২ জানুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১২:০৬

বাজারভেদে সবজির দামে বিস্তর ফারাক

ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত কৃষক : বাড়তি দিচ্ছেন ভোক্তা

বগুড়ার সারিয়াকান্দি। প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি করে কৃষক পাচ্ছেন ১০ থেকে ১৫ টাকা। এ টমেটোই রাজধানীর গুলশান-বনানীর নামী-দামি মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজিদরে। গ্রাম ও শহরে এমন অস্বাভাবিক মূল্য ব্যবধান লক্ষ করা যায় মুলা, বেগুন, কাঁচামরিচ, ফুলকপি, পাতাকপি, শিম, গাজর, শালগম প্রভৃতি সবজির ক্ষেত্রেও। গ্রাম থেকে শহরে পৌঁছতে তিন থেকে সাতবার হাতবদল হচ্ছে এসব সবজি। প্রতিবার হাত বদলের সাথে সাথে দাম বদলাতে গিয়ে তিন থেকে পাঁচ গুণ বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে ভোক্তাকে। আবার একই পণ্য সামান্য দূরত্বে বিক্রি হচ্ছে অস্বাভাবিক মূল্য ব্যবধানে। বাজারব্যবস্থার ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণহীনতার সুযোগে মধ্যস্বত্বভোগীরা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর কাওরান বাজার থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে প্রতি আঁটি লালশাক বিক্রি হচ্ছে এক থেকে দুই টাকা দামে। কাওরান বাজারের পাইকারি মার্কেটে একই শাক বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিন টাকায়, অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ দরে। আর সেখান থেকে মাত্র ৩০ গজ দূরে সিটি করপোরেশনের কাঁচাবাজারে একই শাক বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা আঁটিদরে। উল্লেখ করার মতো বিষয়, কাওরান বাজার থেকে আরো প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরত্বে মুগদা হাসপাতালের সামনে ভ্যান গাড়িতে করে এ শাক ৫ থেকে ৬ টাকা আঁটিদরে বিক্রি করতে দেখা যায়। স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে, এক আঁটি শাকের প্রকৃত দর কত? কৃষক পাচ্ছেন কত টাকা? ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে কত টাকা? আর মধ্যস্বত্বভোগীরা হাতিয়ে নিচ্ছে কত টাকা?

সার, বীজ, কীটনাশক, হাল, শ্রম দিয়ে টাঙ্গাইলের কৃষক যে মুলা উৎপাদন করেছেন, তা থেকে তিনি পাচ্ছেন কেজিপ্রতি দুই থেকে চার টাকা। আর কাওরান বাজারের পাইকারি মার্কেট থেকে ১০ থেকে ১২ টাকা কেজিদরে কিনে পাশের মার্কেটে নিয়ে একই মুলা ৪০ টাকায় বিক্রি করছেন। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এ বাজারের সবজি বিক্রেতা সোবহান বলেন, কৃষক তো জমির ভাড়া দেন না! আমাদেরকে ডালা গুণে দৈনিক ভাড়া দিতে হয়। পানি-বিদ্যুৎ কিনতে হয় অস্বাভাবিক বাড়তি দামে। কর্মচারী খাটাতে হয়। দিতে হয় নানান রঙের চাঁদা। বাড়তি দামে বিক্রি না করলে এত খরচ আসবে কোত্থেকে?

তবে কাওরান বাজার থেকে একই সবজি কিনে দূর-দূরান্তে নিয়ে যারা কম দামে বিক্রি করছেন, তারা কিভাবে পারছেন জানতে চাইলে সোবহান বলেন, তারা মাল কিনে দুর্বলটা। পাইকারি বাজার থেকে আমরা ঢেঁড়শ কিনি ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিদরে। আর তারা কিনে ২০ টাকায়। আমরা ৪০ টাকায় কিনে ৬০ টাকা বিক্রি করি আর তারা ২০ টাকায় কিনে বিক্রি করে ৪০ টাকা। এবার বলেন, কারা বেশি লাভ করে? আমরা নাকি ভ্যানওয়ালারা। তা ছাড়া ওদের তো দোকান ভাড়া লাগে না, কর্মচারীর বেতন লাগে না। তাদের পুঁজিই-বা কয় টাকা?

পাইকারি ও খুচরা বাজার, উৎপাদক এবং ভোক্তা, ধনীর বাজার আর দরিদ্রের বাজারে পণ্যের এমন বিস্তর ব্যবধান প্রসঙ্গে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, সরকারের তদারকির অভাবে এমনটি হচ্ছে। কৃষক পণ্যের উপযুক্ত মূল্য না পেয়ে হতাশ হয়ে উৎপাদনবিমুখ হচ্ছে। কিন্তু ভোক্তাকে ঠিকই বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। মধ্যস্বত্বভোগীদের সংখ্যা এবং দৌরাত্ম্য কমানো না গেলে গ্রাম-শহরের এমন ব্যবধান থেকেই যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/468944/