২ জানুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১২:১২

উল্টো পথে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি

একদিকে হু হু করে বাড়ছে সরকারি খাতে ঋণ। অন্যদিকে সমানতালে নিচের দিকে নামছে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি। গত ৬ মাস ধরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ধারাবাহিকভাবে কমেছে। সর্বশেষ নভেম্বরে তা এক অঙ্কে নেমে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খেলাপি ঋণ লাগামহীনভাবে বাড়ার কারণে বাড়তি নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। আবার আশানুরূপ আমানত পাচ্ছে না অনেক ব্যাংক। ফলে ব্যাংকে পর্যাপ্ত নগদ অর্থ নেই। এসব কারণেই কমে যাচ্ছে বেসরকারি বিনিয়োগ। এছাড়া আর্থিক খাতের নানা কেলেঙ্কারি ও সঞ্চয়পত্রে সুদ বেশি হওয়ায় ব্যাংকে আমানত প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। ফলে একদিকে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ঋণ দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে উচ্চ সুদহারের কারণে ঋণ নিতেও আগ্রহী নন ব্যবসায়ী ও নতুন উদ্যোক্তারা। সব মিলিয়ে বেসরকারি ঋণ কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়ছে না।

চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মুদ্রানীতিতে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত লক্ষ্য ঠিক করেছে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ; যা গেল অর্থবছরের জুন পর্যন্ত লক্ষ্য ছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমতে কমতে নভেম্বরে ৯ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে।

অন্যদিকে চলতি অর্থবছর (জুলাই-জুন) পর্যন্ত সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। আর অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। অথচ সরকারি খাতে ঋণ বাড়তে বাড়তে নভেম্বরে তা ৫১ শতাংশ ছাড়িয়েছে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধির জন্য বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। এজন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের পাশাপাশি ঋণের চাহিদাও বাড়বে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের লক্ষ্য ছিল সাড়ে ১৬ শতাংশ। কিন্তু গত জুন শেষে এ খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল মাত্র ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ। এটি গত অর্থবছরের ঘোষিত মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ কম। এখন বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি আরও কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালের নভেম্বরের তুলনায় সদ্যবিদায়ী বছরের একই মাসে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আগের মাস অক্টোবরে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ০৪ শতাংশ। এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগস্টে ছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এর আগের মাস জুলাই শেষে ছিল ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ। জুনে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ, মে মাসে যা ছিল ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ। এর আগের মাস এপ্রিলে ছিল ১২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, মার্চে প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ মাস নয় দিনেই (১ জুলাই থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত) ৪৭ হাজার ১৩৯ কোটি টাকার ঋণ নিয়ে ফেলেছে সরকার। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়েছে ৯ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নিয়েছে ৩৭ হাজার ২৬১ কোটি টাকার ঋণ।

অর্থাৎ পুরো অর্থবছরে (১ জুলাই থেকে ৩০ জুন) ব্যাংক থেকে সরকারের যে টাকা ধার করার কথা ছিল তার প্রায় পুরোটাই পাঁচ মাসে নিয়ে ফেলেছে।

সবমিলিয়ে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাত থেকে নেয়া সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ১ লাখ ১১ হাজার ৪১২ কোটি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৪৩ হাজার ৮২২ কোটি টাকা নেয়া হয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/news/262337/