৮ জানুয়ারি ২০২০, বুধবার, ৩:৩০

ইভিএম নিয়ে তালগোল

ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক্স ভোটিং মেশিন (ইভিএম)’এ ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে তালগোল অবস্থায় রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইভিএমে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র আপত্তি থাকলেও কমিশনের সিদ্ধান্তে আস্থা রাখছে আওয়ামী লীগ। যদিও এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন সবাই চাইলে ইভিএমে ভোট নেয়া হবে না। তফসিল অনুযায়ি আগামী ৩০শে জানুয়ারি ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গত ২রা জানুয়ারী প্রার্থীতা যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে। দুই সিটিতে এবার ১৩ জন মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে সহস্রাধিক কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। আগামীকাল (বুধবার) প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন এবং বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে।

এরপর শুরু হবে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা।

সিটি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ ইভিএমেই হবে বলে নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত অনড় অবস্থানে আছে। যদিও শুরু থেকে বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করে আসছে। তবে আওয়ামী লীগসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল ইভিএমে ভোটের পক্ষে রয়েছে। এই পক্ষ-বিপক্ষ অবস্থানের মাঝে গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে আসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সোমবার বিকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, স্বংয়ক্রিয়ভাবে নিঃশব্দে নিরবে ভোচ চুরির প্রকল্প হলো ইভিএম। নির্বাচনের ফলাফল কি হবে সেটা নির্ভর করবে ইভিএম এর প্রোগ্রামের উপর। জনগণ সারা দিন ভোট দেবে তাতে কোন লাভ হবে না। কারণ ইভিএম এর প্রোগ্রামে যেভাবে সেট করা আছে সেভাবেই ফলাফল আসবে। এদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ইভিএম নিয়ে আজকে যে বিতর্ক, আমরা অহেতুক সে বিতর্কে জড়াতে চাই না। নির্বাচন কমিশন ইভিএম নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিবে আমরা সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত। ইভিএম থাকলেও আমরা নির্বাচনে থাকবো, না থাকলেও আমরা নির্বাচনে অংশ নেব। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ইভিএমের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন সুতরাং ইভিএম থেকে সরে আসার কোন সুযোগ নেই এবং ইভিএমে ভোট কারচুপিরও কোন সুযোগ নেই। এর আগে ২৫শে ডিসেম্বর আগারগাঁওয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, যদি সবাই বলেন, ইভিএম দিয়ে ভালোভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা যায় না, তাহলে করবে না। জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে আমরা সুফল পেয়েছি, তাই ধরে রেখেছি।

ত্রুটিপূর্ণ ইভিএম, এক জনের ভোট অন্যজনে দেয়া যায়: সোমবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচন উপলক্ষ্যে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য ইভিএমে ডেমো ভোটের আয়োজন করেন। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার কর্মীরা ইভিএম যন্ত্রে ডেমো ভোটে অংশ নেন। এত দেখা যায়, ইভিএমে ফিঙ্গার প্রিন্টের পর একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারেন। ইভিএমের দুটি ইউনিটি। একটি কন্ট্রোল ইউনিট, অন্যটি ব্যালট ইউনিট। কন্ট্রোল ইউনিটের ভিতরে ভোটারদের তথ্য সম্বলিত একটি মেমোরি কার্ড থাকবে। কিন্তু কন্ট্রোল ইউনিটে একজন ভোটারের ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচিংয়ের পর ব্যালট ইউনিটে গিয়ে একজনের ভোট অন্যজনে দিতে পারেন। কেননা, কন্ট্রোল ইউনিটে ফিঙ্গারের ব্যবস্থা থাকলেও ব্যালট ইউনিটে তা নেই। তাই ইভিএমেও জাল ভোট দেয়ার সুযোগ আছে। দেখা গেছে, একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ইভিএম মেশিন পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন। আর ব্যালটের মতো ভোটকক্ষে উপস্থিত থাকেন বিভিন্ন প্রার্থীর এজেন্টরা। একজন ভোটার ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, স্মার্টকার্ড বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিলে তার নামসহ ছবি মনিটরে দেখা যায়।

কন্ট্রোল ইউনিটে ভোটার শনাক্তের পর তাকে ভোটদানের জন্য বিবেচনা করা হয়। এরপর তাকে ভোট দেয়ার জন্য ব্যালট ইউনিটে গিয়ে পছন্দের প্রার্থী বাছাই করে নিচের সবুজ কনফার্ম বাটন চেপে ভোট দিতে হবে। কিন্তু এই সময়ে ভোটকেন্দ্র প্রিজাইডিং অফিসার বা প্রভাবশালী প্রার্থীর এজেন্ট অনেক ক্ষেত্রে ভোটারকে সরিয়ে ব্যালট ইউনিটে নিজের পছন্দের প্রতীকে কনফার্ম বাটন চাপার সুযোগ পান। এভাবে সাংবাদিকেরা ইসির প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের দেখিয়ে দেন ইভিএমে কীভাবে একজনের ভোট অন্যজন দিতে পারেন। প্রদর্শনীতে কর্মকর্তারা দাবি করেন, ইভিএম মেশিনে জাল ভোট দেওয়া যায় না। ভোটারদের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে ব্যালট ইউনিট সচল করার পর তাকে ভোট দিতে না দিয়ে অন্য কেউ ঐ ভোট দিয়ে দিলে তা ঠেকানোর কোনো উপায় আছে কি না জানতে চাইলে, ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল মো. কামাল উদ্দিন বলেন, এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিষয়। তবে ব্যালট ইউনিটে আঙ্গুলের ছাপ নেয়ার পদ্ধতি নেই। ভোট রিভিউ করা যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ি কেউ দেখতে চাইলে অমরা এটি দেখাতে পারবো। এরকম অনেক প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি এই প্রকল্প পরিচালক। ব্যালট ইউনিটে ফিঙ্গার প্রিন্ট না থাকায়

ইভিএমে ভোট অরক্ষিত কিনা জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, কন্ট্রোল ইউনিটে ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়ার পর ব্যালট ইউনিট ওপেন হওয়ার পর গোপন কক্ষে ভোটার নিজেই উপস্থিত থাকবেন। সেখানে তার সামনে অন্য কারো ভোট দেয়ার সুযোগ নেই। ব্যালটের চেয়ে ইভিএম প্রটেক্টেড, ব্যালটে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটার কেউ গেলো না, ব্যালট নিয়ে একাই জমা দিয়ে আসল। ইভিএমে সে সুযোগ নেই।

https://www.mzamin.com/article.php?mzamin=207394