২৬ ডিসেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৩:৪১

তাপমাত্রা নেমেছে ৬.২ ডিগ্রিতে, আরো কমার পূর্বাভাস

তাপমাত্রা নেমেছে ৬.২ ডিগ্রিতে। আজ বৃহস্পতিবারও দেশের কয়েকটি অঞ্চলের তাপমাত্রা বেশ হ্রাস পেতে পারে। শুক্রবারের দিকে বৃষ্টি শুরু হলে শীতের তীব্রতা আরো বেড়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান। ইতোমধ্যে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সব জেলাসহ টাঙ্গাইল ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। বৃষ্টির কারণে শৈত্যপ্রবাহের আওতা আরো বেড়ে যেতে পারে সামনের কয়েক দিনে। আজ অবশ্য দিনের তাপমাত্রাও কিছুটা কমে যেতে পারে।

গত কয়েক দিন ধরে অব্যাহত ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হয় গত সোম ও মঙ্গলবার। গতকাল বুধবার দুপুরের দিকে সূর্য কিছুটা দেখা গেলে উষ্ণতা বাড়ে। কিন্তু বিকেলের পর থেকে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। রাজধানী ঢাকায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠে মাত্র ২১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনি¤œ ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চট্টগ্রামে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

অব্যাহত ঠাণ্ডায় দেশব্যাপী শীতজনিত রোগের মাত্রা বেড়েছে। শীতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ডায়রিয়া, কাশি, সর্দি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে অনেক রোগী আসছে। ১ নভেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ৪২ হাজার ৬১২ জন আক্রান্ত হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ওই সময়ের মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৬ হাজার ৮১৬ জন।

মেঘাচ্ছন্ন দক্ষিণাঞ্চলে গতকাল বুধবার রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ফরিদপুর, মাদারীপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী অঞ্চলসহ খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের দুই-এক জায়গায় হালকা অথবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টি হলে আজ রাতের তাপমাত্রা আরো নিচে নেমে যেতে পারে।

উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন বাংলাদেশের অঞ্চলে বিস্তৃত রয়েছে। এ প্রক্রিয়াটির সাথে ঠাণ্ডা বায়ু প্রবাহের একটি সম্পর্ক রয়েছে। এ প্রক্রিয়াটি এ অঞ্চলে যত বেশি দিন বিস্তৃত থাকবে ঠাণ্ডা আবহাওয়া তত বেশি সময় অব্যাহত থাকবে।

রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের একমাত্র বগুড়া ছাড়া সর্বত্র ভয়াবহ ঠাণ্ডা পড়েছে। আমাদের সংবাদদাতারা জানিয়েছেন দেশের এই দুই বিভাগে সকাল বেলা পানি ছোঁয়া যায় না। কুয়াশায় ১০ গজের বেশি দূরের বস্তু দেখা যায় না। সন্ধ্যার পর মানুষের চলাফেরা একেবারেই কমে গেছে। খুব প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে বেরোচ্ছে না।

রাজধানীতে বেশ শীত পড়লেও রাজশাহী, রংপুর অথবা খুলনা বিভাগের অঞ্চলগুলোর তুলনায় রাজধানীর শীত কিছুই না। রাজধানীতে এখন পর্যন্ত সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। সে তুলনায় উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের ওই দুই বিভাগের তাপমাত্রা প্রায়ই ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাচ্ছে। গতকাল রাজশাহী শহরে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ৮.৭, ঈশ্বরদীতে ৮.৮, বদলগাছিতে ৭.৪, তাড়াশে ৮, রংপুরে ৮.৩, দিনাজপুরে ৬.৮, সৈয়দপুরে ৮.৮, তেঁতুলিয়ায় ৬.২, ডিমলায় ৭.৫ এবং রাজারহাটে ছিল ৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উপরে উল্লিখিত এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গড়ে ২৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল না। বেশির ভাগ অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রির মধ্যে ছিল।

রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৮.৭ ডিগ্রি

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, গতকাল বুধবার সকাল ৭টায় রাজশাহীতে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি গত এক সপ্তাহের সর্বনি¤œ এবং চলতি মৌসুমেরও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা বলে জানিয়েছে রাজশাহী আবহাওয়া অফিস।

