১১ ডিসেম্বর ২০১৯, বুধবার, ৬:০৯

১৫ মাসেও নির্দিষ্ট হয়নি বাসের রুট-কোম্পানি

রাজধানীর যানজট নিরসন

রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানো ও যানজট নিরসনে গঠিত বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি দীর্ঘ ১৫ মাসেও নির্দিষ্ট রুট ও কোম্পানি ঠিক করতে পারেনি। কমিটি গঠনের পর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেনÑ দুই বছরের মধ্যে তারা এর বাস্তবায়ন করবেন; কিন্তু তা-ও সম্ভব হবে না বলে তারা জানিয়েছেন। কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে থাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচন ও ডেঙ্গু পরিস্থিতির কারণে তাদের কাজে বাধা পড়েছে। এ কারণে তারা টার্গেটকৃত সময়ে কাজ শেষ করতে পারছেন না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শত ভাগ সফলতা দেখাতে না পারলেও অন্তত পাইলট প্রজেক্ট নগরবাসীকে উপহার দিতে পারবেন বলে তার আশা।

রাজধানীতে যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে গণপরিবহনের বিশৃঙ্খল চলাচলকে দায়ী করা হয়। জানা যায়, বর্তমানে রাজধানীতে তিন শতাধিক রুটে প্রায় ৯ হাজার বাস-মিনিবাস চলাচল করছে। এ কারণে যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করা, প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি চালান চালকরা। এ কারণে অহরহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। রাজধানীর এ চিত্র পাল্টাতে ২০১৫ সালের মে মাসে ঢাকা উত্তরের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আনিসুল হক বাস কোম্পানিগুলো কমিয়ে আনা এবং রুট কমিয়ে পাঁচ-ছয়টিতে নির্দিষ্ট করার উদ্যোগ নেন। তিনি এ সময় রাজধানীতে প্রায় পাঁচ হাজার নতুন বাস নামানোর কথাও বলেন। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ নিয়ে অনেক কাজ করলেও তা বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। বাস মালিক-শ্রমিকদের বাধাও এর অন্যতম কারণ ছিল। আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর এ কার্যক্রমে অনেকটা ভাটা পড়ে। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে আহ্বায়ক করে বাস রুট রেশনালাইজেশন বিষয়ে কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটিতে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালককে সদস্যসচিব এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তৎকালীন প্যানেল মেয়র, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বি
আরটিএ) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক চেয়ারম্যান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সভাপতিকে সদস্য করা হয়। পরে আতিকুল ইসলাম উত্তরের মেয়র নির্বাচিত হলে প্যানেল মেয়রের পরিবর্তে তাকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়।

কমিটির গঠনের পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে কমিটির আহ্বায়ক মেয়র সাঈদ খোকন ঘোষণা দিয়েছিলেন আগামী দুই বছরের মধেই তিনি রাজধানীতে নির্দিষ্ট কোম্পানি ও রুটে বাস পরিচালনা করবেন। জানা যায়, কমিটি গঠনের পর প্রায় ১৫ মাস পার হয়েছে। এ সময়ে কমিটির মোট ১১টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে; কিন্তু এ দীর্ঘ সময়েও তারা বাসের নির্দিষ্ট কোম্পানি ও রুট ঠিক করতে পারেননি। তবে এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণের ধানমন্ডি থেকে আজিমপুর রুটে এবং উত্তরার এয়ারপোর্ট থেকে দিয়াবাড়ি পর্যন্ত চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে পুরান ঢাকায় আরেকটি চক্রাকার বাস সার্ভিস পরীক্ষামূলকভাবে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে কমিটির। এ ছাড়া রাজধানীতে যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে ৪০টির মতো। আব্দুল্লাহপুর থেকে সায়েদাবাদ, ধানমন্ডির মিরপুর রোড এবং সাইন্সল্যাব থেকে শাহবাগ রোড রিকশামুক্ত করার কথা বলা হলেও তার পুরো বাস্তবায়ন করতে পারেনি কমিটি।

গত সোমবার ঢাকা দক্ষিণ নগর ভবনে অনুষ্ঠিত বাস রুট রেশনালাইজেশন বিষয়ে গঠিত স্টিয়ারিং কমিটির ১১তম সভা শেষে কমিটির আহ্বায়ক ও দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন সাংবাদিকদের জানান, জাতীয় নির্বাচন ও ডেঙ্গু পরিস্থিতির কারণে কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। এ কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি এখনো রুট ও কোম্পানি ঠিক হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এ মাসের শেষ সপ্তাহে আগে বাস মালিক নেতাদের সাথে এক দফা এবং পরে বাস মালিকদের সাথে আরেক দফা বসে তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সে হিসাবে তিনি আগামী বছরের মার্চে রুট ও কোম্পানি নির্দিষ্ট করা সম্ভব বলে আশা প্রকাশ করেন। তবে কাজ পুরোপুরি শেষ হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শত ভাগ সফলতা দেখাতে না পারলেও অন্তত পাইলট প্রজেক্ট নগরবাসীকে উপহার দিতে পারব।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/463291