১৯ জানুয়ারি ২০২০, রবিবার, ৩:৪৫

বিভিন্ন সংস্থার উদ্বৃত্ত টাকা কোষাগারে নিতে মরিয়া সরকার

স্বায়ত্তশাসিত-আধা স্বায়ত্তশাসিতসহ বিভিন্ন সংস্থার উদ্বৃত্ত টাকা নিজ কোষাগারে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার। এ সব প্রতিষ্ঠানের তহবিলের একাংশ সরকারি কোষাগারে নিয়ে যাওয়ার যে আইন গত বছরের সেপ্টেম্বরে মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছিল গত মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে তা বিল আকারে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিলে ৬১টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে যেকোনো আইনের খসড়া তৈরির আগে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক ডাকা হলেও এ ক্ষেত্রে তা হয়নি বলে বিশেষজ্ঞরা সমালোচনা করছেন। ব্যাংকাররাও বলছেন, এই আইন কার্যকর হলে ব্যাংক খাতে সংকট বাড়বে।

জানা গেছে, চলতি মাসের ১৪ তারিখে ‘স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যানশিয়াল কর্পোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহরে তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান বিল-২০২০’ সংসদে উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরে বিলটি ৭ কর্মদিবসের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

এর আগে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত ৬৮টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকে থাকা তহবিলের একাংশ দেশের উন্নয়নকাজে লাগাতে চায় সরকার এমন বিধান রেখে নতুন একটি আইন পাস করা হয়। ওই দিন মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন, ২০১৯’ নীতিগত অনুমোদন পায়।

জানা যায়, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা হাতে রয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ২১ হাজার ৫৮০ কোটি, পেট্রোবাংলার ১৮ হাজার ২০৪ কোটি, ডিপিডিসির ১৩ হাজার ৪৫৪ কোটি, চট্টগ্রাম বন্দরের ৯ হাজার ৯১৩ কোটি এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চার হাজার ৩০ কোটি। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ৪২৫ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হাজার ২৩২ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রয়োজনীয় পরিচালন ব্যয়সহ অন্যান্য খরচ রাখার পর যে টাকা অবশিষ্ট থাকে, আইন হলে সেটিই সরকারকে দিতে হবে। এর জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে বিপদে ফেলা হবে না। তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, সরকারের হিসাবে ৬৮টি সরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংকে স্থায়ী আমানতের পরিমাণ দুই লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এ টাকাগুলো বিনিয়োগ হচ্ছে না। এ কারণে সরকার চাচ্ছে আইনের মাধ্যমে এগুলো সরকারের কোষাগারে নিয়ে জনকল্যাণমূলক কাজ করা।

সূত্রগুলো জানায়, ওই সব প্রতিষ্ঠানগুলো টাকা সরকারি তহবিলে আনতে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে আইনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। এই আইন নিয়ে কিছু বলার থাকলে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তা সংসদকে জানাতেও বলা হয়েছে। সংসদ পাস করলে আইনটি হয়ে যাবে। আইন হওয়ার পর সংস্থাগুলো সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দিতে বাধ্য হবে। গত জুন পর্যন্ত সংস্থাগুলোর কাছে ২ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা জমা রয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ বিভাগকে জানিয়েছিল। অর্থ বিভাগ প্রাথমিকভাবে আশা করছে, এসব সংস্থা থেকে সরকার ৩০ হাজার কোটি টাকা নিজের কোষাগারে নিতে পারবে। সংসদে বিল আকারে পাঠানোর আগে খসড়া তৈরি, মন্ত্রিসভার অনুমোদন, আইন মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা (ভেটিং) এবং রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের অনুমোদনও করিয়ে এনেছে অর্থ বিভাগ।

প্রস্তাবিত আইনটির নাম ‘স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহের তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন, ২০১৯’। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপিত সারসংক্ষেপে বলা হয়েছিল, আইনটি প্রণয়ন করা হলে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ও সুদ পরিশোধ ব্যয় কমবে।

যেকোনো আইনের খসড়া তৈরির আগে আন্ত:মন্ত্রণালয়ের বৈঠক ডাকা হলেও এ ক্ষেত্রে তা হয়নি বলে বিশেষজ্ঞরা সমালোচনা করছেন। ব্যাংকাররাও বলছেন, এই আইন কার্যকর হলে ব্যাংক খাতে সংকট বাড়বে। কারণ, তখন ব্যাংক থেকে টাকা চলে যাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। অন্যদিকে ব্যাংক খাত তারল্যসংকটে ভুগলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পুঁজিবাজারেও।

