ঢাকা মেডিক্যালে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সংবাদ সম্মেলন : নয়া দিগন্ত
২৬ ডিসেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৩:২৬

ডাকসুতে হামলার শিকার কেউ ভালো নেই

সংবাদ সম্মেলনে প্রক্টরের দ্রুত পদত্যাগ দাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানীর প্রত্যক্ষ মদদ ও হস্তক্ষেপেই ডাকসু ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে তার পদত্যাগ চেয়েছে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান গতকাল বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ডাকসুতে হামলায় আহত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন কারো অবস্থা ভালো নেই। এ ছাড়া ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরসহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এ জি এস সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেফতার না করলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে তিনি জানান। ঢামেকের জরুরি বিভাগের বাইরে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা বিন ইয়ামিন মোল্লা, মাহফুজুর রহমান, মশিউর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

উল্লেখ্য, গত রোববার ডাকসু ভবনে ভিপি নুরুল হক নুরের কক্ষে ঢুকে বাতি নিভিয়ে রড, বাঁশ ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতাকর্মীরা। ওই ঘটনায় আহত অন্তত ২৪ জনের মধ্যে ৯ জন এখন ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি আছেন। ডাকসু ভবনের বাইরে এবং ভেতরে মিলিয়ে মোট ৯টি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা আছে। ক্যামেরার ফুটেজগুলো ধারণ করা হতো ডাকসুর সিনিয়র অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার আবুল কালাম আজাদের কক্ষে। সেই কক্ষে একটি মনিটর এবং একটি সিপিইউ ছিল। কিন্তু ডাকসু ভবনে নুরের ওপর হামলার ঘটনার পর সেই মনিটর এবং সিপিইউয়ের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, প্রথম দফায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আমাদের ওপর হামলা করেছিল। এই ঘটনার পর আমি প্রক্টর স্যারকে অন্তত দশবার ফোন করি। তিনি তিনবার আমার ফোন ধরেন এবং তিনবারই তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছিলেন। একপর্যায়ে তিনি এও বলেছিলেন, ‘তুমি ডাকসুর কেউ না, ওখানে কেন গিয়েছ?’ আমি তাকে বলেছিলাম, শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো জায়গায় যাওয়ার অধিকার আমার আছে। এটি বলার পরও প্রক্টর আমাকে গালিগালাজ করেছিলেন। বারবার কাকুতি-মিনতি করার পরও তিনি ঘটনাস্থলে আসেননি আমাদের ওপর যখন দ্বিতীয় দফা হামলা হয়, তখন তিনি ঘটনাস্থলে আসেন। অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবেই তিনি আমাদের মার খাইয়েছেন। প্রথম দফা হামলার পর যদি প্রক্টর আমাদের উদ্ধার করতেন, তাহলে আজকে নির্মম নির্যাতনে আহত হয়ে আমাদের ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি হতে হতো না। আমাদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তার সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই দলকানা প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করছি।

তিনি বলেন, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দামের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা রোববারের হামলায় অংশ নিয়েছিলেন। যারা আমাদের পিটিয়ে আহত করেছে, তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে। তা না হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আমাদের অনেকেই এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছে। যেহেতু প্রক্টরের দায়িত্বহীনতার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একটি কালো অধ্যায় রচিত হয়েছে, তাই আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে।

ডাকসুতে হামলায় আহত ঢামেকে চিকিৎসাধীন কারো অবস্থা ভালো নেই জানিয়ে রাশেদ খান বলেন, ডাকসুতে ভিপি নুর ও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় আহতদের মধ্যে তুহিন ফরাবি আইসিইউতে ছিলেন। তাকে চিকিৎসকরা বুধবার বেডে স্থানান্তর করেছিলেন। কিন্তু আবার তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় বৃহস্পতিবার ১০টার দিকে আবার তাকে বেড থেকে এইচডিইউতে নেয়া হয়েছে। সে এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। আমরা মনে করি, শুধু মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য তুহিন ফারাবিকে বেডে নেয়া হয়েছিল। তার সঙ্কটাবস্থা এখনো কাটেনি। তার অবস্থা গুরুতর। আমাদের সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক এ পি এম সোহেলের মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করে অবস্থার অবনতি হয়। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে জরুরিভাবে চিকিৎসকরা তার অপারেশন করেন। আমরা জেনেছি সোহেলের মাথায় প্রচণ্ড আঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছিল। অপারেশনের মাধ্যমে যদি তার মাথার রক্ত অপসারণ করা না হতো তাহলে তার জীবননাশের হুমকি ছিল। সে এখন আইসিইউতে। তার জ্ঞান কখনও আসছে আবার জ্ঞান হারাচ্ছেন।

তিনি বলেন, নুর ভিপি হয়েও তার ওপর তিনবার হামলা করা হয়েছে। এর আগে যা ঘটেনি। এটি লজ্জার। অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। নুর মাঝে মধ্যে বমি করছেন। হাতে ও কোমরে প্রচণ্ড ব্যথায় তিনি কাতরাচ্ছেন। রাত্রে ঘুমাতে পারছেন না। সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলামের দুই চোখে প্রচণ্ড আঘাত করা হয়। তার অবস্থাও গুরুতর।

রাশেদ বলেন, আমরা ঢাবির শিক্ষার্থী হয়েও বিভিন্ন সময় হামলা-মামলার শিকার হচ্ছি। কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। নুরুল হক নুরকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও বাহাউদ্দিন নাসিম দেখতে এসেছিল। তারা বলেছিলেন, হামলায় জড়িতরা যে মঞ্চেরই হোক না কেন তাদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনা হবে। কিন্তু আমরা দেখেছি মাত্র তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্য মূল হোতাদের এখনো পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি। তাদের সে কথার মাধ্যমে তারা ছাত্রসমাজের সাথে প্রহসন করেছেন। যাবতীয় তথ্য প্রমাণ থাকার পরেও অভিযুক্তদের এখন পর্যন্ত আইনের আওতায় আনা হয়নি।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/467121