৩০ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, ১০:৩৭

হাওরে ডুবন্ত বাঁধ

দেড় কোটি টাকা বেশি প্রতিটির নির্মাণ খরচ

প্রস্তাবিত প্রকল্পে ব্যয় ৩.৭৫ কোটি টাকা ; চলমান প্রকল্পে ব্যয় ২.২০ কোটি টাকা

সমজাতীয় ও চলমান প্রকল্পের সাথে নতুন প্রস্তাবনার ব্যয়ের সামঞ্জস্য পাওয়া যাচ্ছে না। খরচের ব্যবধানও প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার মতো। কোনো কোনো প্রকল্পে এই ব্যয়ের ব্যবধান নিয়েও সমালোচনার তীব্্র ঝড় ওঠে। হাওর এলাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও নৌ চলাচলের সুবিধার্থে কজওয়ে বা ডুবন্ত বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখানে চলমান প্রকল্পের চেয়ে প্রতিটি কজওয়ের নির্মাণখরচ ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বেশি। প্রতি মিটারে সেøাপ প্রটেকশন কাজের ব্যয় ৪৫ হাজার টাকা বেশি বলে প্রকল্প প্রস্তাবনার তথ্য থেকে পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দেয়া প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জের হাওর অঞ্চলটি একটি বন্যাপ্রবণ নিম্নাঞ্চল। হাওর মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী সুনামগঞ্জে ৯৫টি, হবিগঞ্জে ১৪টি, নেত্রকোনায় ৩৭টি, কিশোরগঞ্জে ৯৭টি হাওর রয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক সুনামগঞ্জে ৩৭টি, হবিগঞ্জে তিনটি, নেত্রকোনায় ছয়টি এবং কিশোরগঞ্জে ১৬টি হাওরে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করা হয়। পাউবো চার জেলায় ৬২টি হাওরে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও নৌ চলাচলের সুবিধার জন্য কজওয়ে নির্মাণের প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে।

হাওর এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত ও সীমান্তবর্তী ভারতীয় অংশের (আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা) পাহাড়ি ঢলের সৃষ্টি হয়। এতে সৃষ্ট আগাম বন্যার সময় বিভিন্ন হাওরে নদী সংলগ্ন ডুবন্ত বাঁধসহ প্রবল ঢেউয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাওর। এতে প্রতি বছরই একই জায়গাতে বাঁধ নির্মাণ করতে হয়। বোরো ফসল আগাম বন্যার ঝুঁকির মধ্যে থেকে যায়। আবার পূর্ণ বর্ষায় হাওর এলাকায় নৌ-চলাচলের জন্য বাঁধের কোনো কোনো অংশে প্রতি বছরই বাঁধ কেটে দেয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এসব স্থানের স্থায়ী সমাধানের জন্য কজওয়ে বা ডুবন্ত বাঁধ নির্মাণ করা হলে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ নৌ চলাচলের সুবিধা হবে।

প্রস্তাবনার তথ্যানুযায়ী, ৯১৪ কোটি ৬২ লাখ ৪২ হাজার টাকা ব্যয়ে তিন বছরে বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রকল্প পরিচালনা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রস্তাবিত মেয়াদের এক বছর অতিক্রম হতে চলছে। প্রকল্প এখনো অনুমোদন পায়নি। প্রকল্পের প্রধান কাজ হলো ১৭৬টি কজওয়ে নির্মাণ, কজওয়ের প্রস্তাবিত ডুবন্ত সেøাপ প্রটেকশন নির্মাণ ১৭.৬০ কিলোমিটার, পানি শোধনাগার নির্মাণ সুনামগঞ্জে, আবাসিক ভবন নির্মাণ এবং ১৭৬টি কজওয়ের অপারেশন কাজ।

ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৭৬টি কজওয়ে ও ১৭.৬০ কিলোমিটার ডুবন্ত সেøাপ প্রটেকশন নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এখানে প্রতিটি কজওয়ের নির্মাণব্যয় ৩ কোটি ৭৫ লাখ ২২ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। সেখানে সমজাতীয় প্রকল্প, খালিয়াজুরী বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন প্রকল্প নেত্রকোনা এবং উপদাখালী প্রকল্প এই দুইটিতে ব্যয় প্রতিটিতে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা। এখানে ব্যয় পার্থক্য ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। একইভাবে প্রস্তাবিত ডুবন্ত সেøাপ প্রটেকশনের নির্মাণখরচ প্রতি মিটারে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু উল্লেখিত সমজাতীয় প্রকল্পে ব্যয় হয় মিটারে ৯০ হাজার ২০০ টাকা। এখানে পার্থক্য ৪৫ হাজার টাকা প্রতি মিটারে। এই ধরনের ব্যয় ব্যবধানের কারণে প্রকল্পের ব্যয়ও অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। ১৭৬টি কজওয়ে অপারেশনে ব্যয় হবে ২ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতিটির জন্য খরচ ১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, কজওয়ের প্রাক্কলন সিলেট পওর বিভাগ, পাউবো, সিলেট কর্তৃক ব্যবহৃত ও ডিজাইন সার্কেল-১ পাউবো দ্বারা অনুমোদিত। ‘হাওর এলাকায় বন্যাব্যবস্থাপনা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ডাকুয়ার হাওরের নকশা অনুসরণ করে প্রস্তুত করা হয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সেচ অনুবিভাগের কার্যপত্রে মতামত দিয়ে যুগ্ম প্রধান বলছেন, কজওয়ে অপারেশনে ব্যয় অনেক বেশি। তাই প্রকল্প চলাকালীন সময়ে এই অপারেশন ব্যয় রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। এটাকে বাদ দিতে হবে। প্রকল্প সমাপ্তির পর কজওয়ে অপারেশন বাবদ রাজস্ব বাজেটের আওতায় অর্থের সংস্থান রাখা যেতে পারে। একান্ত প্রয়োজন না হলে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ভার্টিক্যাল এক্সটেনশন কাজ বাদ দেয়া যেতে পারে। এখানে প্রকল্পে রেটশিডিউলের উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি কোনো সালের রেটশিডিউল দ্বারা প্রকল্পটির ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে তাও উল্লেখ করা হয়নি।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/460349/