১৯ নভেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৮:০৫

১১ জেলায় আচমকা পরিবহন ধর্মঘট

নতুন সড়ক আইন সংশোধনের দাবি আদায়ে পুরনো কৌশল

নতুন সড়ক আইন সংশোধন না করার প্রতিবাদে সোমবার দেশের কয়েক জেলায় ঘোষণা ছাড়াই গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। ফলে ১১ জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলাচল করেনি।

হঠাৎ গাড়ি বন্ধে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে রোগী, বৃদ্ধ ও নারী-শিশুরা বেশি ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। পণ্য পরিবহনে অশেষ দুর্ভোগ পোহাতে হয় ব্যবসায়ীদের।

এ সুযোগে অটোরিকশাসহ ছোট গাড়িগুলোতে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে। আইনটি কার্যকরের দ্বিতীয় দিন খোদ রাজধানীতেও গাড়ি চলাচল ছিল কম।

দাবি আদায়ে আজ মঙ্গলবার সারা দেশে পণ্যবাহী গাড়ি ধর্মঘট কর্মসূচির ডাক দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

নতুন সড়ক আইন সংশোধনের দাবি আদায়ে সারা দেশে এমন অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। ঘোষণা না দিয়ে হঠাৎ গাড়ি বন্ধ করে দেয়ার ছক সাজানো হচ্ছে।

এতেও কাজ না হলে ঘোষণা দিয়েই তারা নামতে পারেন বলে জানা গেছে। যাত্রীদের জিম্মি করে এবারও দাবি আদায়ের সেই পুরনো কৌশলই তারা বেছে নিয়েছেন। তবে এসব ঘটনার দায় নিতে রাজি নন পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা।

প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, খুলনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরা, শেরপুর, রাজশাহী ও সিলেট জেলায় অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট চলছে।

এসব জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে বাস চলাচল বন্ধ। দুর্ভোগের সুযোগ নিয়ে অন্য পরিবহনগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে কয়েকগুণ ভাড়া আদায় করছে। হঠাৎ শ্রমিকদের এই কাণ্ডে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ।

তারা বলছেন, সাধারণ মানুষ ও সরকারকে জিম্মি করে শ্রমিকরা দাবি আদায় করতে চাইছেন। ধর্মঘটকারী শ্রমিকরা জানান, নতুন আইনে সাজার ভয়ে তারা গাড়ি চালাচ্ছেন না। এ আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট প্রত্যাহার হবে না।

এদিকে সোমবার প্রথমবারের মতো নতুন সড়ক আইনে মামলা করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ৮টি মোবাইল কোর্ট।

রাজধানীর কাকলী, মানিক মিয়া এভিনিউ, উত্তরা-দিয়াবাড়ী, মিরপুর, রায়েরবাগ, সায়েদাবাদ, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় মোবাইল কোর্ট ৮৮টি মামলা ও ১ লাখ ২১ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করেছে।

২টি গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠিয়েছে। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশ নতুন আইনে কোনো মামলা করেনি।

পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইন প্রয়োগে তারা এখনও প্রস্তুত নন। তবে তারা সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছেন।

হঠাৎ করেই কয়েকটি জেলায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ যুগান্তরকে বলেন, নতুন আইন কার্যক্রম করা হচ্ছে।

কিন্তু যেসব জেলায় গাড়ি বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে সেখানে কাউকে নতুন আইনে জরিমানা বা ৩০২ ধারায় মামলাও করা হয়নি। তবে শ্রমিকরা বলছেন, তারা এত কঠিন সাজা মাথায় নিয়ে গাড়ি চালাতে পারবেন না।

যাত্রী জিম্মি করে আইন সংশোধনের চাপ সৃষ্টি করা লক্ষ্য কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা বলতে পারব না। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো খতিয়ে দেখতে পারে।

বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী দাবি করেন, কেন্দ্রীয় কোনো নির্দেশনায় শ্রমিকরা গাড়ি চলাচল বন্ধ করেনি।

নতুন আইনে দুর্ঘটনার মামলা জামিন অযোগ্য বিধান রাখাসহ কয়েকটি ধারা নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। তারা ফাঁসির বিধান মাথায় নিয়ে গাড়ি চালাতে চায় না।

তাই হয়তো গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। নতুন পরিবহন আইন বাস্তবায়ন শুরু হলেও সর্বনিম্ন সাজা দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএর পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) একেএম মাসুদুর রহমান।

যুগান্তরকে তিনি বলেন, রোববার সড়ক পরিবহন আইন মোবাইল কোর্টের তফসিলভুক্ত হয়েছে। এরপর সোমবার প্রথম মোবাইল কোর্ট বসে। এসব কোর্ট নতুন আইনে মামলা করেছে।

