২০ ডিসেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ১১:৫৪

‘এলাকায় গেলে গাড়ির গ্লাস নামাতে পারি না’

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, রাস্তার খারাপ অবস্থার কারণে নিজের এলাকায় যেতে লজ্জা লাগে। জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারেন না। এলাকার লোকজন গালি দেয়। এলাকায় গিয়ে গাড়ির গ্লাস খুলে জনগণের সঙ্গে কথা বলতে পারি না। শুধু রাস্তা তৈরির বহু প্রকল্প নেয়া হয়। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণে নজর দেয়া হয় না।

গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে মহাসড়কের লাইফ টাইম: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেন, লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।
সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুলইসলাম। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রকৌশলী এ কে মোহাম্মদ ফজলুল করিম।

মন্ত্রী বলেন, শুধু নতুন রাস্তা তৈরির জন্য বহু প্রকল্প নেয়া হয়। অথচ রক্ষণাবেক্ষণে নজর দেয়া হয় না। সড়ক সংস্কারের টাকাও আমরা দিচ্ছি। তারপরও বেহালদশা কেন? আমরা কি সারাজীবন রাস্তার পেছনে বসে থাকবো। যেসব রাস্তা করেছেন সেগুলো শেষ করেন। পরে আবারও নতুন রাস্তা করবেন। রাস্তা ভেঙে গেলে কেন সংস্কার করা হচ্ছে না। অনেক ঠিকাদার এমনভাবে রাস্তা নির্মাণ করেন এটা ভাঙবেই। বাইপাস সড়ক প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, জমিস্বল্পতার কারণে বাইপাস করা হবে না। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী একদিন বলেছিলেন সারাদেশ কী বাইপাস হয়ে যাবে নাকি?

তিনি বলেন, বিটুমিন সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এর বদলে কংক্রিট নিয়ে আসতে হবে- প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বারবার তাগিদ দিয়েছেন। আমাদের জনগণ অনেক শক্তিশালী। তাদের চাহিদা প্রাধান্য দিয়েই কাজ করতে হবে। অনেক দেশি কোম্পানিও ভালো ভালো কাজ করছে। অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই, তারপরও শুধু তারাই কাজ পায়। এদের কারণে বিদেশি ভালো প্রতিষ্ঠানও কাজ পায় না।

অনেক রাস্তার দিকনির্দেশনা নেই। এই সাধারণ কাজগুলো আমরা কেন করতে পারি না। আমরা যখন সিঙ্গাপুর যাই তখন দিকনির্দেশনা দেখতে অনেক ভালো লাগে। আমি অনুরোধ করবো আপানারা এই কাজগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করেন। রাস্তার লাইফটাইম হচ্ছে ৫০ বছর। তৈরির প্রথম দশ বছর কিছুই করা লাগবে না। ১০ বছর পর ৫ শতাংশ এগ্রি গ্যাস মেশাবে, এর ফলে আরো ১০ বছর চলবে। এভাবে প্রতি ১০ বছর পর পর এগ্রি গ্যাস মেশালেই এর লাইফটাইম ৫০ বছর হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ইংল্যান্ড, শ্রীলংকায় পাহাড়-পর্বত রয়েছে। আমরা তো মহাসাগরবিস্তৃত দেশও দেখি। তারাও তো রাস্তা করে, সেখানে রাস্তার লাইফটাইম ৫০ বছর। তাহলে আমরা কেন পারবো না।

মুস্তফা কামাল বলেন, কারণটা কী? আমরা কী অন্যায় করেছি? ইংল্যান্ডের একটি এক নম্বর কোম্পানি নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু তাদের কাজ করতে দেয়া হয়নি। কেন দেয়া হয়নি তা আমরা জানি।

অটোমেটিক টোল সিস্টেম চালুর পরামর্শ দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি গাড়ির জন্য প্রি-পেইড মিটারের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্দিষ্ট সীমা পার হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিল পরিশোধ হবে। টোল প্লাজায় কোনো যানজট হবে না। অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী হাজার বার বলেছেন, প্রতিটি মহাসড়কে টোল আদায়ের ব্যবস্থা করতে। টোলের টাকা দিয়েই সড়ক সংস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। সড়ক সংস্কারে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে টাকা দেয়া সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, কোনো কোম্পানি কাজ নিয়ে গাফিলতি করলে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আপনারা সড়ক উন্নয়নে প্রতিবছর যে বরাদ্দ পান, বছর শেষে সেটার কি প্রতিদান দিতে পারেন?

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, যারা সড়ক নির্মাণ করে, রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদেরকেই দেয়া উচিত। এটা করা হলে একদিকে কাজের মান ভালো হবে, অন্যদিকে রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে ভাবনাও কমে আসবে।
চিত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাট নষ্ট হয়, এর কোনো ভিত্তি নেই। মালয়েশিয়ায় সারাবছর বৃষ্টি হয়। কিন্তু সেখানে তো রাস্তা টেকসই। আমরা কেন এখনও কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণ করছি না। কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণের কথা প্রধানমন্ত্রী অনেকবার বলেছেন। পাশের দেশ ভারতের রাস্তাঘাটও অনেক টেকসই। যারা সড়ক নির্মাণ করে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদেরই দেয়া উচিত। এটা করা হলে একদিকে কাজের মান ভালো হবে অন্যদিকে রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে ভাবনাও কমে আসবে।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=204582