প্রায় এক সপ্তাহ থেকে শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ। তাপমাত্রা কেবল নামছেই। আর মাঝেমধ্যে সামান্য বাড়লেও শীতের কোনো হেরফের হচ্ছে না। হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এ অবস্থায় চরম বেকায়দায় পড়েছেন দিনমজুরসহ নি¤œ আয়ের মানুষ। শীত থেকে বাঁচতে এসব মানুষের একমাত্র ভরসা এখন রাস্তার পাশে ফুটপাতের দোকান। বুধবার সকালে নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে ফুটপাথে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের ভিড় লক্ষ করা গেছে।

রংপুর অঞ্চলে ঠাণ্ডায় ২৪ শিশুর মৃত্যু

রংপুর অফিস জানায়, রংপুর অঞ্চলে এক সপ্তাহ পর গতকাল বুধবার সূর্যের দেখা মিলেছে। তবে তাপমাত্রা বাড়েনি বরং কমেছে। গত এক সপ্তাহে ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২২ শিশু মারা গেছে। একই সাথে ভর্তি হয়েছে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ ২২ ব্যক্তি।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: শাহাদত হোসেন জানান, গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত শীতজনিত রাগে আক্রান্ত হয়ে ২৪ জন শিশু মারা গেছে। এর মধ্যে বুধবার মারা গেছে নিশান (দেড় বছর) আর বাবু (১২ দিন)। এ ছাড়া এই দশ দিনে আগুন পোহাতে গিয়ে ১৭ জন দগ্ধ ব্যক্তি হাসাপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গির ফাতেমা নামের এক বৃদ্ধা মারা গেছেন।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজার রহমান জানান, বুধবার রংপুরে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি। আর পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ছিল ৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আরো তাপমাত্রা কমতে পারে। সাথে থাকতে পারে শৈত্যপ্রবাহ।

রংপুরের ডিসি আসিব আহসান বলেন, শীত মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি। আমাদের শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যন্ত ৭৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। নগরীতে মেট্রো পুলিশের পক্ষ থেকে প্রায় ২ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ২০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।

তেঁতুলিয়ায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস

পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান, গতকাল বুধবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় এবারের শীতে দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৩ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বছরের এই দিনে তেঁতুলিয়ার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পঞ্চগড়ে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে সূর্যের মুখ দেখা যাওয়ার পর রোদের তেজ বাড়তে থাকে। কিন্তু বিকেল থেকে আবার শুরু হয় উত্তরে কনকনে হাওয়া। বুধবার ভোর থেকে শুরু হয় হালকা বৃষ্টির মতো ভারী কুয়াশা। সেই সাথে উত্তরের কনেকনে শীতল হাওয়া বয়ে গিয়ে সকালে তেঁতুলিয়ায় সর্বনি¤œ মাপমাত্রা দাঁড়ায় ৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৯টার দিকে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও ঘন কুয়াশার কারণে তাপ অনুভূত হয়নি।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন পর্যবেক্ষক জীতেন্ত্র নাথ রায় জানান, বুধবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুল মান্নান জানান, ইতোমধ্যে জেলায় সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া প্রায় ৩৫ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। বেসরকারিভাবেও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগেও জেলার বিভিন্ন স্থানে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

পিরোজপুরে শীতে বিপর্যস্ত জীবন

পিরোজপুর সংবাদদাতা জানান, সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরসহ উপকূলজুড়ে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় নদনদী ও জনপথ। গতকাল বুধবার বেলা ১১টার পর সূর্যের দেখা পান উপকূলবাসী। দিন-রাত বইছে ঠাণ্ডা হাওয়া শীতে বিপর্যস্ত জীবন। গত কয়েক দিন দেশের অন্যান্য স্থানের মতো পিরোজপুর জেলাতেও দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকায় শীত কমেনি। শীতের প্রকোপে শিশু ও বয়স্ক মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। জেলার হাসপাতালগুলোতে শিশু রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জবুথবু অবস্থা জেলার নদী তীর ও চরের বাসিন্দাদের। নি¤œ আয়ের মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। ঘন কুয়াশার কারণে নদনদী বেষ্টিত পিরোজপুর জেলার খরস্রোতা কঁচা, কালীগঙ্গা, বলেশ্বর ও সন্ধ্যা নদীতে মধ্য রাতে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/467112/