ফাইল ছবি
৩০ ডিসেম্বর ২০১৯, সোমবার, ১১:০৮

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

১০ স্কুল নির্মাণ প্রকল্প: জমি অধিগ্রহণে ৩০০ কোটি টাকা লোপাটের আয়োজন

প্রকল্পের জমিতে কোনো স্থাপনা বা গাছপালাও নেই, অথচ দাম পরিশোধ করতে ১২৮ কোটি টাকার প্রস্তাব করে একনেকে পাঠান পিডি * আলমিরার চাবি মেরামতে ৬ হাজার ২শ’ ও টেবিলের চাবি মেরামতে ব্যয় ১২শ’ টাকা

রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পে পুকুর চুরি নয়, রীতিমতো সাগর চুরির ঘটনা ঘটেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে যে ১০টি জমি চিহ্নিত করা হয়েছে সেখানে স্থাপনা ও গাছপালার মূল্য দেখিয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে অন্তত শত কোটি টাকা, যা একেবারে অবিশ্বাস্য।

শুধু তাই নয়, জমির মালিকদের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে প্রকৃত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে জমি কিনে কমিশন ভাগাভাগির গোপন আয়োজনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জমির বিদ্যমান শ্রেণি গোপন রেখে প্রকৃত দাম আড়াল করা হয়েছে। এভাবে ৬৭৩ কোটি টাকার এই প্রকল্পের ব্যয় ১১২৪ কোটি টাকা আরডিপিতে নির্ধারণ করে অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা পড়েছে।

যুগান্তরের এক মাসের অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর ঘটনার আদ্যপ্রান্ত উঠে এসেছে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রস্তাবিত ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো স্থপিত হবে- খিলক্ষেতের জোয়ার সাহারা, সাভারের নবীনগর, হেমায়েতপুর ও আশুলিয়া বাইপাইল, সাঁতারকুল, ধামরাই, পূর্বাচল, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড ও চিটাগাং রোড এলাকায়।

একটি কমন ডিজাইনে দুই একর পরিমাণ জমির ওপর এসব বিদ্যালয় নির্মিত হবে।

প্রসঙ্গত, তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটি পাস হয় ২০১৭ সালের নভেম্বরে। ওই সময় মোট প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৬৭৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের পুরো টাকা জোগান দেবে সরকার। সে সময় প্রকল্পের জমি কেনা বাবদ ছিল ৪শ’ কোটি টাকা।

গাড়ি কেনা বাবদ ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, অবকাঠামো ব্যয় ২শ’ কোটি টাকা, বেতন-ভাতা খাতে বরাদ্দ ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। প্রশাসনিক ব্যয়, ভ্রমণ, জ্বালানি, মনিহারি, কাঁচামাল, সম্মানী, উৎসব ও অনুষ্ঠান, মেরামত ও সংরক্ষণসহ বিবিধ নামে রাখা হয় আরও ৪০ কোটি ৪ লাখ।

আরডিপিপিতে (সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রফর্মা) এই প্রকল্পের ব্যয় যেমন বাড়ানো হয়েছে, তেমনি মেয়াদ তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১২৪ কোটি ৭৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এর ফলে অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে চারশ’ কোটি টাকা।

গত ৩ বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি ০.০৭ ভাগ। ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৭.০১ ভাগ। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ৩০ জুন।

২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর প্রকল্প পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আমিরুল ইসলাম। এর মধ্যে তিনি প্রায় ১৭ কোটি টাকা খরচও করে ফেলেছেন, যা নিয়ে প্রকল্পের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে আরও ৩২০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। এখন এই টাকা খরচের তোড়জোড় চলছে।

মাউশি অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার শুরুতেই প্রকল্প পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আমিরুল ইসলাম মালিকদের সঙ্গে গোপন ভাগাভাগির ফাঁদ পাতেন।

যারা তাকে মোটা অঙ্কের কমিশন দিতে রাজি হন তাদের জমি অধিগ্রহণের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়। বিপরীতে তুলনামূলক কম দাম হলেও যারা গোপন কমিশন প্রস্তাবে রাজি হননি তাদের জমি নিতে অস্বীকার করেন।

এমনকি স্কুল স্থাপনের জন্য নির্দিষ্ট হওয়া ৬টি জমি অধিগ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক অনুমোদনও আনা হয়। কিন্তু পিডি আমিরুল ইসলামসহ একটি সিন্ডিকেট বিপুল অঙ্কের টাকা লোপাট করার আয়োজনের অংশ হিসেবে জমি পরিবর্তনের কৌশল নেন। বারবার জমি পরিবর্তনের কারণে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রায় দুই বছর সময়ক্ষেপণ হয়।

