১৫ জানুয়ারি ২০২০, বুধবার, ২:১৬

বিদেশ গমনেচ্ছুরা গলদঘর্ম

এজেন্সির জাল জালিয়াতির দৌরাত্ম্য বাড়ছে বিএমইটিতে ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না

বর্হিগমন ছাড়পত্র হাতে পেতে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের গলদঘর্ম। ডিজিটাল যুগেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বিদেশ গমনেচ্ছু সাধারণ কর্মীরা পদে পদে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। জনশক্তি রফতানির সর্বোচ্চ ভিসা আসছে সউদী আরব থেকে। প্রতিদিন হাজার হাজার বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীর আরবি ভিসার অনুবাদ করতে মাত্র একজন অনুবাদককে হিমসিম খেতে হচ্ছে। বিদেশগামী কর্মীদের শত শত ফাইলের স্তূপ জমছে সংশ্লিষ্ট টেবিলে। কতিপয় অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বয়স কম বেশি দেখিয়ে নারী কর্মীদের বিদেশ পাঠিয়ে কালো টাকার মালিক বনে যাচ্ছে। এছাড়া ঢাকা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের গুটি কয়েক অসাধু কর্মকর্তা ঘুষ ছাড়া ফিঙ্গারপ্রিন্টের অনুমতি দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠছে।

বিএমইটির সূত্র জানায়, ২০১৯ সনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৭ লাখ ১৫৯ জন নারী পুরুষ কর্মী চাকুরি লাভ করেছে। এর মধ্যে শুধু সউদী আরবেই গেছে ৬২ হাজার ৫৭৮ জন নারী গৃহকর্মীসহ ৩ লাখ ৯৯ হাজার কর্মী। আর চলতি বছরের প্রথম ১২ দিনে গেছে, ২৫ হাজার ৬৯৫ জন কর্মী। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ অতিসম্প্রতি ঘোষণা করেছেন চলতি বছর জনশক্তি রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাত লক্ষাধিক। প্রবাসী মন্ত্রী গত মাসে বিএমইটির মহাপরিচালক শামসুল আলমকে ডেকে একজন অনুবাদকের পরিবর্তে প্রয়োজনীয় অনুবাদক নিয়োগের নিদের্শ দেন। অদ্যাবধি এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। এছাড়া জনশক্তি রফতানির গতি সচল রাখার স্বার্থে বায়রা ও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো দফায় দফায় অনুবাদকের সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রবাসী মন্ত্রণালয় ও বিএমইটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েও কোনো সাড়া পায়নি।

জনশক্তি রফতানির খাতকে আরো গতিশীল করতে বিএমইটিতে কমপক্ষে পাঁচজন অনুবাদকসহ লেবার উইংগুলোতে দক্ষ জনবল নিয়োগ এবং কর্মীদের অহেতুক ভোগান্তি ও হয়রানি বন্ধের নজরদারি বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। বায়রার ইসির একজন অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ আলী এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। রাতে এক প্রশ্নের জবাবে বায়রা নেতা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সোয়া কোটি বাংলাদেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতির চাকাকে চাঙ্গা রাখছেন। অভিবাসী কর্মীদের শত শত কোটি টাকা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ ফান্ডে অলস পড়ে রয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন কয়েক হাজার বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীর ভিসা অনুবাদের জন্য একজন ফসিউলের ওপর নির্ভর করতে গিয়ে কর্মীরা অহেতুক হয়রানির শিকার হচ্ছে। বিদেশে বাংলাদেশি লেবার উইংগুলো জনবলের অভাবে অভিবাসী কর্মীরা কনস্যুলেট সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বায়রা নেতা উল্লেখ করেন ডিজিটাল যুগেও বর্হিগমন ছাড়পত্র পেতে এনালগ পদ্ধতি চলছে। সিলেটে একজন বিদেশগামী কর্মীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়া হলে তার বর্হিগমন ছাড়পত্র নিতে ঢাকায় পদে পদে ভোগান্তির কবলে পড়তে হচ্ছে। তিনি বলেন, বিএমইটির পদে পদে হয়রানি বন্ধে নজরদারি বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বিএমইটির ইমিগ্রেশন শাখায় ভিসার অনুবাদের জন্য একটি ফাইলের ৫ থেকে ৭ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এতে অপেক্ষমান অনেক কর্মীর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারী এসব তথ্য জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বায়রার একজন সাবেক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ঘুষ না দিলে বিদেশ গমনেচ্ছু নারী কর্মীদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেয়ার অনুমতি দিতে অহেতুক হয়রানি করা হয়। তিনি বলেন, বিএমইটির আগের ডিজি মো. সেলিম রেজা পদোন্নতি পেয়ে সচিব হওয়ায় বর্তমানের বিএমইটিতে ঘুষ ছাড়া অধিকাংশ ফাইলই নড়ছে না। গত ৮ জানুয়ারি নারায়গঞ্জের বিদেশ গমনেচ্ছু মাহফুজা ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে ঢাকা জেলা জনশক্তি অফিসের সহকারি পরিচালক জান্নাতুল ফিরদাউস রুপার কাছে গেলে তার বয়স , ট্রেনিং সার্টিফিকেট ও মেডিকেল সনদ সঠিক নয় বলে অহেতুক হয়রানি শুরু করেন। পরে তার পিয়নের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে বললে ৭ হাজার টাকার বিনিময়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট করা হয়।

গতকাল এ ব্যাপারে সহকারি পরিচালক জান্নাতুল ফিরদাউস রুপার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘূষের কথা আপনাকে কে বলেছে ? তিনি ঘুষের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আপনি মাহফুজাকে পাঠিয়ে দিন আমি তার বিষয়টি দেখবো। এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পরিচালক ( প্রশাসন ও অর্থ) মো. আতাউর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা জেলা জনশক্তি অফিসে ঘুষ নিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়ার অভিযোগের প্রমাণ দিতে পারলে দায়ি ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে আতাঁত করে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স কনকর্ড এপেক্স, আল হাসিব ওভারসীজ, বার্সেলোনা ওভারসীজ প্রাঃ লিঃ, মডেল এভিয়েশন সার্ভিসেস, ইস্ট ওয়েস্ট ট্রেড লিংকার্স ও আল মাস ইন্টারন্যাশনাল লিঃ ২০ বছরের কম বয়সী নারী কর্মীদের বিদেশে পাঠিয়েছে।এছাড়া তানিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল , এটিবি ওভারসীজ, ভেলী ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল মাদার ওভারসীজ সিস্টেমস লিঃ, রিফা ইন্টারন্যাশনাল , মারুফ ইন্টারন্যাশনাল ও উইনার ওভারসীজ লিঃ ৪০ বছরের বেশি বয়সের নারী কর্মীদের বিদেশে পাঠিয়েছে। প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের উপ পরিচালক মো.মিজানুর রহমান গতকাল এ বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এসব অভিযুক্ত এজেন্সির বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

https://www.dailyinqilab.com/article/260970/