২০ জানুয়ারি ২০২০, সোমবার, ১:০৩

টাকা পাচার শেয়ার বাজার এবং জাতীয় অর্থনীতি

বিশেষ কোন প্রাণি নাকি পানি ঠিকই খায় কিন্তু খাওয়ার আগে সে পানি ঘোলা করে নেয়। কথা উঠেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে। বলা হচ্ছে, এ ধরনের একটি তারিখ নির্ধারণের আগে নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল বছরের ক্যালেন্ডারের ওপর চোখ বুলিয়ে নেয়া। কর্তাব্যক্তিরা নাকি সে কর্তব্য ঠিকই পালন করেছিলেন। কিন্তু তাদের চোখে ভেসে উঠেছিল জানুয়ারির ২৯ তারিখ। তারা নিশ্চয়ই ভুলে গিয়েছিলেন, বাংলাদেশের একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকজন ভারতের রাজ্য পশ্চিম বঙ্গকে অনুসরণ করে থাকেন। যেমন বাংলাদেশের জনগণ ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উদযাপন করলেও ওই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকজন করেন ১৫ এপ্রিল। অন্য প্রায় সব উৎসবও তারা পশ্চিম বঙ্গের সঙ্গে মিল রেখে পালন করে থাকেন। সে কারণে স্বরস্বতি পূজার তারিখও ৩০ জানুয়ারি ধরে সিটি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা উচিত ছিল। তাহলে অনশনসহ আন্দোলনের প্রশ্ন উঠতে পারতো না। সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্য রাখারও সুযোগ পেতো না কেউ। অন্যদিকে প্রশ্নসাপেক্ষ কারণে পরিস্থিতিকে অশান্ত করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছিল। একই কারণে বিশেষ প্রাণির পানি ঘোলা করে খাওয়ার কথা যেমন উঠেছে, তেমনি ‘সেই তো মল খসালি, তবে কেন লোক হাসালি’ কথাটাও জানতে চাওয়া হচ্ছে!

এ পর্যন্ত আসার পর পাঠকরা বিভ্রান্ত হতেই পারেন। কিন্তু আজকের বিষয়বস্তু সিটি করপোরেশন নির্বাচন নয়। পরিবর্তে জাতীয় অর্থনীতির এমন দু’-একটি দিক নিয়ে আলোচনার ইচ্ছা রয়েছে, যা এমনকি ভীতি-উদ্বেগ ও বিরক্তির কারণও সৃষ্টি করতে পারে। প্রথমেই শেয়ার বাজার প্রসঙ্গ। কারণ, শোনা যাচ্ছে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রাক্কালে আবারও নাকি শেয়ার বাজারকে ধরে টানাটানি শুরু হয়েছে, জনগণ যাতে আশাবাদী হয়ে উঠতে পারে। অন্তরালের উদ্দেশ্য কিন্তু প্রলোভনের শিকার বানিয়ে জনগণকে তথা ক্ষুদে বিনিয়োগকারীদের আরো একবার লুণ্ঠনের শিকার বানানো। কথাটা বলার কারণ, মাত্র ক’দিন আগে গত ১৪ জানুয়ারিও দেশের শেয়ার বাজার ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। টানা দরপতনের ধারাবাহিকতায় সেদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বাজার মূলধন কমেছিল প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। প্রকাশিত খবরে জানানো হয়েছে, ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র এক বছরে শেয়ার বাজারের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকার বাজারমূল্য হারিয়েছে।

এমন অবস্থায় একদিকে দেশের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সর্বস্ব তো খুইয়েছেনই, তাদের পোর্ট ফোলিও-ও ফোর্সড সেল বা জোরপূর্বক বিক্রির আওতায় পড়েছে। অর্থাৎ ঋণের অর্থ আদায়ের জন্য তাদের পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার জোর করে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার বাজার থেকে শুধু মুখ ফিরিয়ে নেননি, তারা নিজেদের শেয়ারও বিক্রি করে দিতে শুরু করেছেন। জানা গেছে, বিগত দু’ বছরে বিদেশিরা শেয়ার কেনার চাইতে বিক্রি করেছেন অনেক বেশি। এখনো তারা বিক্রির জন্যই বেশি তৎপর রয়েছেন।