তিনি বলেন, অন্তত ৭টি জমি নাল শ্রেণির হলেও প্রশাসনিক আদেশে তফসিল থেকে রেকর্ডীয় শ্রেণি মুছে আদেশ করানো হয়। এভাবে জমির শ্রেণি গোপন রাখার আড়ালে মূল্য নির্ধারণের সময় নাল এবং ডোবা ও পুকুর শ্রেণির জমিকে ভিটিমাটি দেখিয়ে কমপক্ষে প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে। এই টাকা জমির মালিকের ব্যাংক হিসাবে জমা করে লুটপাটের ছক আঁকা হয়েছে। জমির জন্য বরাদ্দ ৪শ’ কোটি টাকার স্থলে ৭৫০ কোটি ৪৪ লাখ টাকার প্রস্তাব তৈরি করা হয়। এছাড়া ৬৭৩ কোটি টাকার প্রকল্প থেকে ১১২৪ কোটি টাকায় বৃদ্ধি করে আরডিপিপি করা হয়েছে।

ধামরাই এলাকায় লাকুরিয়াপাড়া মৌজায় একটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। এই বিদ্যালয় থেকে মাত্র ৪শ’ মিটার দূরেই আরও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য পিডি জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া করেন।

অথচ ধামরাই এলাকার জন্য নির্ধারিত এই বিদ্যালয়টির জন্য প্রথম যে জমিটি চিহ্নিত করা হয় সেটি ৫/৬ কি.মি. দূরে গাওয়াইল মৌজায় ছিল। যার প্রশাসনিক আদেশও রয়েছে। রহস্যজনক কারণে জমিটি বাতিল করা হয়।

লাকুড়িয়াপাড়া মৌজার জমিটি ছিল পুকুর। দাম বাড়ানোর জন্য পুকুর বালু দিয়ে ভরাট করে ভিটি শ্রেণি দেখানো হয়। এভাবে জমির জন্য ২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। সরেজমিন সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি টিনের চালা ঘর। প্রতি সপ্তায় একদিন হাট বসে। এই ঘরগুলোকে অবকাঠামো ধরে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৪ কোটি টাকা রাখা হয়েছে।

নবীনগর এলাকায় পাথালিয়া মৌজায় ১টি স্কুলের জন্য ৩টি জমি পরিবর্তন করা হয়। এর মধ্য থেকে এই মৌজায় ১টি জমি চূড়ান্ত করে প্রশাসনিক আদেশও জারি হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব মহিউদ্দিন খান বদলি হয়ে গেলে ওই জমিটিও বাদ দেয়া হয়।

পরবর্তী সময়ে নবীনগর এলাকায় পাথালিয়া বাঁশবাড়িয়া মৌজায় খালসহ একটি জমি চূড়ান্ত করা হয়। এই জমি খুব নিচু। ব্যয় বাড়াতে বালি ফেলে ভরাট করে ভিটি শ্রেণির বিল করা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, জমিটিতে কোনো গাছপালা নেই। অথচ ৬ কোটি টাকা গাছপালা বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে। আর জমির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এই জমির আকার দেখা গেছে এল আকৃতির। কিন্তু স্কেচম্যাপে চতুর্দিক সমান আকৃতির দেখানো হয়।

শাহজাদপুর নূরেরচালা এলাকায় ১টি স্কুলের জন্য ডিপিপিতে বলা হয়। পিডি আমিরুল ইসলাম শাহজাদপুর এলাকা থেকে স্কুলটি সরিয়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ডিপিপিবহির্ভূত বাড্ডার সাঁতারকুল এলাকায় নাল শ্রেণির জমি চিহ্নিত করেন। এই স্কুলটির জন্য অতিরিক্ত সচিব মহিউদ্দিন খান অন্য ২টি জমি পছন্দও করেন।

তিনি অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলির সঙ্গে সঙ্গে পিডি জমিও বদলে ফেলেন। এই জমির কাছেই একটি হাইস্কুল রয়েছে। এই জমিটিও নাল শ্রেণির। কিন্তু অধিগ্রহণ প্রস্তাবে এই জমিকে ভিটি হিসেবে দেখানো হয়েছে। এই জমির জন্য ৩৬ কোটিরও বেশি বিল ধরা হয়েছে। জমিতে কোনো গাছপালা নেই। অথচ গাছপালা বাবদ ৬ কোটি টাকার বিল সংস্থান রাখা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার জমিটিও সংশ্লিষ্ট এলাকায় চিহ্নিত করা হয়নি। সাইনবোর্ড থেকে ৫ কিমি. দূরে জালকুড়ি মৌজায় দুই একর জমি চিহ্নিত করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, এই জমিটি ৩ বার পরিবর্তন করার কারণে ২ বছর প্রকল্পটি পিছিয়ে গেছে।

