২০ ডিসেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ১১:৫০

৯৪ পরামর্শক এক প্রকল্পে

ব্যয়ের ৬০.৩৮ শতাংশ পরামর্শকে

পরামর্শকের ভারে প্রকল্প যেন নুয়ে পড়ছে। আর এখন পরামর্শক সেবার নতুন নাম দেয়া হচ্ছে পেশাগত সেবা। কারিগরি প্রকল্প হলেও পরামর্শকের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বলে পরিকল্পনা কমিশন মনে করছে। প্রকল্প ব্যয়ের ৬০ শতাংশের বেশিই যাবে পরামর্শকদের পেছনে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিনিয়োগ প্রোগ্রামিং ও বাস্তবায়ন সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পে এই চিত্র পাওয়া গেছে। অন্য দিকে প্রকল্পের ব্যয় বিভাজনে স্বচ্ছতা নিয়ে খোদ মূল্যায়ন কমিটির সভায় (পিইসি) প্রশ্ন উঠেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের প্রস্তাবনায় বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৫৭৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের পরিমাণ আরো বৃদ্ধির জন্য টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা স্রোডা জন্মলগ্ন থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ১৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা অনুদান সহায়তা এবং সরকারি এক কোটি টাকাসহ ১৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

স্রোডা জানায়, বাংলাদেশে সোলার পার্ক স্থাপনের জন্য জমি নির্ধারণ একটি জটিল প্রক্রিয়া। অকৃষি জমিতে সোলার পার্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে জমি সহজলভ্য নয়। এ ক্ষেত্রে ভাসমান সোলার পার্ক একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে সম্ভাব্যতা যাচাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; যা এই প্রকল্পের প্রধান অংশ। এ ছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি জাতীয় গ্রিডে সংযোজিত হলে গ্রিডের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তা প্রকল্পের আওতায় নিরূপণ করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভাসমান সোলার পার্ক স্থাপনের জন্য জায়গা নির্ধারণ ও সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। উইন্ড, সোলার বায়োমাস ও অন্যান্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য সম্ভাবনাময় জায়গা খুঁজে বের করা হবে। এ ছাড়া কম্প্রিহেনসিভ গ্রিড ইম্প্যাক্ট স্টাডি পরিচালনা ও বর্তমান গ্রিড কোড হালনাগাদ করা হবে।

প্রকল্পের ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নে ৬০ দশমিক ৩৮ শতাংশ অর্থ বা ১০ কোটি ২৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা খরচ হবে ৯৪ জন পরামর্শকের পেছনে। এখানে দেশীয় পরামর্শক হলো ৪০ জন আর বিদেশী ৫৪ জন। বিদেশী পরামর্শকদের জন্য ব্যয় সাত কোটি ৯১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। আর স্থানীয় পরামর্শকদের জন্য খরচ হবে দুই কোটি ৩২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। দুই বছরে বাস্তবায়নযোগ্য এই প্রকল্পে প্রতি মাসে পরামর্শক খাতেই ব্যয় হবে গড়ে প্রায় ৪৩ লাখ টাকা। আর পরামর্শকদের আউট অব পকেট খাতে খরচ এক কোটি ৭৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এই খরচের ব্যাপারে পিইসিতে আপত্তিসহ বিস্তারিত বিভাজন চাওয়া হয়েছে।

শিল্প ও শক্তি বিভাগের প্রধান জানান, প্রকল্পের আওতায় ট্রেনিং, কর্মশালা, সেমিনার বাবদ ৬৭ লাখ ২০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য টিএপিপিতে প্রদান করা হয়নি। এসব ট্রেনিং, কর্মশালায় কারা অংশগ্রহণ করবেন, কোথায় কত দিনের জন্য তা উল্লেখ নেই।

বিদ্যুৎ উইংয়ের যুগ্ম প্রধান বলেন, টিএপিপিতে বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতি বিষয়ক পরিপত্র অনুযায়ী পুনর্গঠিত টিএপিপিতে প্রকল্পের পিএসসি ও পিআইসি কমিটি গঠন করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংস্থা জানায়, ভাসমান সোলার পার্ক স্থাপনের জন্য উন্মুক্ত জলাশয় আবশ্যক বিধায় জায়গা নির্ধারণের বিষয়ে ইতঃপূর্বে মৎস্য বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বন বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা করা হয়। কিন্তু মাছের প্রজনন, জলাশয়ে পানি ও বনভূমি ক্ষতির আশঙ্কায় জায়গা নির্ধারণের বিষয়ে তাদের কাছ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। কাজেই এডিবির স্টাডি রিপোর্ট এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মতামতের আলোকে পরবর্তীতে ভাসমান সোলার পার্ক স্থাপনের জন্য এলাকা নির্ধারণ করা হবে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, এডিবির সাথে ইআরডির চুক্তি অনুযায়ী এডিবি পরামর্শক নিয়োগসহ প্রশাসনিক সব কার্যক্রম সম্পন্ন করবে।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব শিল্প ও শক্তি বিভাগ) সাহিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, দেশের কোন কোন এলাকায় ভাসমান সোলার পার্ক স্থাপন করা হবে বা সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে প্রস্তাবিত টিএপিপি হতে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। ইআরডির সাথে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এডিবির কারিগরি সহায়তা অনুমোদন চিঠি স্বাক্ষরিত হয়েছে। অথচ ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ার পর ২০১৯ সালের জুনে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পের টিএপিপি পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার অনুদানে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাস্তবায়নের প্রতিটি পর্যায়ে এমনকি প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বিদ্যুৎ বিভাগ ও ¯্রােডার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা জরুরি।

পরামর্শকদের ব্যাপারে তিনি বলেন, পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ইআরডি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অংশগ্রহণ থাকা জরুরি। মন্ত্রণালয় গুরুত্বের সাথে বিষয়টি দেখবে আশা করছি।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/465474/