১৬ জানুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১:৩২

এবার বাংলাদেশে পেঁয়াজ বিক্রির আকুতি ভারতের

টানা চার মাস বাংলাদেশের মানুষকে ঝাঁজে কাঁদিয়ে এবার সে দেশ থেকে পেঁয়াজ কেনার অনুরোধ জানিয়েছে ভারত। ভারত সরকার মিয়ানমার, মিসর ও তুরস্ক থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ সে দেশের রাজ্য সরকারগুলো গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে লোকসান দিয়ে বাংলাদেশের কাছে বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি। ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী সে দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার রকিবুল হকের সাথে বৈঠক করে এমন প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

বন্যার কারণে উৎপাদন কম হওয়ায় সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে পেঁয়াজ রফতনি বন্ধ করার ঘোষণা দেয় ভারত। ফলস্বরূপ বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকা থেকে এক লাফে ১০০ টাকায় উঠে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে তখন মিয়ানমার, মিসর ও তুরস্ক থেকে আমদানি শুরু করে সরকার। এ ছাড়া টিসিবির মাধ্যমে বিক্রির পাশাপাশি অভিযান চালায় আড়তগুলোতে। নানামুখী তৎপরতায় মাঝে সামান্য কমার পর আবার বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। এক মাসের ব্যবধানে নিয়মিত বিরতি দিয়ে ২৮০ টাকা পর্যন্ত ওঠে পণ্যটির দাম। বর্তমানে নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলেও দাম ১০০ টাকার নিচে নামছে না।

তখন পেঁয়াজ রফতানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আশ্বাস দেয় ভারত। ভারত সফরকালে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এ আশ্বাস দেন সে দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। তবে এ জন্য আরো কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, মহারাষ্ট্র রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত সরকার। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। আগের তুলনায় খারাপ করলেও ফলাফলে বিজিপিই জিতেছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা আসেনি।

এ দিকে এযাবতকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে দেশে এবার ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় পেঁয়াজ। একই পরিস্থিতি তৈরি হয় ভারতেও। সেখানেও ২০০ টাকার ওপরে ওঠে পেঁয়াজ। পরিস্থিতি মোকাবেলায় পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন প্রদেশে চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ আমদানি করে ভারত। তবে কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজ আমদানির পর ভারতের বেশির ভাগ রাজ্য সরকার তাদের চাহিদা প্রত্যাহার করে নেয়। এতে বিপদে পড়ে দেশটির ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির সরকার।

এমন এক পরিস্থিতিতে লোকসান দিয়ে বাংলাদেশের কাছে পেঁয়াজ বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি। ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী গত সোমবার সে দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার রকিবুল হকের সাথে বৈঠক করে এমন প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানা গেছে। বৈঠকের সাথে সংশ্লিষ্ট ভারতের জ্যেষ্ঠ এক সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে দেশটির ইংরেজি দৈনিক দ্য প্রিন্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, বৈঠকে দেশীয় চাহিদার ভিত্তিতে আমদানিকৃত পেঁয়াজ রাজ্য সরকাররা কিনতে রাজি না হওয়ায় বাংলাদেশকে কিনে নেয়ার প্রস্তাব দেন ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, ভারত বিদেশ থেকে ৩৬ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির চুক্তি করেছে। ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশটিতে ১৮ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ পৌঁছেছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রদেশের সরকার আমদানিকৃত পেঁয়াজের মাত্র তিন হাজার মেট্রিক টন নিয়েছে। অবশিষ্ট পেঁয়াজ মুম্বাইয়ের জওহরলাল নেহরু বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের ভোক্তা কল্যাণবিষয়ক মন্ত্রী রাম বিলাস পাসওয়ান জানান, আমদানিকৃত পেঁয়াজ থেকে মহারাষ্ট্র সরকার ১০ হাজার মেট্রিক টন, আসাম তিন হাজার মেট্রিক টন, হরিয়ানা তিন হাজার ৪৮০ মেট্রিক টন, কর্ণাটক ২৫০ মেট্রিক টন ও ওড়িশ্যা প্রদেশ সরকার ১০০ মেট্রিক টন চাহিদা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। রাজ্যগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের আমদানিকৃত পেঁয়াজ নিতে রাজি না হওয়ায় সেগুলো পচে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ভারত এসব পেঁয়াজ প্রতি মেট্রিক টন ৫০ হাজার থেকে ৫৯ হাজার (৬০০ থেকে ৭০০ ডলারে) টাকায় আমদানি করেছে। এখন বাংলাদেশকে এসব পেঁয়াজ প্রতি মেট্রিক টন ৫৫০ থেকে ৫৮০ ডলারে কিনে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে মোদি সরকার। তবে বাংলাদেশ এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/472570/