চিটাগাং রোড এলাকায় ১টি স্কুলের জন্য খোদ্দঘোষপাড়া মৌজায় একজন ব্যবসায়ীর জমি চিহ্নিত করা হয়। অদৃশ্য কারণে জমিটি ৩ বার পরিবর্তন হয়। এই জমিটি সাইনবোর্ড থেকে মাত্র ১ কিমি. দূরে। জমিটি নাল শ্রেণির হলেও বাণিজ্যিক ও ভিটি শ্রেণি দেখিয়ে ১২৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা বিল করা হয়।

আশুলিয়া এলাকায় বাইপাইল মৌজার জমিটির ওপর ভবিষ্যতে ফ্লাইওভার হওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা। তা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত স্বার্থে ওই জমিতেই স্কুল স্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এখানে গাছপালা বাবদ ১০ কোটি টাকা এবং জমি বাবদ ৬০ কোটি ৩৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা বিল ধরা হয়েছে।

হেমায়েতপুর বিলামালিয়া মৌজার জমির অর্ধেক কৃষিজমি ও অর্ধেক পুকুর। প্রকল্প পরিচালক সম্পূর্ণ জমিকে ভিটি শ্রেণি দেখিয়ে তিনগুণ মূল্য ধরা হয়েছে। এই জমির জন্য ৮১ কোটি ৮২ লাখ ৭৮ টাকা এবং ২১টি নারিকেল গাছ অবকাঠামোর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৩ কোটি টাকা বিল করা হয়েছে। অথচ সরেজমিন গিয়ে সেখানে কোনো অবকাঠামোই দেখা যায়নি।

এছাড়া আরও একটি এলাকায় স্কুলের জমি অধিগ্রহণে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির ছক আঁকা হয়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ১০ মাধ্যমিক স্কুল স্থাপনে চূড়ান্তকৃত ৮টি জমি বাস্তবে নাল শ্রেণির। কোনো জমিতেই স্থাপনা নেই। অথচ প্রতিটি জমিতে অবকাঠামো ও গাছপালার ক্ষতিপূরণ ধরে অন্তত ৩শ’ কোটি লোপাটের আয়োজন করেছেন প্রকল্প পরিচালকসহ এই সিন্ডিকেটের কর্মকর্তারা।

এ কারণে প্রকল্পের ২ ভাগ কাজ না হলেও আরডিপিপিতে ৬৭.৬৯ ভাগ ব্যয় বৃদ্ধি দেখানো হয়েছে। কেরানীগঞ্জ ও পূর্বাচলে ২টি স্কুলের জন্য ৪ একর বন্দোবস্ত নেয়া হয়েছে ১০ কোটি ১২ লাখ ৯০ হাজার টাকায়। বাকি আটটি জমির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ৭৪০ কোটি টাকা।

পিডির গাড়ি বিলাস : প্রকল্প পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আমিরুল ইসলাম জিপ গাড়ি কেনার জন্য ৫৫ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছিলেন। অথচ ডিপিপির নির্দেশনা উপেক্ষা করে ৯১ লাখ ২৬ হাজার টাকা দামের পাজেরো কিউএক্স মডেলের গাড়ি কিনেছেন। প্রকল্পের অন্য কর্মকর্তাদের ব্যবহারের জন্য গাড়ি কেনায় ৪০ লাখ টকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু হায়েস মডেলের গাড়ি কিনেছেন ৪৩ লাখ ৩১ হাজার টাকায়। এতে করে ২টি গাড়ি কেনায় ৩৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছেন। এ কারণে অডিট আপত্তি জানানো হয়েছে। দুটি গাড়িই তিনি পারিবারিক কাজে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। জিপ গাড়িতে ১৩ হাজার টাকার জ্বালানি ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা বিল তুলে নিচ্ছেন। এছাড়া ২৫ হাজার টাকা গ্যাস ব্যবহার করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্প পরিচালক ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই থেকে ১২ আগস্ট এবং গত ২৪ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত মোট ২০ দিন দেশের বাইরে ছিলেন। কিন্তু এই সময়ে প্রকল্পের কাজে ব্যবহার করার কথা বলে কত টাকার জ্বালানি ব্যবহার করা হয়েছে তা তদন্ত করা হলেই গাড়ি অপব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যাবে। শুধু সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর ২ মাসে জিপ গাড়িটি চলেছে ৩৬শ’ কিলোমিটার, যা অস্বাভাবিক।

