২ জানুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১২:১০

এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় সাড়ে চার সহস্রাধিক প্রাণহানি

সোয়া চার হাজার সড়ক দুর্ঘটনায় ২০১৯ সালে প্রাণ গেছে সাড়ে চার হাজারের বেশি মানুষের। আহত হয়েছেন সাড়ে আট হাজারের বেশি মানুষ। আহতদের মধ্যে অনেকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন। অনেকে কর্মক্ষমতা হারিয়ে পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে উঠেছেন।

শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) ‘সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৯’-এ এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সংগঠনটি গতকাল বুধবার এ তথ্য প্রকাশ করেছে। সংগঠনটির (অনুসন্ধান) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে চার হাজার ২১৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৮৫ নারী ও ৭৫৪ শিশুসহ অন্তত চার হাজার ৬২৮ জন নিহত এবং অন্তত ৮৬১২ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা যথাক্রমে ৬১৩ ও ৩৯৯।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ও আহতের সংখ্যা পূর্ববর্তী বছরের (২০১৮ সাল) তুলনায় কম হলেও প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৮ সালে চার হাজার ৩১৭টি দুর্ঘটনায় চার হাজার ৫৮০ জন নিহত ও ১০ হাজার ৮২৮ জন আহত হয়েছিল। আর গত বছর দুর্ঘটনা ঘটেছে চার হাজার ২১৯টি। এতে নিহত হয়েছেন চার হাজার ৬২৮ জন। আহত হয়েছেন আট হাজার ৬১২ জন। প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারিতে ৩৮৩টি দুর্ঘটনায় ৫৩ নারী ও ৭১ শিশুসহ ৪১১ জন নিহত এবং ৫৮ নারী ও ৪০ শিশুসহ ৭২৫ জন আহত হয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে ৪০১টি দুর্ঘটনায় ৪১৫ জন নিহত হয়েছেন; যার মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা যথাক্রমে ৫৮ ও ৬২। এ ছাড়া ওই মাসে ৮৮ নারী ও ৮৬ শিশুসহ ৮৮৪ জন আহত হয়েছেন। মার্চে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৮৪টি। এতে ৪৬ নারী ও ৮২ শিশুসহ ৩৮৬ জন নিহত এবং ৬৭ নারী ও ৭৬ শিশুসহ ৮২০ জন আহত হয়েছেন। এপ্রিলে ৩২৭টি দুর্ঘটনায় ৩৪০ জন নিহত ও ৬১০ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩৮ ও ৫৩ শিশু রয়েছে। আহতের তালিকায় নারী ও শিশুর সংখ্যা যথাক্রমে ৪৬ ও ২৮। মে মাসে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৯৭টি; যাতে ৪৭ নারী ও ৪৪ শিশুসহ ৩৩৮ জনের প্রাণহানি এবং ২৭ নারী ও ১২ শিশুসহ ৫০৪ জন আহত হয়েছেন। জুনে দুর্ঘটনা, প্রাণহানি ও আহতের সংখ্যা যথাক্রমে ৩৬৭, ৪৩৯ ও ৮১৮। নিহতদের মধ্যে ৪৯ নারী ও ৬৯ শিশু এবং আহতদের মধ্যে ৫৪ নারী ও ২৫ শিশু রয়েছেন। জুলাইয়ে ৩১১টি দুর্ঘটনায় ৪৬ নারী ও ৪০ শিশুসহ ৩৪৮ জন নিহত এবং ২১ নারী ও ২২ শিশুসহ ৫১৩ জন আহত হয়েছেন। আগস্টে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা যথাক্রমে ৩৩৭ ও ৩৯৮। এতে ৪৭ নারী ও ৫৭ শিশুর প্রাণহানি ঘটেছে, আহত হয়েছে ৫৮ নারী ও ৩৮ শিশুসহ আরো ৮২৩ জন। সেপ্টেম্বরে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৫৩টি; এতে ৩৮ নারী ও ৬৪ শিশুসহ ৩৬৭ জন নিহত এবং ৫৭ নারী ও ১২ শিশুসহ ৮৪২ জন আহত হয়েছেন। অক্টোবরে ৩৫৬টি দুর্ঘটনায় ৩৯৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা যথাক্রমে ৫৫ ও ৭৮। এ ছাড়া এ মাসে ৩৯ নারী ও চার শিশুসহ আহত হয়েছেন। অন্তত ৬৬৭ জন। নভেম্বরে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩১৪টি; এতে ৫৩ নারী ও ৬২ শিশুসহ ৩৪২ জন নিহত এবং ৬১ নারী ও ২৭ শিশুসহ ৬৮১ জন আহত হয়েছেন। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে দুর্ঘটনা, প্রাণহানি ও আহতের সংখ্যা যথাক্রমে ৩৮৯, ৪৪৬ ও ৬৮১। নিহতদের মধ্যে ৫৫ নারী ও ৭২ শিশু রয়েছেন। আর আহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা ৩৭ ও ২৯।

শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) সভাপতি আশীষ কুমার দে বলেন, তাদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ১২টি প্রধান কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো হলো : গাড়ি চালানোর সময় চালকদের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় চালকের মোবাইল ফোনালাপ, ট্রাফিক আইন অমান্য করে ওভারটেকিং ও ওভারলোডিং, বিরতি ছাড়াই দূরপাল্লার সড়কে দীর্ঘক্ষণ গাড়ি চালানো, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ, মহাসড়কে মোটরবাইকসহ ক্ষুদ্র যানবাহনের অবাধ চলাচল, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চলাচল বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব, দূরপাল্লার সড়কের বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও বেহাল দশা, নিয়োগপত্র না পাওয়ায় পরিবহনকর্মীদের মাঝে হতাশা, চালক ও সহকারীর কাছে দিনচুক্তিতে গাড়ি ভাড়া দেয়া, বিভিন্ন স্তরে চাঁদাবাজির কারণে শ্রমিক অসন্তোষ এবং পথচারীদের অসতর্কতা ও ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করা।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/468937/