প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্টে জানানো হয়েছে, শেয়ার বাজারে হঠাৎ করে এমন বিপর্যয় ঘটেনি। বাস্তবে ধারাবাহিকভাবে দরপতন ঘটছে বহুদিন ধরেই। যেমন গত বছরের ২৩ জুলাই একদিনেই বিনিয়োগকারীদের লোকসান গুনতে হয়েছিল চার হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, এভাবে প্রতিদিন দরপতন তো হচ্ছেই, হাজার কোটির অংকে টাকা উধাও হয়েও যাচ্ছে। টাকা পাচারের কর্মকান্ডও ভয়ংকর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এ প্রসঙ্গেই প্রাধান্যে এসেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মনোভাব সংক্রান্ত খবরাখবর। এসব খবরে দেশের সচেতন সকল মহলে উদ্বেগ বেড়ে চলেছে। প্রাসঙ্গিক উদাহরণ দেয়ার জন্য জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাড এবং ইইউ বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দুটি রিপোর্ট ও কিছু বক্তব্যের উল্লেখ করা যেতে পারে।

প্রথমে আঙ্কটাড-এর রিপোর্ট প্রসঙ্গ। গত ২০ নভেম্বর আঙ্কটাডের রিপোর্ট প্রকাশ উপলক্ষে রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে বছরে যতো টাকা কর আদায় হয় তার ৩৬ শতাংশের সমান টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যায়। কর হিসেবে ২০১৫ সালে আদায় করা অর্থের পরিমাণকে ভিত্তি হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে এই হিসাব করেছে আঙ্কটাড। আঙ্কটাড বলেছে, আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে মিথ্যা ঘোষণা দেয়ার মাধ্যমে সিংহভাগ অর্থ পাচার করা হয়।

আঙ্কটাড তার রিপোর্টে জানিয়েছে, ২০১৫ সালের পর গত চার বছরে অর্থ পাচারের পরিমাণ অনেক বেড়েছে এবং এখনো বেড়েই চলেছে। উল্লেখিত ওই বছরে ঠিক কি পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছিল সে সম্পর্কে আঙ্কটাড সুনির্দিষ্টভাবে না জানালেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে কর আদায় হয়েছিল এক লাখ ৪০ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। সে কারণে আঙ্কটাডের হিসাবের ভিত্তিতে অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা তাদের অভিমতে বলেছেন, ২০১৫ সালে পাচারের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫০ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। আঙ্কটাড বলার কারণে শুধু নয়, দেশি-বিদেশি অন্য অনেক সংস্থার রিপোর্টেও বিভিন্ন সময়ে জানানো হয়েছে, আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে মিথ্যা ঘোষণা দেয়ার মাধ্যমে ব্যবসায়ী নামধারী গোষ্ঠীর লোকজন আসলেও ক্রমাগতনেক বেশি পরিমাণের অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। তাদের পাচারের কার্যক্রম এখনো অব্যাহত রয়েছে। ফলে দেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে।

এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, ২০১৩ সালের এক বছরে ৭৬ হাজার তিনশ কোটি টাকা এবং ২০১৪ সালের এক বছরে ৭২ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। ওয়শিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা জিএফআই জানিয়েছে, ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাচার হওয়া অর্থে বাংলাদেশের দুই বছরের বাজেট তৈরি করা যেতো। এর সঙ্গে যদি ২০১৫ সালে পাচার হওয়া ৫০ হাজার ৬৪০ কোটি টাকাকে বিবেচনায় নিয়ে এই অনুমানকে সত্য বলে ধরে নেয়া হয় যে, গত চার বছরেও পাচারের পরিমাণ কেবল বেড়েছেই তাহলে ভীত এবং উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। বাংলাদেশের মতো দরিদ্র ও উন্নয়নশীল একটি রাষ্ট্রের জন্য এসব তথ্য-পরিসংখ্যান সকল বিচারেই অত্যন্ত ভীতিকর।

