২৭ নভেম্বর ২০১৯, বুধবার, ৬:৩২

অস্থিরতা কাটছে না পেঁয়াজের বাজারে

বিমানে করে বিদেশ থেকে আমদানির পরও পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা কাটছে না। দাম কমার পরিবর্তে আরো বাড়ছে। দেশী পেঁয়াজের দাম গতকাল বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা। খুচরা বাজারে গতকাল দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২৬০ থেকে ১৭০ টাকা। দুই দিন আগে এ দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৪৯ টাকা। খুচরা বাজারে গতকাল আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। আগের দিন এ দাম ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। পাইকারি বাজারে বিক্রি তুলনামূলক কম হলেও দামে কোনো কমতি নেই। বিক্রেতাদের দাবি, দেশী পেঁয়াজ বর্তমানে নেই বললেই চলে। আর বিদেশী পেঁয়াজ যে পরিমাণে আমদানি হচ্ছে চাহিদা তার চেয়ে অনেক বেশি। এ কারণে দাম কমছে না। এরই মধ্যে এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমছে না। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ বাধ্য হয়ে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, বিমানে করে পাকিস্তান থেকে যে পেঁয়াজ এসেছে সেগুলো বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে আগে থেকে দেশে থাকা পেঁয়াজের দামও কমছে না। তবে আমদানি করা পেঁয়াজ আরও বেশি পরিমাণে আসার পর দাম কমবে বলে আশা করছেন তারা। তা ছাড়া বাজারে নতুন গাছপেঁয়াজের সরবরাহও দিন দিন বাড়ছে। দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর নতুন দেশী পেঁয়াজও বাজারে চলে আসবে। তখন দাম অবশ্যই কমবে। এ সময়টায় বাজারে এক ধরণের অস্থিরতা বিরাজ করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে গত সোমবার এক দিনেই টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছেছে মিয়ানমার থেকে এক হাজার ১০৩ কেজি পেঁয়াজ এসেছে। টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা মো: আবছার উদ্দিন বলেন এক মেট্রিক টন (প্রায় ৩০ হাজার মণ) পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজগুলো টেকনাফ স্থলবন্দরে খালাস হওয়ার পর ট্রাক ভর্তি করে সেগুলো চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ আড়তে নিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা। সেখান থেকে একাধিক হাত বদলে দেশের বিভিন্ন স্থানে পেঁয়াজ সরবরাহ হচ্ছে। এখনও বন্দরে এক হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ নিয়ে খালাসের অপেক্ষায় ট্রলারগুলো নোঙর করা আছে। পাশাপাশি, মিয়ানমার থেকে আরও কয়েক শ’ মেট্রিক টন পেঁয়াজ ভর্তি একাধিক ট্রলার স্থলবন্দরের পথে রওনা দিয়েছে। বন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মো: হাশেমের দাবি, ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারের পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। তাই বাড়তি দামে পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে। তবে পেঁয়াজের দাম কমাতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।

নেত্রকোনা থেকে আমাদের সংবাদাদাতা জানান, সরকারের সকল উদ্যোগ ভেঙে যাওয়ায় আবারো পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। ফলে নেত্রকোনায় ক্রেতা সাধারণের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিককালে ভারত সরকার কর্তৃক বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে ৩০ টাকা মূল্যের পেঁয়াজ লাফিয়ে লাফিয়ে ২৬০-৮০ কেজি দরে বিক্রি হতে থাকে। এতে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সরকারের টনক নড়তে শুরু করে। সরকারের বিভিন্ন দফতরে দৌড়ঝাঁপ শুরু হওয়ার পর পেঁয়াজ আমদানিতে নানান উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিছুটা বিলম্ব হলেও বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হলে ক্রমশ ১৫০-৬০ টাকা কেজি মূল্যে নেমে আসে। চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পেঁয়াজ না আসায় এক লাফে আবারো পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকায় গিয়ে ওঠে। গতকাল মঙ্গলবার কাঁচা বাজারে এই দামেই বিক্রি হতে দেখা যায়। আমদানির পর পেঁয়াজের মূল্য কিছুটা কমে আসায় ক্রেতা সাধারণ আশান্বিত হয়ে উঠতে শুরু করলেও পেঁয়াজের তেলেসমাতিতে নারী-পুরুষ আবারো হতাশ হয়ে পড়ে। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অ্যাডভোকেট আব্দুল আওয়াল সেলিম বলেন, নিত্যপণ্য সাধারণ পেঁয়াজের মূল্য যে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না তারা ক্ষমতায় থাকার নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছে। নেত্রকোনা পৌর এলাকার অজহর রোড, মালনী রোড ও শিবগঞ্জ এলাকার গৃহিণী নিলুফার চৌধুরী, পেয়ারা বেগম ও সবিতা রাণী সরকার বলেন, আমরা এখন পেঁয়াজ ছাড়াই রান্নার প্রাক্টিস করছি। হয়তো এক সময় সফল হয়ে যাবো তখন হয়তো আর পেঁয়াজের প্রয়োজন হবে না।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/459602/