১২ জানুয়ারি ২০২০, রবিবার, ১১:০৪

এক বছরে রেকর্ডসংখ্যক বিচারক বদলি ও পদোন্নতির আদেশ

১৯ আইন প্রণয়ন ও ৪১১ সংবিধিবদ্ধ প্রজ্ঞাপন

আইন মন্ত্রণালয় গত এক বছরে ১৯টি আইন প্রণয়ন, একটি অধ্যাদেশ ও ৪১১টি সংবিধিবদ্ধ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এ সময়ে উল্লেখযোগ্য আইন ছাড়াও বিধিমালা, চুক্তি ও সমঝোতাস্মারকের নির্ভরযোগ্য অনূদিত পাঠ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়াও একই সময়ে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে রেকর্ডসংখ্যক বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তা নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির আদেশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে অনেকে প্রেষণে রয়েছেন। আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

২০১৯ সালে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সহায়তায় প্রণীত আইনগুলোর মধ্যে ‘বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় আইন, উদ্ভিদের জাত সংরক্ষণ আইন, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ আইন, বীমা করপোরেশন আইন, প্রাণী কল্যাণ আইন ও বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন উল্লেখযোগ্য।

বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর বিচারক নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি সব ক্ষেত্রেই সুপ্রিম কোর্টের একক এখতিয়ার থাকার কথা রয়েছে; কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় না হওয়ায় বিচারক নিয়োগ-বদলি ও পদোন্নতিতে ক্ষমতায় ভাগ বসিয়েছে সরকার তথা আইন মন্ত্রণালয়। তবে নিয়োগ-বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন নিতে হয়।

এ দিকে তিন শতাধিক বিচারিক কর্মকর্তা নির্বাহী বিভাগে প্রেষণে রয়েছেন। তারা আইন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, সংসদ সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তথা সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। এসব বিচারিক কর্মকর্তা দীর্ঘ দিন নির্বাহী বিভাগে কর্মরত থাকলেও তাদেরকে বিচারকাজে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেই। বরং প্রেষণে বদলি বা পদায়ন অব্যাহত রয়েছে।

এর পাশাপাশি সর্বোচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা বা আইন না থাকায় নিয়োগ নিয়ে দেখা দেয় বারবার বিতর্ক। বিভিন্ন মহলের সমালোচনা ও বিতর্কের মুখে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের জন্য নতুন করে আইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েও তা সম্পন্ন করতে পারেনি আইন মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় উচ্চ ও নি¤œ আদালতে পাহাড়সম মামলা জমেছে। বিচারকার্যক্রম ধীরগতির কারণে অধিকাংশ বিচারপ্রার্থী যথাসময়ে বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, দেশে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫৩টি। এরমধ্যে দেওয়ানি ১৩ লাখ ৯৭ হাজার ৩৫৪টি, ফৌজদারি ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৫টি এবং অন্যান্য ৮৮ হাজার ৮৩৪টি। এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রতিদিন নতুন করে প্রায় ১০ হাজার মামলা যুক্ত হচ্ছে জটে। যেভাবে মামলা বাড়ছে সে তুলনায় নিষ্পত্তি নগণ্য বললেই চলে। তবে নতুন বছরে প্রত্যাশাÑ নিষ্পত্তির মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীরা দ্রুত বিচার পাবেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও মামলা জট কমাতে আশার কথা শুনিয়েছেন।

এ দিকে আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকার অনেক আইন প্রণয়ন ও সংশোধন করলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। এতে জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে। যত দিন জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে সরকারের সদিচ্ছা না হবে তত দিন আইন প্রণয়ন কোনো কাজে আসবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সামাজিক সচেতনতা তৈরি না করে শুধু আইন দিয়ে কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়। যে কারণে কার্যকর নয় এমন অনেক আইন অব্যবহৃত পড়ে আছে। তা ছাড়া গোষ্ঠীস্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ক্ষেত্রবিশেষে আইন প্রণয়ন করা হয় বলে তা কোনো কাজে আসে না। তারা বলছেন, সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন নতুন আইন হতে পারে। পুরনো আইন দিয়ে বর্তমান সময়ের সমস্যা সমাধান করা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে নতুন পরিস্থিতি মোকাবেলায় নতুন আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা থাকতে পারে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/471543/