২১ ডিসেম্বর ২০১৯, শনিবার, ১২:০১

শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল

বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ; কাজে যেতে পারছেন না দরিদ্ররা

উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় ক’দিন ধরে সূর্য দেখা না দেয়ায় তাপমাত্রা ক্রমেই কমছে। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসায় নাস্তানাবুদ হয়ে পড়েছেন এসব জেলার লোকজন। এতে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। হাড় কাঁপানো শীতের কারণে কাজে নামতে পারছেন না দরিদ্র মানুষ। ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে আগুন পোহাতে গিয়ে রংপুর, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরের আটজন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। এ দিকে উত্তরাঞ্চলের পাশাপাশি ঢাকাসহ সারা দেশেই তীব্র শীত বিরাজ করছে।

আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ ৮ : রংপুর অফিস জানায়, গত পাঁচ দিন থেকে এ অঞ্চলে তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৩ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। ফলে রোদের নাগাল পাচ্ছেন না এ অঞ্চলের মানুষ। এতে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের লোকজন। দেখা দিয়েছে নিউমোনিয়া, সর্দি-জ্বরসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র জুটছে না শীতার্তদের। এই অবস্থা আরো চার-পাঁচ দিন থাকার কথা জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। অন্য দিকে গত কয়েক দিনে শীত থেকে বাঁচতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন এক অন্তঃসত্ত্বাসহ আটজন। অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে রংপুরের চারজন, ঠাকুরগাঁওয়ের তিনজন এবং দিনাজপুরের একজন রয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা খারাপ। তাদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

নওগাঁয় শীতজনিত রোগের আক্রমণ : নওগাঁ সংবাদদাতা জানান, নওগাঁয় বুধবার সন্ধ্যা থেকে শীতের প্রকোপ তীব্র হয়েছে। গতকাল শুক্রবার জেলায় সবর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র শীতে কষ্ট পোহাতে হচ্ছে জেলার দরিদ্রসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোজনকে। এ দিকে গত কয়েক দিন ধরে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ডায়রিয়া, আমাশয়, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন নওগাঁ সদর ও জেলার উপজেলা হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন নারী, শিশুসহ বয়স্ক লোকজন। এর মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই অধিক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ দিকে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় শীতকষ্ট পোহাতে হচ্ছে দিনমজুর ও কর্মজীবী লোকজনকে। তবে এখন পর্যন্ত জেলায় ব্যাপকভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু না হওয়ায় ছিন্নমূল লোকজনকে শীতে কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।

পঞ্চগড়ে দেখা মেলেনি সূর্যের : পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান, পঞ্চগড়ে গতকাল শুক্রবার দিনভর মেঘাচ্ছন্ন আকাশে দেখা মেলেনি সূর্যের। সেই সাথে দিনভর বইছে উত্তরের কনকনে শীতল বাতাস। এ অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ি থেকে বের হয়নি। দিনভর খড়কুটো অথবা কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেছে নি¤œ আয়ের মানুষজন। শীত বাড়ার সাথে সাথে ভিড় বেড়েছে পুরনো শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, শুক্রবার সকাল ৯টায় এখানে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ শনিবার তাপমাত্রা আরো কিছুটা কমে যেতে পারে বলে জানিয়েছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস।

কুড়িগ্রামে শৈত্যপ্রবাহের শঙ্কা : কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, গত চার দিন ধরে কুড়িগ্রামে টানা শৈত্যপ্রবাহে শীতের তীব্রতা বাড়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, শুক্রবার সকালে তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার সারা দিনই কুয়াশার চাদরে আবৃত ছিল কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলসহ পুরো জনপদ। সূর্যের মুখ দেখা যায়নি সারা দিনেও। ভেজা আবহাওয়া ও হিমেল বাতাসে শীতের তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছে। তীব্র ঠাণ্ডার কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। নদ-নদীর অববাহিকায় ঘন কুয়াশাসহ শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। নৌপথ ও সড়কপথে যান চলাচল করছে ধীর গতিতে। দু-এক দিনের মধ্যে তাপমাত্রা আরো হ্রাস পেয়ে জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে এবং ২৪ কিংবা ২৫ ডিসেম্বর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।

