১১ জানুয়ারি ২০২০, শনিবার, ১২:০৮

সীমান্তে বাংলাদেশী দেখলেই গুলী প্রতিশ্রুতি মানছে না বিএসএফ

সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ‘লিথাল উইপন’ ব্যাবহার না করার ব্যাপারে বাংলাদেশ-ভারত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রতিশ্রুতবদ্ধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। দুই দেশের সীমান্ত সম্মেলনেও এই সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবে কার্যকর হচ্ছে না। সীমান্তে বাংলাদেশিদের দেখামাত্র গুলি চালাচ্ছে বিএসএফ। বিএসএফ-এর হাতে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা চলছেই।

চলতি বছরের (২০২০) শুরুতেই সীমান্তে দুই বাংলাদেশিকে গুলী করে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ)। এসময় আরও দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়। ফলে আবারও সীমান্ত হত্যা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে সীমান্তে।

সরকারি হিসাবে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সীমান্ত হত্যা বেড়েছে ১২ গুণ। আর বেসরকারি হিসাবে তিনগুণের বেশি। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের(আসক) হিসেবে ২০১৯ সালে সীমান্তে ৪৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুলিতে ৩৭ জন এবং নির্যাতনে ছয় জন। আহত হয়েছেন ৪৮ জন। অপহৃত হয়েছেন ৩৪ জন। ২০১৮ সালে নিহত হয়েছেন ১৪ জন। আর ২০১৭ সালে ২৪ জন।

পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত তিন বছরের হিসাবে সবচেয়ে বেশি সীমান্ত হত্যা হয়েছে গত বছর (২০১৯)। সর্বশেষ দিল্লীতে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বৈঠকের পরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি নেই।

জানা গেছে, গত বছর ২৫ থেকে ৩০ ডিসেম্বর ভারতের রাজধানী দিল্লীতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন হয়। সেখানে হত্যা কমিয়ে আনা নিয়েও আলোচনা হয়। বাংলাদেশ থেকে বিজিবি মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল এবং ভারতের বিএসএফ মহাপরিচালক শ্রী বিবেক জোহরীর নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল ওই সম্মেলনে অংশ নেয়। ঢাকায় ফিরে ২ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম সীমান্ত হত্যা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এই বিষয়ে বিএসএফ মহাপরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। বিএসএফ মহাপরিচালককে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। ওনারা এ বিষয়ে আরও সতর্ক ও সজাগ থাকবেন। যেন সীমান্তের এই অনাকাঙ্খিত হত্যাকাণ্ড এভয়েড করা যায়।

তিনি জানান, ২০১৯ সালে সীমান্তে ৩৫ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। কিন্তু বিএসএফ-এর হিসেবে এই সংখ্যা আরো কম। আর সরকারি হিসেবে ২০১৮ সালে সীমান্তে তিনজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। ২০১৭ সালে ১৭ জন।

খবরে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ-ভিত্তিক ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন, মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম) প্রধান কীরিটি রায় বলেন, আগে বিএসএফ বলতো আমাদের ওপর আক্রমন করতে এলে আমরা আত্মরক্ষার্থে গুলি করেছি। লাশ ফেরত দিতো। এখন আর তাও বলেনা। গুলি করে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেয়। ফেরতও দেয় না। তিনি বলেন, ভারত তো একটা হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তারা তো সীমান্ত হত্যা বন্ধ করবেনা। সীমান্তে মুসলমানদের মারছে। আর ঠেলে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। আমরা প্রতিটি ঘটনার প্রতিবাদ করছি। কিন্তু ভারত হত্যা করবেই সে থামবে না। তারা মারছে তো মারছেই। কিন্তু বাংলাদেশের দিক দিয়ে শক্ত কোনো প্রতিবাদ দেখতে পাচ্ছিনা। মেরে দিচ্ছে কোনো বিচার নাই।

সর্বশেষ গত বুধবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ওয়াহেদপুর সীমান্তে বিএসএফ-এর গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হন। আহত হয়েছেন দুই জন। স্থানীয় সূত্র জানায়, তারা গরু ব্যবসায়ী। তারা ভোর রাতে ওয়াহেদপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে গরু আনতে যায়। তখন ভারতীয় চাঁদনী চক ক্যাম্পের টিকলীরচর এলাকায় বিএসএফ সদস্যরা গুলি করলে সেলিম ও সুমন নামে দুই বাংলাদেশি নিহত হন। এসময় সাকির ও লালবর নামে আরও দু‘জন আহত হন। সহযোগীরা নিহতদের লাশ ও আহতদের বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তারা ১১ জন ভারতে গরু আনতে গিয়েছিলেন। আহত দুইজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিহত দু‘জনের মধ্যে সেলিমের বাবা বুদ্ধুকে ১১ বছর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করে।

https://www.dailysangram.com/post/403052