১৮ জানুয়ারি ২০২০, শনিবার, ১১:০২

শিক্ষার্থী ঝরে যাওয়া থামছেই না দুই বছরে ঝরেছে ৪ লাখ ; গৃহীত উদ্যোগের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন

শিক্ষার্থীদের স্কুলে নিয়ে আসা ও ধরে রাখার লক্ষ্যে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। বিনা মূল্যে বই দেয়া থেকে শুরু করে উপবৃত্তি, স্কুলে মিড-ডে মিল চালু রয়েছে। বর্তমানে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত এক কোটি ৪০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। প্রাথমিক স্তরের শতভাগ শিক্ষার্থীই উপবৃত্তির আওতায় রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুপুরে খাবার দেয়ার কর্মসূচি শুরু হয়েছে। মাধ্যমিক স্তরের উপবৃত্তির পরিমাণ বাড়ানো চিন্তা করছে সরকার। এরপরও থামছেই না শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার প্রবণতা।

২০১৭ সালে যারা জেএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল তারাই চলতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। কিন্তু দুই বছরের ব্যবধানে ঝরে পড়ল তিন লাখ ৯২ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী। উপবৃত্তিসহ নানা কর্মসূচির পরও ঝরে পড়ার হার না কমায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ঝরে পড়ার পেছনে নানা কারণের মধ্যে অন্যতম আর্থিক কারণ। অনেক বাবা-মা মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুলের চেয়ে উপার্জন করুক সে দিকে বেশি মনোযোগী থাকে। আর এ চিন্তা থেকেই সন্তানদের স্কুলে দেয় না তারা। তিনি বলেন, অনেক সময় শিশুরা বোঝে না যে মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষে তারা কী করবে। তাদের সামনে আর কোনো লক্ষ্য থাকে না। তাই পড়াশোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে তারা। মেয়েদের ঝরে পড়ার অন্য একটি কারণ বিয়ে হওয়া বা মেয়েশিশুদের স্কুলে যাওয়া-আসার পথে হয়রানির শিকার বা নিরাপত্তা।

সূত্র জানায়, ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের অধীনে চলতি বছর আগামী ১-২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসএসসির তত্ত্বীয় পরীক্ষাগুলো হবে। এ বছর তিন হাজার ৫১২টি কেন্দ্রে ২৮ হাজার ৮৮৪টি প্রতিষ্ঠানের ১৬ লাখ ৩৫ হাজার ২৪০ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। এর মধ্যে সাত লাখ ৯১ হাজার ৯১৮ জন ছাত্র এবং আট লাখ ৪৩ হাজার ৩২২ জন ছাত্রী। পরীক্ষার সার্বিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছর নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৬ লাখ ৮১ হাজার ৬৮৮ জন। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে নবম শ্রেণীতে নিবন্ধন করেছিল ২০ লাখ ৭৩ হাজার ৯৮৮ জন। দুই বছরের ব্যবধানে ঝরে পড়ল তিন লাখ ৯২ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থীরা।

অন্য দিকে ২০১৭ সালে জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়েছিল ২০ লাখ ১৮ হাজার ২৭১ জন। সে হিসাবে জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এসএসসি পর্যন্ত আসতে পারেনি তিন লাখ ৩৬ হাজার ৫৮৩ জন।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নবম শ্রেণীতে নিবন্ধন করা এবং জেএসসি উত্তীর্ণ হওয়ার মধ্যে প্রায় দুই বছরের গ্যাপ আছে। নবম শ্রেণীতে আগের বছরের অনিয়মিত শিক্ষার্থীরা নিবন্ধন করে থাকে। আর জেএসসি পাস করার পর যেসব শিক্ষার্থী নিবন্ধন করে তারাই মূলত নিয়মিত শিক্ষার্থী।

সেভ দ্য চিলড্রেনসহ শিশুদের নিয়ে কাজা করা ছয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪১ ভাগ মেয়ে এবং ৩৩ ভাগ ছেলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। এসব প্রতিবেদনে বলা হয়, স্কুল থেকে ঝরে পড়া এই শিশুরাই আসলে সবচেয়ে বেশি অধিকার বঞ্চিত হয়। বিশ্বব্যাংকের অন্য একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ১৩ লাখ শ্রমিক নতুন করে কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হচ্ছে। মোট শ্রমশক্তির সাড়ে ৮৮ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। তারা মূলত জেএসসি, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী। বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনটিতে আরো বলেছে, স্কুলে যাওয়ার উপযুক্ত শিক্ষার্থী মূলত দরিদ্রতার কারণেই স্কুলের বাইরে থেকে যাচ্ছে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/473106/