শীতে স্থবির নীলফামারীর জনজীবন : নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, গত চার দিন ধরে নীলফামারীতে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। শৈত্যপ্রবাহের পাশাপাশি ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে স্থবির হয়ে পড়েছে এ জেলার জনজীবন। তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষজন। তারা কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে কাজে বের হতে পারছে না। বেড়েছে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব। গত কয়েক দিনে নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়েছে।

শীতে দুর্ভোগ বেড়েছে দৌলতপুরে : দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা জানান, সারা দেশের মতো কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলাতেও জেঁকে বসেছে শীত। ঠাণ্ডা বাতাস ও ঘন কুয়াশা আর মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষের জীবন। ঘন কুয়াশার কারণে গত দু’দিন এখানে সূর্যের তেমন দেখা মেলেনি। প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। প্রচণ্ড শীতে ঠাণ্ডাজনিত রোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষ ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। দরিদ্র মানুষ ও শ্রমজীবীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। শীত নিবারণের জন্য গরম কাপড় পর্যন্ত কিনতে পারছে না অনেকে। শীত বেড়ে যাওয়ায় বোরো ধানের বীজতলা প্রস্তুত ও জমি চাষবাদ করতে বেগ পেতে হচ্ছে কৃষকদের।

ধামরাইয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত : ধামরাই (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, তিন দিন ধরে সূর্য দেখা না যাওয়ায় তাপমাত্রা কমার সাথে সাথে শীত জেঁকে বসেছে। শীত পড়ায় বাজারে, রাস্তার ফুটপাথের ধারে বা দোকানগুলোতে গরম কাপড় কেনার ধুম পড়েছে। এতে শীতবস্ত্রের দাম বেড়ে গেছে। খেটে খাওয়া মানুষসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ তীব্র শীতে কষ্টের মধ্যে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।

সাটুরিয়ায় ঠাণ্ডায় দিশেহারা দরিদ্ররা : সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় শীতের তীব্রতা চরম আকার ধারণ করেছে। গত এক সপ্তাহ থেকে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় হতদরিদ্র, বয়স্ক এবং নি¤œবিত্ত পরিবারের শিশুসন্তানরা ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শীতের কারণে দিনমজুর, নারী-পুরুষ কাজের সন্ধানে বাইরে যেতে পারছেন না। গত তিন দিনে ভিড় বাড়তে দেখা গেছে নি¤œ আয়ের মানুষের শীতবস্ত্রের দোকানে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আশরাফুল আলম বলেন, উপজেলার তিন শত দরিদ্র ও ছিন্নমূল সদস্যদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। শীতবস্ত্র বিতরণকার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

ঠাণ্ডায় বিপর্যস্ত রাজশাহীর জনজীবন: রাজশাহী ব্যুরো জানায়, মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে রাজশাহীতে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। কনকনে ঠাণ্ডায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শ্রমজীবী, নি¤œবিত্ত ও ছিন্নমূল মানুষ। সেই সাথে শীতজনিত রোগী বাড়ছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে। গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টায় রাজশাহীর সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, মেডিসিন, শিশু ও চর্ম বিভাগে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন। মেডিসিনের চারটি ইউনিটে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ছিল দুই হাজার ২০০ জন। যাদের বেশির ভাগই জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও হাঁপানিতে আক্রান্ত। শিশু ওয়ার্ডের তিনটি ইউনিটে পাঁচ শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে। শিশুরা নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত।

শীতে কাঁপছে ভাণ্ডারিয়াবাসী : ভাণ্ডারিয়া (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, দেশের পশ্চিমাঞ্চলে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ও শীতল বায়ুপ্রবাহের কারণে সর্বত্র বেড়েছে শীতের তীব্রতা। ফলে বেড়েছে গরম পোশাকের কদর। হঠাৎ শীত বৃদ্ধি পাওয়ায় পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় শীতার্ত মানুষ গরম কাপড় কিনতে ফুটপাথের দোকানে ভিড় করছে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় সম্প্রতি উপজেলার শিশু-বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। উপজেলার স্বাস্থ্য কমপেক্সের কর্মকর্তা ডা: জহিরুল ইসলাম বলেন, শীত বাড়লে সাধারণত শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরাই ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/465760/