কেনাকাটায় ১৩ লাখ : পিডি আমিরুল ইসলাম রিকোয়ার্ড ফর কোটেশন (আরএফকিউ) করে মালামাল কেনার নামে ১৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাস্তবে প্রকল্প পরিচালক কোনো মালামালই কেনেননি। বিবিধ ও স্টেশনারি খাতে ১২ লাখ টাকা ছিল। এ খাত থেকে তিনি ১৩ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন, যা ডিপিপির বাজেটবহির্ভূত। এছাড়া আরডিপিপিতে এই খাতে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রস্তাব করেছেন। যা ভাগবাটোয়ারার হিসেবে খরচ হওয়ার আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, নানান খাত থেকে ভুয়া বিল-ভাউচার করেও লাখ লাখ টাকা তুলে নিচ্ছেন প্রকল্প পরিচালক। যেমন- গাড়ি, আসবাবপত্র, কম্পিউটার মেরামত ইত্যাদি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বিল নং-৩১, বিল নং-৩২, বিল নং-৩৩, বিল নং-৪২, এবং বিল নং-৪৩ সম্পূর্ণ ভুয়া। পিডি ৬ হাজার ২শ’ টাকা আলমিরার চাবি মেরামত, ১ হাজার ২শ’ টাকা টেবিলের চাবি মেরামতসহ বিভিন্ন ভুয়া বিল করে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন। অথচ কোনো কিছু মেরামতের প্রয়োজন হয়নি, সব আসবাবপত্র নতুন।

একটি কলেজের প্রভাষক যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্প পরিচালকের টাকায় ছাত্রনেতা মশিউর রহমান সুমন প্রকল্পের হিসাবরক্ষক সরোয়ার হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে মাউশি অধিদফতরে আউটসোর্সিং এবং দরপত্রের ব্যবসা করেন। পিডি সব কটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং সব তথ্য সুমনকে দেন। সে অনুযায়ী সুমন দরপত্র দাখিল করে কাজ পেয়ে যান। অনিয়মের মাধ্যমে সুমন পরিচালিত মিশন এন্টারপ্রাইজকে আউটসোর্সিং কাজ দেয়া এবং ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়ে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করানোর চেষ্টা করেন বলেও গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্বজনপ্রীতি যেভাবে : প্রকল্প পরিচালক তার আপন ভাই শাহরুলকে কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি নিয়োগ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েও চাকরি পেয়ে যান। আপন ভাগিনা ক্যাশপিয়ন হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তবে তিনি ক্যাশপিয়নের কাজ না করেও প্রতি মাসে বেতন তুলে নেন। ব্যক্তিগত গাড়িচালককে দিয়ে পুরো প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ করেন। কম্পিউটার অপারেটর শাহরুলের বিবাহের দিন যোগদান দেখানো হয়। অথচ সেদিন তিনি যশোরে বিবাহের আসরে ছিলেন এবং ৯ দিন পর অফিসে আসেন।

ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিষয়ের একজন প্রভাষক বলেন, তিনি একবার প্রকল্প পরিচালক আমিরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে যান। এ সময় তাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমি (পিডি) যদি জমির মালিকের হিসাবে ২শ’ কোটি টাকা বেশি ঢুকিয়ে নিতে পারি তাহলে রাজ্জাকের (গবেষণা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক) সমস্যা কি? আমি কি একা? ও এমন করে কেন? বেশি সৎগিরি দেখায়! আমি ওকে নিয়ে আসছি, আমি না চাইলে ও থাকতে পারবে না। ওকে বোঝাও। ও এসব সৎগিরি দেখা বন্ধ করুক।’

তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, পিডির অধীনস্থ কর্মকর্তাদের এসিআরে বিরূপ মন্তব্য জুড়ে দেয়ার হুমকি দেন। নিয়মিত দুর্ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি একা নই, আমি কি একা? আমার সঙ্গে যারা আছে তাদের সামনে কেউ দাঁড়াতে পারবে না।’

পিডির বক্তব্য : অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ড. আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘জমির মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে আমার কোনো ভূমিকা নেই। এটা করেছে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। জমি মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি চূড়ান্ত নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই পর্যায়ে আছে।’ কেনাকাটায় ১৩ লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয়ে পিডি বলেন, ‘আমি কোনো টাকা আত্মসাৎ করিনি।’ গাড়ি কেনায় বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেনাকাটা নিয়মমাফিক হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়নি। আমি কোনো স্বজনপ্রীতিও করিনি।’

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/261126/