১২ জানুয়ারি ২০২০, রবিবার, ১১:০৫

সিটি নির্বাচন

ঢাকায় কালো টাকার ছড়াছড়ি

ছাপাখানা ও নির্বাচনী ক্যাম্প জমজমাট * বেনামি উৎস থেকেই টাকার জোগান আসছে

আসন্ন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে নগরীতে কালো ও বেনামি টাকার ছড়াছড়ি চলছে। ইতিমধ্যে প্রার্থীরা প্রতীক পেয়ে নির্বাচনী প্রচারণার কাজে নেমে পড়েছেন। প্রায় সব প্রার্থীর নির্বাচনী পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরী। নির্বাচনী ক্যাম্পও বসিয়েছেন বিভিন্ন এলাকায়। এতে প্রার্থীদের খরচ যেমন বেড়েছে, তেমনি ক্যাম্প পরিচালনায় বাড়তি অর্থও খরচ হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের ব্যয়, প্রার্থীর পোস্টার ছাপানো, পরিবহন, কাগজ, কালি, ছাপাখানার খরচ, এগুলো টানানো, ক্যাম্প সাজানো ও পরিচালনার কাজেও প্রচুর কালো টাকা খরচ করছেন।

নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী একজন মেয়র প্রার্থী তার ব্যক্তিগত খরচ বাবদ সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা এবং নির্বাচনী কাজে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা খরচ করতে পারবেন। কাউন্সিলর প্রার্থীরা ব্যক্তিগত খাতে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা এবং নির্বাচনী কাজে সর্বোচ্চ ৬ লাখ টাকা খরচ করতে পারবেন। এর বেশি অর্থ কোনো ক্রমেই খরচ করা যাবে না। বাস্তবে এই বিধিটি মানা হচ্ছে না। ফলে প্রার্থীরা এর চেয়ে বেশি অর্থ খরচ করছেন। এবারের নির্বাচনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এই দুই সিটিতে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন ১৪ জন এবং কমিশনার পদে প্রার্থী হয়েছেন ১ হাজার ২৫ জন।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রার্থীরা এবারের নির্বাচনে যতটা না বৈধ টাকা খরচ করবেন তার চেয়ে বেশি খরচ করবেন কালো টাকা। কেননা এবারও ক্যাসিনোকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এমন কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। ক্যাসিনো থেকে অর্জিত অর্থও তারা নির্বাচনী কাজে ব্যয় করতে পারেন। কেননা বৈধভাবে ব্যয়ের সীমার অর্থ দিয়ে প্রার্থীদের কিছুই হবে না। ফলে তারা বাড়তি অর্থ খরচ করবেন এটাই স্বাভাবিক।

তারা বলেছেন, প্রার্থীরা নির্বাচনী হলফনামায় আয়-ব্যয়ের হিসাব যা দেখিয়েছেন তা বাস্তবের তুলনায় অনেক কম। দুদক যাদের বিরুদ্ধে কোটি টাকার দুর্নীতির মামলা করেছে তাদের কেউ কেউ মাত্র ১৬ লাখ টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, সিটি নির্বাচনে টাকা খরচ করবে এমনভাবে যেন কেউ বুঝতে না পারে। বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি নানা কারণে সমালোচিত। সে ক্ষেত্রে তারা কালো ও বেনামি উৎস থেকে পাওয়া টাকাই বেশি ব্যবহার করবেন। কেননা এতে সীমার চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হলেও তা ধরা পড়ার কোনো সুযোগ নেই।

সূত্র জানায়, টাকা বেশি উড়ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে। কারণ এই সিটিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলছে। অন্তত এখন পর্যন্ত পরিবেশ তেমনই আভাস দিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাসিনো অভিযানে অভিযুক্তদের ৯০-৯৫ ভাগই ছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটির। কাউন্সিলর মোমিনুল হক সাঈদ ওরফে ক্যাসিনো সাঈদও কম আলোচনায় ছিলেন না। সে সাঈদ আবারও দক্ষিণে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই যে দুর্নাম ছড়িয়েছে ইতিমধ্যে, তা কেবল নগদ টাকাই পারে ভুলিয়ে দিতে। সর্বোপরি মশা নিধনে ব্যর্থতা বা ক্যাসিনোকাণ্ড- যে কারণেই হোক ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ফলে দলীয় মনোনয়নও পাননি তিনি। সব মিলিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচন এবার অনেক বেশি আলোচনায়। সে কারণে এ সিটিতে নগদ টাকা উড়ছে বেশি।

দক্ষিণের কয়েকটি ব্যাংকের শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের প্রকাশ্যে দেখা না গেলেও তাদের স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন, পার্টির নেতা, বাজার কমিটি, মহল্লার প্রধান এবং অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা টাকা তুলছেন এবং নির্বাচনে খরচ করছেন।

অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, সাধারণত যে কোনো নির্বাচনে নগদ টাকার ব্যবহার বাড়ে। এবারও বাড়তে পারে। নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার বেশি হয়। সিটি নির্বাচনেও তাই হতে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সরকারি ব্যাংকের নয়াবাজার এলাকার একজন শাখাপ্রধান যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে নগদ টাকার প্রবাহ বাড়ছে। বিশেষ করে প্রার্থীর কাছের লোকজন ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন, কেউ এফডিআর ভাঙছেন। তবে প্রার্থীদের সরাসরি ব্যাংকে আসতে দেখা যাচ্ছে না।

অপর একটি সরকারি ব্যাংকের ঢাকা একাংশের জোনাল হেড যুগান্তরকে বলেন, শুনেছি নগদ টাকার লেনদেন হচ্ছে। তবে ব্যাংক তা বুঝতে পারবে না। কারণ গ্রাহক টাকা তুলে নিয়ে কোথায় খরচ করছে তা বোঝার সুযোগ নেই।

https://www.jugantor.com/todays-paper/economics/265930/