৩০ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, ১০:৪৬

কেন বাড়ছে ডলারের দাম

আবারো অস্থির হয়ে উঠেছে ডলারের বাজার। সরকারিভাবে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা বেঁধে দেয়া হলেও বেসরকারি পর্যায়ে তা ৮৭ টাকা পর্যন্ত বেচাকেনা হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আন্তঃব্যাংক লেনদেনেই (ব্যাংকগুলোর নিজেদের মধ্যে কেনাবেচা) ডলারের দর ৮৫ টাকায় উঠেছে। ব্যাংকগুলো নগদ ডলার বিক্রি করছে ৮৭ টাকার বেশি দরে। খোলাবাজারে আরো বেশি, এক ডলারের জন্য গুণতে হচ্ছে ৮৭ টাকা ৪০ পয়সা। মাসখানেক ধরে ডলারের বাজার চড়া। ৩১শে অক্টোবর আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের ছিল ৮৪ টাকা ৭০ পয়সা। বাড়তে বাড়তে বৃহস্পতিবার তা ৮৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

মুদ্রা বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যংক নির্ধারিত প্রতি ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা। রাষ্ট্রয়াত্ব কয়েকটি ব্যাংক এই দাম অনুসরণ করলেও, বেশিরভাগ বেসরকারি ব্যাংক ডলার কেনা-বেচা করেছে ৮৬ থেকে ৮৭ টাকায়। আর মানি এক্সেচেঞ্জে এই দাম ছিলো আরো বেশি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, খাতা কলমে দীর্ঘদিন ধরেই ডলারের বাজার স্থিতিশীল থাকলেও বাস্তব চিত্র আলাদা। ডলারের বাজারে নিয়ন্ত্রণে না থাকায়, বেসরকারি ব্যাংকগুলো ভিন্ন ভিন্ন দামে কেনা বেচা করছে। এতে মুদ্রাটির দাম উঠা-নামায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক বৃহস্পতিবার ৮৭ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। অন্যদিকে, খোলাবাজারে (কার্ব মার্কেটে) ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৭ টাকা ৩০ পয়সায়। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ৫ মাস আগে গত ৩১শে অক্টোবর ডলার বিক্রি হয়েছিল ৮৪ টাকা ৫০ পয়সায়। এক বছর আগে ছিল ৮৩ টাকা ৯০ পয়সা।

মতিঝিলে কার্ব মার্কেটের এক ডলার ব্যবসায়ী বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের সঙ্কট না থাকলেও খোলাবাজারে সরবরাহ কমে গেছে। আবার চাহিদাও অনেক। এ কারণেই দর চড়া। এক মাস আগেও খোলাবাজারে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা। মঙ্গলবার প্রতি ডলার ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত উঠেছিল বলে জানান তিনি। এছাড়া খোলাবাজারে ডলার আসে মূলত বিদেশ ফেরতদের কাছ থেকে। তারা দেশে যে ডলার নিয়ে আসেন, তা খোলাবাজারে বিক্রি করে দেন। মানি চেঞ্জারগুলোও বিদেশ ফেরত লোকজনের কাছ থেকে ডলার কিনে থাকে।

অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর খোলা বাজারে ডলারের দর বৃদ্ধি নিয়ে বলেন, সামপ্রতিক দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে ঘিরে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, তাতে একটি গোষ্ঠীর মধ্যে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। আবার অনেকে দেশে থাকলেও টাকা পরিবর্তন করে ডলার করে রাখছেন। এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ লোকই খোলাবাজার থেকে ডলার কিনছেন। কারণ, ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে গেলে তার জন্য নানা কাগজপত্র লাগে। কিন্তু খোলাবাজার থেকে সহজে টাকা দিয়ে ডলার কেনা যায়। এ পরিস্থিতিতে খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা বাড়লেও সে অনুযায়ী সরবরাহ নেই। এ কারণেই চাপ বেড়ে গেছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকও ডলারের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাজারে ডলার ছাড়ছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৫ মাসে (১লা জুলাই থেকে ২৮শে নভেম্বর) ৩০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে জুলাই মাসে বিক্রি করে ৩ কোটি ৬০ ডলার, আগস্টে ২ কোটি ৩০ লাখ ডলার। চাহিদা না থাকায় সেপ্টেম্বরে কোনো ডলার বিক্রি করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে চাহিদা বেড়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। সাধারণত ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে চাহিদা তৈরি হলে ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কাছে ২৩৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

https://www.mzamin.com/article.php?mzamin=201649