১১ জানুয়ারি ২০২০, শনিবার, ১২:২১

তামাবিল স্থলবন্দরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন পর্যটকরা

ঘনঘন কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা বদলালেও বদলানো যায়নি তামাবিল স্থলবন্দরের চরিত্র। এখানকার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যাত্রী-পর্যটক হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ছল-চাতুরিতে তারা যাত্রীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেন অর্থকড়ি। তাতে ব্যর্থ হলে নানান বাহানায় শুরু করে হয়রানি। তবে এখন সেই হয়রানির কৌশল তারা বদলে ফেলেছেন। ‘মক্কেল’ ধরার নতুন ফিকির বের করেছেন তামাবিল স্থল বন্দরের কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা। নিজেরা কাউকে বাগে আনতে না পারলে ওপারে প্রতিবেশী দেশের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজেদের মতলব হাসিল করছেন তারা। যাত্রী হয়রানি, পণ্য রেখে দেয়া, যে কোনো অজুহাতে পর্যটকদের ফিরিয়ে দেয়াসহ নানা ঘটনা ঘটছে অহরহই- জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

হয়রানি থেকে বাদ যাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সাংবাদিক, সাহিত্যিক, আইনজীবী, সরকারি চাকরিজীবীসহ কেউই! চলতি সপ্তাহে কয়েকজন সঙ্গীসহ সিলেটের এক লেখক-কবি গিয়েছিলেন ভারত সফরে। ইমিগ্রেশনে রমজান আলীসহ কয়েককজন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাদের পাসপোর্ট হাতে নিয়ে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা তার পেশা সম্পর্কে জানতে চান। পরিচয় দেয়ার পর কোনো হয়রানি ছাড়া তারা বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন থেকে বেরিয়ে গেলেও বিপত্তি বাদে ভারতের ডাউকি ইমিগ্রেশনে। সেখানে পাসপোর্ট জমা দেয়ার পর ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস কর্মকর্তারা তার নাম ধরে খুঁজতে থাকেন। সেখানকার ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তার কাছে থাকা ব্যাগ, পাসপোর্ট, এমন কি মানি ব্যাগে ডলার ছাড়া আর কোনো টাকা বা ভারতীয় মুদ্রা আছে কি না তাও বের করে দেখেন। কোনোও অসঙ্গতি না পেয়ে তারা জানতে চান, বাংলাদেশের ইমিগ্রেশনে কি হয়েছে। তারা হোয়াটসঅ্যাপে আপনার নামে ‘ঝামেলা আছে’ উল্লেখ করে এসএমএস পাঠিয়েছেন। এ সময় তার সঙ্গীরা ভারত সফরে নতুন হওয়ায় তাদের জন্য উৎকোচ দাবি করেন। তার অভিযোগ, তারা প্রায় একঘণ্টা তাকে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা রকম হয়রানি করেন। তিনি জানান, আসলে তার সঙ্গের একজনের ভিসার মেয়াদ ছিল মাত্র ৬ দিন। তারা ২ দিনের জন্য শিলং সফরে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনে কোন সমস্যার সৃষ্টি না করে ওই অজুহাতে ভারতের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের দিয়ে তারা উৎকোচ নেয়ার ফিকির করেন। অভিযোগের ব্যাপারে তামাবিল স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা রমজান আলী সাংবাদিককের জানিয়েছেন- ‘আমাদের এখান থেকে এ রকম করার প্রশ্নই আসে না। আমরা কখনই এটি করতে পারি না। ডাউকির ইমিগ্রেমন কর্মকর্তারা কেন তার কাছে আমাদের দোহাই দিলেন আমরা জানি না, এটা তারাই ভাল জানেন।’ তামাবিল বর্ডার হয়ে ভারত সফরে গেছেন এমন একাধিক যাত্রী ও পর্যটক জানান, তাদের সঙ্গেও নানা রকম হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। নগরীর আম্বরখানার আইরিন সুলতানা নামে একজন গৃহিণী জানান, তামাবিল স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশনের শেষ সময় সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত। নভেম্বরের মাঝামাঝিতে পরিবারসহ তারা ভারত সফরে গিয়ে ফেরেন বিকেল পৌনে ৬ টায়। এ সময় দায়িত্বরত কর্মকর্তা ‘এত দেরি কেন? আপনাদের জন্য আমরা রাত পর্যন্ত বসে থাকবো নাকি? আরও আগে আসতে পারেন না?’ বলে ভর্ৎসনা করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তামাবিল স্থল বন্দরে ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমসে হয়রানির নিত্যদিনের বিষয়। এখন ফেরার সময় যাত্রীরা সামান্য পরিধান ও পণ্য আনলেও কৈফিয়ত দিতে হয়। লাগেজ ছাড়াও হ্যান্ডবেগ, মানিব্যাগ দেখা হয়। একই রকম দু’টি পোশাক বা ছোটখাটো পণ্য দেখলে সেগুলো সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। পুরুষ অফিসাররাই নারী যাত্রীদের হ্যান্ড ব্যাগ তল্লাশি করেন এবং বাড়তি কিছু পেলে তা তারা রেখেও দেন! এমুহূর্তে তামাবিল বর্ডার দিয়ে সাধারণ যাত্রী ও পর্যটকরা ভারত সফরে যেতে হয়রানির ভয় পাচ্ছেন। হয়তো যে পোশাক নিয়ে তারা ভারতে যাবেন ফেরার সময় তার সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করা হবে। ট্যুর অপারেটর পরিচালনা করেন, সিলেটের এমন একজন ব্যবসায়ী বলেন, তামাবিল দেশের সবচেয়ে নিরাপদ বন্দর। বিজিবি-বিডিআর যোগসাজশে জাফলং-তামাবিল দিয়ে অবৈধ পণ্য আনা নেয়ার অভিযোগ থাকলেও যাত্রীরা এই বন্দর দিয়ে আসা যাওয়াই করেন। এই রুটের যাত্রী যারা তারা মূলত পর্যটক। ভারতে ঘুরতে যান। ফেরার সময় কিছু কেনাকাটা করে নিয়ে আসেন। এগুলো নিয়ে আসতেই নানান রকম হয়রানির মুখে পড়তে হয় তাদের।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=207749