনী পরিবেশ অশান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমরা অত্যন্ত সুষ্ঠু পরিবেশে গণসংযোগ করছি। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। কোনোরকম আচরণবিধি লঙ্ঘনের অবকাশ নেই। বিরোধীদের পোস্টার ছিড়া বা হামলা-হুমকির বিষয়টি নিছক রাজনীতিক বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রায় একইরকম মন্তব্য করেন উত্তরের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম।

একদিন পিছিয়ে আগামী ১লা ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সেই দিক থেকে এখনো কয়েক দিন বাকি। সরকারি দলের আচরণে আবারো আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও কী ৩০ ডিসেম্বরের মতো ভোট ডাকাতির পুনরাবৃত্তি হবে? নাকি হুদা কমিশন ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারবে? অপরদিকে আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলেও তারা নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছে। সিটি নির্বাচনের বিষয়ে দলটির ভাষ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করেছি। সেটাও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছিল। কিন্তু ৩০ ডিসেম্বরের ভোট ২৯ তারিখ রাতে ডাকাতির মাধ্যমে নিয়ে নেয়া হয়েছে- এটা সবাই জানে। সুতরাং এই সরকার এবং নির্বাচন কমিশন যা বলে তা তাদের মনের কথা নয়। আর এটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে, আমাদের অংশগ্রহণ করার কারণেই। তবে আমরা বিশ্বাস করি না, তারা (সরকার ও ইসি) সুষ্ঠু নির্বাচন করবে এবং আমরা আশাও করি না তারা নিরপেক্ষ করবে। তবুও আমরা জনগণের কাছে থাকার জন্য, জনগণের কাছে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, তা প্রমাণ করতেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেছেন, প্রতিপক্ষকে তা নিয়ে উদ্বেগ নেই। উদ্বেগ নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে। বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের গ্রেফতার করে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে যেতে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। তবে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়ে যাব। অন্যদিকে ইভিএম নিয়ে বারবার কারচুপির আশঙ্কা করে আসছে দলটি। তাতে জনগণের ভোটাধিকার সত্যিকারের প্রতিফলন ঘটবে নাকি ডিজিটাল ডাকাতি হবে তা নিয়েও রয়েছে ঢের উদ্বেগ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে প্রশাসনই এখন সবচেয়ে বড় বাধা। পরিস্থিতি এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে- ইসি সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলেও প্রশাসন নিরপেক্ষ না হওয়ায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ভোটকেন্দ্রের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা ও অবাধ ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনের। প্রশাসন নিরপেক্ষ নয় বলেই সুষ্ঠু ভোট না হওয়ার শঙ্কা থেকে ভোটাররা কেন্দ্রবিমুখ হয়ে পড়ছেন। যার কারণে পুরো নির্বাচনব্যবস্থাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন ইতিপূর্বে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে নিজেদের গায়ে কালি লাগিয়েছে। ঢাকা সিটি নির্বাচনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করে সেই বিতর্ক কিছুটা হলেও কমিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে বেশ কয়েকটি নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু কোনো নির্বাচনে ইসি জনগণ বা বিরোধী প্রার্থীদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। যে কারণে জনগণ ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলেছে। সেই জায়গা থেকে সরে আসতে চাইলে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিরপেক্ষ কাজ করতে হবে। আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশন যদি তারা তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করে তাহলে এধরনের কোনো পরিস্থিতি তৈরি হবে না। জনগণের আস্থা ফেরানোর জন্য এটাই তাদের শেষ সুযোগ।

ইসি এক ভয়াবহ পথে অগ্রসর হচ্ছে- এমন মন্তব্য করে স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদার একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, মানুষের মধ্যে অনাস্থা, অবিশ্বাস ও অসন্তোষ আছে। নির্বাচন কমিশনারেরা কানে তুলো আর বিবেকে তালা দেওয়ায় সাধারণ ভোটারেরা হতাশ। বিগত জাতীয় নির্বাচনে এই ইসি কলঙ্কজনক প্রতারণায় জাতির ভোটাধিকার হরণ করেছে। যার ফলে আজ আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থা অনেকাংশেই ভেঙে পড়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের একাংশ মনে করছেন, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে ভোট বিতর্ক দূর করার সুযোগ এসেছে আওয়ামী লীগের হাতে। সেই সুযোগ কাজে লাগানো উচিত। যেনতেন নির্বাচন না দিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফল যা আসে সেটিতেই আওয়ামী লীগের বিজয় হতে পারে। কেননা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারি দলের প্রার্থী পরাজিত হলেও এক দিকে যেমন ভোট বিতর্ক দূর হবে, তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের ভাবমর্যাদাও উজ্জ্বল হবে। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই মুহূর্তে দলের অধিকাংশ নেতাই চান সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক। এতে সরকারের ভাবমর্যাদা বাড়বে। কারণ, সিটি নির্বাচনে মেয়র হারলেও যেমন সরকারের ভিত নড়বে না তেমনি জিতলেও সরকার অনেক বেশি শক্তিশালী হবে বিষয়টা এমন নয়। তাই নির্বাচন নিয়ে বিশ্বস্ততা বাড়ানোর যে সুযোগ আওয়ামী লীগের সামনে এসেছে সেই সুযোগ লুফে নেয়া উচিত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন কমিশনেরই দায়িত্ব নাগরিকদের ভোটাধিকার রক্ষা করা। ভোটাধিকার রক্ষা মানে তারা নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারবেন। কেউ বাধা দেবে না। হাঙ্গামা করবে না। কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন সেই কাজটি শুরু থেকে করতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি নির্বাচনে ‘পুকুর চুরি’ হওয়ার পরও তারা নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে গীত গেয়েছেন। তারা বলেছেন, বিরোধী দলের প্রার্থীর এজেন্ট কেন্দ্রে না এলে কিছু করণীয় নেই। কিন্তু কেন ওই এজেন্টরা কেন্দ্র যেতে পারেন না, কারা এজেন্টদের গাড়িতে তুলে নিয়ে নির্বাচনী এলাকার বাইরে রেখে আসেন, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন না। কাউকে জিজ্ঞাসা করার মুরোদ রাখেন না। নির্বাচন কমিশন চোখের সামনে যা ঘটে, তা দেখতে পায় না।

http://dailysangram.info/post/404126