তবে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে সংস্থার নেওয়া তহবিলের অন্তত অর্ধেক বেসরকারি ব্যাংকে স্বল্প সুদে রাখা হবে। এটা হলে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া সহজ হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুন পর্যন্ত সাতটি খাতের সংস্থাগুলোর কাছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অ-আর্থিক যেমন বিপিসির মতো ৭১টি সংস্থার জমা ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৫৫ কোটি; রাজউক, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ১২৮টি স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার ৪১ হাজার ৫২৯ কোটি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, খাদ্য অধিদপ্তর ইত্যাদি ৫১টি দপ্তরের জমা আছে ২৪ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ ইত্যাদি সংস্থার ৬ হাজার ৮৯৬ কোটি; জীবন বীমা করপোরেশনের মতো আরও কয়েকটি সংস্থার ৬ হাজার ৩১৪ কোটি; হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের মতো কয়েকটি সংস্থার ৪ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা জমা আছে।

শীর্ষ ১০ সংস্থা: শীর্ষ ১০ সংস্থার কাছে গত বছরের জুন পর্যন্ত হিসাবে ৯৪ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা জমা আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২১ হাজার ৬১১ কোটি টাকা রয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে। এ ছাড়া পিডিবির কাছে ১৯ হাজার ৪৭৪ কোটি, পেট্রোবাংলার কাছে ১৮ হাজার ৪৭৮ কোটি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে ৯ হাজার ৯৩৪ কোটি, আরইবির কাছে ৮ হাজার ৮১৬ কোটি, তিতাস গ্যাসের কাছে ৪ হাজার ৮২২ কোটি, বিসিআইসির কাছে ৩ হাজার ৬৬৭ কোটি, রাজউকের কাছে ৩ হাজার ৩৪৬ কোটি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ২ হাজার ২৪০ কোটি এবং ডিপিডিসির কাছে ২ হাজার ২১৫ কোটি টাকা রয়েছে।

উত্থাপিত বিলে বলা হয়েছে, এসব সংস্থা চালাতে যে খরচ হয় এবং নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বছরে যে অর্থ লাগে, তা তাদের নিজস্ব তহবিলে জমা রাখা হবে। এছাড়া আপৎকালীন ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিচালন ব্যয়ের আরও ২৫ শতাংশ অর্থ এসব সংস্থা সংরক্ষণ করতে পারবে। ওই সংস্থার কর্মীদের পেনশন বা প্রভিডেন্ড ফান্ডের অর্থও তারা সংরক্ষণ করবে।

বিলটি উত্থাপনের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত/আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, পাবলিক নন-ফাইন্যানশিয়াল কর্পোরেশনসহ অন্যান্য স্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের নিজস্ব আইন ও বিধি অনুযায়ী আয়-ব্যয় ও বছর সমাপন্তান্তে তাদের হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। ব্যাংকে রক্ষিত হিসাবসমূহের স্থিতি হতে দেখা যায় যে, বর্ণিত প্রতিষ্ঠানসমূহের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমে আছে। সংস্থাসমূহের তহবিলে রক্ষিত উদ্বৃত্ত অর্থের মালিকানা প্রকৃতপক্ষে জনগণের এবং সেই কারণে উত্ত অর্থ জনগণের কল্যাণ সাধনে ব্যবহার করা সমীচীন।

বিলে মোট ৬১টি প্রতিষ্ঠানের তালিদা দেওয়া হয়েছে: প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-জাতীয় কারিকুলাম এবং টেক্সটবুক বোর্ড, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, ‘ঢাকা, কুমিল্লা, যশোর, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল, দিনাজপুর উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড), পল্লী উন্নয়ন একাডেমী-বগুড়া, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ মান নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষা ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বার্ক), জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ সেরিকালচার বোর্ড, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন (বিটিএমসি), বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন, পেট্রোবাংলা, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি), বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ চা বোর্ড, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), চট্টগ্রাম ওয়াসা, ঢাকা ওয়াসা, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন।

তবে অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখা এসব অর্থ সরকারি কোষাগারে নেয়া কতোটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ এসব অর্থ থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফা পাচ্ছে। কিন্তু তুলে নিলে ব্যাংকের নগদ অর্থে টানাপোড়ন হবে। একই সাথে কিছু অর্থ তছরুপ হতে পারে।

এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন এবিবির সভাপতি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংকে তারল্য সংকট হবে কি না তা নির্ভর করবে সরকারের টাকা উত্তোলনের পদ্ধতির উপর। কারণ সরকার কী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই টাকা নিবে সেই বিষয়ে এখনো স্পষ্ট নই। টাকাটা সরকার তুলে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ট্রেজারী সিঙ্গেল অ্যাকাউন্টে (টিএসএ) রাখবে। সেখান থেকে হয়তো বিভিন্নভাবে আবার বিভিন্ন ব্যাংকে আসবে। কিন্তু এইভাবে তা ফিরে আসতে অনেক সময় ব্যয় হবে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বলা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ‘অলস’ পড়ে আছে। আসলে অলস পড়ে থাকেনি। কারণ তা বিভিন্ন ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখা আছে। আর ব্যাংকগুলোও সেই অর্থ ফেলে রাখেনি। বিনিয়োগ করেছে। সেখান থেকে কিছু হলেও সুদ পাচ্ছে। অতএব এই অর্থকে অলস বলা যাবে না। তিনি বলেন, এখন এই টাকাগুলো চলে যাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের টিএসএ’তে। অর্থাৎ সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত ওই টাকা খরচ না করবে ততক্ষণ তা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা থাকবে। এর মানে দাঁড়ালো যে, বিভিন্ন ব্যাংকে জমা থাকা টাকাগুলো অলস ছিল না। কিন্তু সেগুলোকে অলস বানানো হলো। এছাড়া এই সময় তো কোনো মুনাফা পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকে জমা থাকা টাকাগুলো তুলে নেয়া হলে ব্যাংকগুলোতে অর্থের একটা সংকট দেখা দিবে। তখন আমানত সংগ্রহে ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হবে। এ কারণে আমানতের সুদ হার বাড়বে। তখন কোনো ভাবেই এক অংক সুদে ঋণ বিতরণ সম্ভব হবে না।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বলা হচ্ছে এই অর্থ জনকল্যাণ কাজে ব্যয় করা হবে। ধরি, এখান থেকে ১ লাখ কোটি টাকা নিয়ে ৫ লাখ কোটি টাকার জনকল্যাণমূলক কাজ হাতে নেয়া হলো। কিন্তু বাকি ৪ লাখ কোটি টাকা কোথা থেকে আসবে। আমি মনে করি যদি জনকল্যাণ কাজে ব্যয় করার জন্য কোনো প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয় এবং সেই প্রজেক্টে কত টাকা ব্যয় করা হবে তার সুচিন্তিত একটা কর্মসূচি প্রস্তুত করা হয়। তাহলে এসব অর্থ নেয়া যেতে পারে। কারণ তখন বলা যাবে যে, রাষ্ট্রীয় এই কাজে ৫ লাখ কোটি টাকার দরকার। অতএব এসব অর্থ ওই প্রজেক্টে ব্যয় করা হবে।

তিনি বলেন, এছাড়া যেহেতু এসব অর্থ স্বায়ত্তশাষিত প্রতিষ্ঠানের। তাদের যদি কোনো উন্নয়নমূলক কাজ বা বিনিয়োগের দরকার হয় তাহলে তারা তো আবার সরকারের কাছেই অর্থ চাইবে। তখন সরকার আবার অর্থ দিবে। এই অর্থ স্থানান্তরে অনেক আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পোহাতে হবে। অর্থ তছরুপ হবে। এর মানে লেনদেন বাড়লো। কিন্ত লাভ কিছুই হলো না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আর্থিকভাবে কিছুটা চাপের মুখে রয়েছে সরকার। তাই সরকারের এই মুহূর্তে অর্থের দরকার। একদিকে রাজস্ব আয় কমছে অন্যদিকে বাজেটে বিশাল ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি তো সরকারকে পূরণ করতে হবে। এসব বিবেচনায় সরকার এই অর্থ নিলে এটা খুব অগ্রহণযোগ্য মনে হবে না। কারণ সরকার যেসব কাজ করছে তা রাষ্ট্রের অনুকূলেই করছে। এই অর্থ যদি সরকার রাষ্ট্রের কল্যাণে ব্যয় করে তাহলে ভালো। কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো, আমলাদের সুযোগ-সুবিধা বা অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় করে তাহলে তা ঠিক হবে না।

http://dailysangram.info/post/403954