বলা দরকার, এমন অবস্থায় দেশের উন্নয়ন চেষ্টা বাধাগ্রস্ত না হয়ে পারে না। বাস্তবেও সর্বাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত যেমন হয়েছে, তেমনি এখনো হচ্ছেই। ২০১৫ সালে পাচার হওয়ার পরিমাণ উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পল্লী উন্নয়ন, পরিবহন এবং শিল্প ও ভৌত অবকাঠামো খাতে উন্নয়নের জন্য বাজেটে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল এই পরিমাণ ছিল তার চাইতেও বেশি। একই কারণে ব্যবসা ও বিনিয়োগে আগ্রহীদের মধ্যেও ভীতি-আতংক কেবল বেড়েই চলেছে। তারা তাই দেশ থেকে অবৈধ পথে পাচার করছে লক্ষ হাজার কোটি টাকা। যেমন ক্ষমতাসীনদের ‘মিত্র’ রাশেদ খান মেনন জানিয়েছেন, গত এক বছরেই দেশ থেকে নয় লক্ষ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। এজন্যই সব মিলিয়ে শিল্প-বাণিজ্যসহ অর্থনীতির প্রতিটি খাতে সংকট ক্রমাগত আরো মারাত্মক হয়ে উঠছে।

অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এমন অবস্থা কোনোক্রমেই চলতে দেয়া যায় না। টাকার পাচার বন্ধ করার পাশাপাশি পরিস্থিতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে হলে সরকারের উচিত অবিলম্বে পাচারকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া। সরকারকে একই সঙ্গে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করার জন্যও ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে আগ্রহী শিল্প উদ্যোক্তারা সহজে শিল্প-কারখানা স্থাপন করতে এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালাতে পারেন। এর কারণ, পাচারের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে অনেককেই দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নেই বলে অভিযোগ করতে শোনা যায়। সেজন্যই বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য জমি এবং গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট কাটিয়ে ওঠারও পদক্ষেপ নিতে হবে। সব মিলিয়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করা দরকার, কাউকেই যাতে অবৈধ পথে টাকা পাচার করার কথা চিন্তা না করতে হয়।

বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে প্রসঙ্গক্রমে পাচার করা সমুদয় অর্থ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। সরকারের উচিত যেসব দেশে টাকা পাচার করা হয়েছে সেসব দেশের সঙ্গে এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে চুক্তি সম্পাদন করা। কারণ, চুক্তি না থাকার কারণে সুইজারল্যান্ডের মতো বিভিন্ন দেশ ফিরিয়ে দেয়া দূরের কথা, কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কি পরিমাণ টাকা পাচার করেছে এবং সে টাকা দেশের কোন ব্যাংকে রয়েছে এ সম্পর্কিত তথ্য পর্যন্ত জানাতে সম্মত হচ্ছে না। প্রতিটি দেশের এ সংক্রান্ত আইন রয়েছে। এজন্যই দেশগুলোর সঙ্গে সরকারের উচিত চুক্তি সম্পাদন করা। এর ফলেও টাকার পাচার অনেক কমে যাবে। এভাবে সুচিন্তিত নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে টাকার পাচার বন্ধ করা সম্ভব বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদসহ বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, জাতীয় অর্থনীতির সমৃদ্ধির স্বার্থেই এ বিষয়ে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।

এবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রসঙ্গ। গত ২১ অক্টোবর সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ইউ প্রতিনিধিরা বলেছেন, ওই সংস্থার সদস্য দেশগুলোর পাশাপাশি ইইউ জোটের ২৭টি রাষ্ট্রের সঙ্গে জিএসপি তথা অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা অব্যাহত রাখতে হলে বাংলাদেশকে গণতন্ত্র, সুশাসন, শ্রম অধিকার, মানবাধিকার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলোতে অবস্থার আরো উন্নতি করতে হবে। ইইউ প্রতিনিধিরা বজানিয়েছেন, ‘ইবিএ’ বা এভরিথিং বাট আর্মসÑ অর্থাৎ অস্ত্র ছাড়া সবকিছুর আওতায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধায় পরিবর্তন আসছে। নতুন এ ব্যবস্থায় সুশাসন ও মানবাধিকারের বিষয়ে অনেক কঠিন অবস্থান নিতে চলেছে ইইউ। তেমন অবস্থায় ইউরোপের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কের ভিত্তিমূল হবে মানবাধিকার। এজন্যই বিশেষ করে মানবাধিকারের বিষয়ে বাংলাদেশকে তাগিদ দিয়েছে ইইউ।

বৈঠকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্ন এসেছে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে। বিরোধী দলগুলোকে দমন করার মাধ্যমে স্বৈরশাসনের অভিযোগ উল্লেখ করে ইইউ প্রতিনিধিরা সুশাসন ও মানবাধিকারকে বাংলাদেশের সঙ্গে সংস্থাটির বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কের ‘ভিত্তিমূল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বলেছেন, ইইউ এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২৭টি রাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে চাইলে রাজনৈতিক দমন-নিপীড়নের অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। ইইউভুক্ত দেশগুলোর পাশাপাশি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২৭টি দেশ পরিস্থিতিকে সন্তোষজনক মনে করলেই বাংলাদেশের পক্ষে অব্যাহতভাবে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা পাওয়া এবং বজায় রাখা সম্ভব হবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রশ্নে ইইউ প্রতিনিধিদের অবস্থান ও বক্তব্য বর্তমান বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ইইউ-এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে আরোপ করা পূর্বশর্ত সম্পূর্ণরূপে পূরণ না করা হলেও সংস্থাটি এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য দেশগুলো বাংলাদেশের প্রতি যথেষ্ট নমনীয়তা দেখিয়ে এসেছে। আর সে কারণেই বাংলাদেশ এখনো অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা ভোগ করতে পারছে। একই কথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত অন্য কিছু দেশের ক্ষেত্রেও সমানভাবে সত্য। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ, এসব দেশই তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশি পণ্যের প্রধান ক্রেতা। সে কারণে দেশগুলোর দেয়া শর্ত পূরণ করা দরকার। বড়কথা, এসব শর্তের মধ্যে সুশাসন ও মানবাধিকারের পাশাপাশি প্রতিটি উপলক্ষেই প্রাধান্যে এসেছে রাজনৈতিক দমন-পীড়নের মতো প্রশ্নগুলো।

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা দরকার, বিরোধী সব দলকে বাইরে রেখে এককভাবে নির্বাচন করার অভিযোগ তুলে ইইউ গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক পাঠায়নি। পরবর্তীকালে বিরোধী দল অংশ নিলেও হাতে সময় না থাকায় ইইউ-এর পক্ষে পর্যবেক্ষক পাঠানো সম্ভব হয়নি। সংস্থাটি তখন বলেছিল, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হলে ইইউ পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে নিন্দা জানানো হবে। বলা দরকার, একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় ইইউ পার্লামেন্টের পর্যবেক্ষক বা মিশন না পাঠানোর সিদ্ধান্তটি ছিল বাংলাদেশের জন্য অসম্মানজনক। কারণ, অতীতে বাংলাদেশের সব সংসদ নির্বাচনেই ইইউ পর্যবেক্ষক ও মিশন পাঠিয়েছে। সে কারণে শুধু নয়, বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্যও বিদেশি, বিশেষ করে ইইউ-এর পর্যক্ষেকদের উপস্থিতি প্রয়োজন ছিল বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মন্তব্য করেছিলেন।

গণতন্ত্রের স্বার্থে এমন অবস্থায় পরিবর্তন ঘটানোর উদ্দেশ্যেই অক্টোবর বৈঠকে ইইউ সুশাসন ও মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলোকে বাণিজ্য সুবিধার পূর্বশর্ত হিসেবে হাজির করেছে। বলা দরকার, রফতানি ও বিদেশি বিনিয়োগসহ জাতীয় অর্থনীতির ক্রমাগত সমৃদ্ধির স্বার্থেই সরকারের উচিত ইইউ এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২৭টি রাষ্ট্রের বিভিন্ন শর্ত পূরণের ব্যাপারে আন্তরিকতার প্রমাণ দেয়া এবং দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। সরকারকে একই সঙ্গে আঙ্কটাড-এর মূলকথাগুলোকেও বিবেচনায় নিয়ে দেশ থেকে টাকার পাচার বন্ধ করতে হবে। শেয়ার বাজারে লুণ্ঠন করতে দেয়া চলবে না। জাতীয় অর্থনীতির সমৃদ্ধির জন্যই এসব বিষয়ে জরুরিভিত্তিতে উদ্যোগী হওয়া দরকার।

http://dailysangram.info/post/404043