৮ ডিসেম্বর ২০১৯, রবিবার, ১২:৫১

যাত্রাবাড়ীতে সড়ক ও জনপদের জমিতে আ’লীগ নেতার অবৈধ মার্কেট

সড়ক ও জনপদের জমি দখল করে যাত্রাবাড়ীতে গড়ে উঠছে বহুতল মার্কেট। ইতোমধ্যে মার্কেটের দোতলার কাজ শেষ। এখন তিন তলার কাজ চলছে। যাদের সম্পত্তি তারা অভিযোগ দিয়েই খ্যান্ত। কিন্তু নির্মাণকাজ বন্ধের কোনোই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। উল্টো অভিযোগ পাওয়া গেছে সড়ক ও জনপদের শীর্ষ কর্মকর্তারা গোপনে দখলবাজদের সহায়তা করছেন। এ নিয়ে যখন গণমাধ্যমে লেখালেখি হয় তখন কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকে; আবার সবাই যখন বিষয়টি ভুলতে বসে তখন জোরেশোরে শুরু হয় কাজ।

ঢাকা-খুলনা (এন-৮) মহাসড়কের পাশে যাত্রাবাড়ী মৌজার অধিগ্রহণকৃত সিএস ৫২৩ ও ৫২৫ নং দাগের ৪০ শতাংশ ভূমি অবৈধভাবে দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আল আমিন। কয়েক মাস ধরে চলছে ভবনের নির্মাণকাজ। ইতোমধ্যে একবার আল আমিনকে র্যাব সদস্যরা ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে। তখন বেশ কয়েক মাস ওই ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। সম্প্রতি আল আমিন জেল থেকে বের হয়ে দ্বোতলার কাজ শেষ করে এখন তিন তলার কাজ শুরু করেছেন। তবে আল আমিন বলছেন, এটি তার পৈতৃক সম্পত্তি।

যাত্রাবাড়ীর প্রধান সড়কের পাশে কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি দখল করে সেখানে মার্কেট নির্মাণ করে দোকান বরাদ্দ দিয়ে আসছেন আল আমিন। ২৫টির বেশি দোকান বরাদ্দ দিয়ে সেখান থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। যাত্রাবাড়ীর ওই সম্পত্তির মালিক সড়ক ও জনপদ বলে জানা যায়। সড়ক ও জনপথের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই সেখানে ভবন নির্মাণ সম্ভব হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। এ নিয়ে আল আমিনের বিরুদ্ধে থানায় মামলাসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দেয়া হলেও ওগুলো কিছুই আমলে নেননি আল আমিন। নিজেকে ঢাকা দক্ষিণের ৫০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয় দিয়েই তিনি এই দখলাভিযান চালান বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের দায়েরকৃত এক মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৮ সালের ১২ মার্চ আল আমিন, জাকির হোসেন, আরিফ, গোলজার ও নাছিরসহ ২৫-৩০ জন লোক বিআরটিসির যাত্রাবাড়ী বাস ডিপোতে অবৈধভাবে জোরপূর্বক প্রবেশ করে ডিপোর লোকজনকে মারধর করে বের করে দেন। জানা গেছে, সেই থেকে ওই স্থানটি দখল করে সেখানে আল আমিন ভবন নির্মাণ করেন। এর আগে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের পক্ষ থেকেও আল আমিনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে ক
য়েক দফায় তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট প্রদান করা হয়। এসব রিপোর্টে আল আমিনের অপরাধ কর্মকাণ্ড উঠে আসে। কিন্তু কোনো কিছুই আল আমিনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে, আল আমিন আওয়ামী লীগের কেউ নন। কিন্তু তারপরেও আল আমিনের দাপট কমছে না।

গত ২০ জুন রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আল আমিনকে (৩৮) গ্রেফতার করে র্যাব। র্যাব-১০ জানায়, গ্রেফতারকৃত আল আমিন একজন পেশাদার সন্ত্রাসী। একই সাথে তিনি মাদক কারবারি। আল আমিন কক্সবাজার থেকে বিভিন্ন কৌশলে মাদক পাচার করে যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, কদমতলীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকে। তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি ও অস্ত্র মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় র্যাবের পক্ষ থেকে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলায় ইতোমধ্যে চার্জশিটও প্রদান করা হয়েছে। সেখানে আল আমিন এবং তার সঙ্গীদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ মামলায় কয়েক মাস জেল খাটেন আল আমিন। তখন ওই ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। জেল থেকে বের হওয়ার পরে আবার শুরু হয় নির্মাণকাজ। বর্তমানে তিন তলার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা যায়। সড়ক ও জনপদের শীর্ষ কয়েক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই নির্মাণকাজ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। এ ব্যাপারে জানতে সড়ক ও জনপদের প্রধান প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। দখলের বিষয়ে জানতে সড়ক ও জনপদের ঢাকা জেলা সার্ভেয়ার আরিফের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে বলেন, ফাইল না দেখে তিনি কিছু বলতে পারবেন না। অফিসে গিয়ে ফাইল দেখতে হবে। পরে তার সাথে যোগাযোগ করা আর সম্ভব হয়নি। তিনি মোবাইল ফোন ধরেননি।

এ দিকে আল আমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটা তার পৈতৃক সম্পত্তি। অবৈধভাবে অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। পরে তা আবার তারা ফেরত পেয়েছেন। সম্পত্তিটি বর্তমানে তার মায়ের নামে রয়েছে। জমি সংক্রান্ত যে মামলা হয়েছিল তা খারিজ হয়ে গেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/462507/