আমরা খুব সামান্য জরিমানা করেছি। গাড়ি কম চলাচল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকায় গাড়ি কম চলার কারণ হচ্ছে অনেকের উপযুক্ত কাগজপত্র নেই।

এসব গাড়ি রাস্তায় চলুক আমরা তা চাই না। সারা দেশে গাড়ি বন্ধ করার পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএর পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়। তারা বিষয়টি দেখছেন।

১ নভেম্বর নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করে সরকার। তবে নতুন আইনে মামলা ও শাস্তি দেয়ার কার্যক্রম মৌখিকভাবে দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।

গত বৃহস্পতিবার সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে। রোববার সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ওইদিন থেকেই আইন কার্যকর শুরু হয়েছে। তবে মাঠে মোবাইল কোর্ট নেমেছে সোমবার।

এদিন আইন প্রয়োগের নামে বাড়াবাড়ি না করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।

সরেজমিন রাজধানীর পল্টন, ফার্মগেট, জাহাঙ্গীর গেট, কারওয়ান বাজার, কাকরাইল, নতুন বাজার এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগের খবরে রাস্তা থেকে উধাও হয়েছে অনেক পরিবহন।

ট্রাফিক সংশ্লিষ্টরা জানান, যেসব গাড়ির কাগজপত্র এবং ফিটনেসে সমস্যা রয়েছে সেসব গাড়ি ভয়ে রাস্তায় নামেনি। এতে অন্যদিনের তুলনায় রাস্তা ফাঁকা ছিল। তবে গাড়ি কম থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

গুলিস্তান থেকে উত্তরাগামী ভিক্টর ক্লাসিক গাড়ির যাত্রী ওমর আলাউদ্দিন জানান, সোমবার রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

তিনি জানান, প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর কাকরাইল থেকে গন্তব্যের উদ্দেশে গাড়িতে উঠেছি। তিনি আরও জানান, পরিবহন সংকটের কারণে এ ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের এডিসি (অ্যাডমিন অ্যান্ড অপারেশন) যুগান্তরকে বলেন, রাজধানীতে এখন পর্যন্ত নতুন সড়ক পরিবহন আইনে কোনো মামলা করেনি ট্রাফিক পুলিশ।

তিনি আরও বলেন, আমরা মোটিভেশনাল পর্যায়ে রয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য মামলা নয়, আইন মানা। পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, সর্বস্তরের জনগণকে এ আইন সম্পর্কে ধারণা দিতে বৃহস্পতিবার রাজারবাগে একটি ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান করা হবে।

সেখানে এ আইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হবে।

বিভিন্ন জেলায় বাস ধর্মঘট নিয়ে ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

খুলনা : ঈগল পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি পরিবহনের বাস সোমবার ভোরে খুলনা মহানগরীর রয়্যাল কাউন্টার থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তবে ৯টার পর থেকে সব বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সেখানকার শ্রমিক নেতারা বলছেন, দুর্ঘটনার মামলা জামিনযোগ্যসহ সড়ক আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধন চান চালকরা।

আইন সংশোধনের পরই এটি কার্যকর করা হোক। এটা না করা পর্যন্ত আমাদের এ কর্মসূচি চলবে। তারা বলেন, সরকারের বিভিন্ন দফতরে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও আইনটি সংশোধন ছাড়াই বস্তবায়নের ঘোষণা দেয়া হয়। এতে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

এ কারণে খুলনায় সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ২১ ও ২২ নভেম্বর শ্রমিক ফেডারেশন বর্ধিত সভা ডেকেছে। ওই সভার এজেন্ডাগুলোর মধ্যে এক নম্বরে আছে সড়ক পরিবহন আইন সম্পর্কে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল ইসলাম বেবী বলেন, ‘কোনো কারণে দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে নতুন আইনে চালকদের মৃত্যুদণ্ড এবং আহত হলে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। আমাদের এত টাকা দেয়ার সামর্থ্য নেই এবং বাস চালিয়ে আমরা জেলখানায় যেতে চাই না।’

খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন সোনা বলেন, শ্রমিকরা ফাঁসি ও যাবজ্জীবন দণ্ডের ভয়ে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিচ্ছে। আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই তারা এসব করছে।

চুয়াডাঙ্গা : জেলা শহর থেকে অভ্যন্তরীণ বা দূরপাল্লার কোনো পরিবহন ছেড়ে যায়নি। যদিও শ্রমিক নেতারা বলছেন, তারা কোনো ধর্মঘটের ডাক দেননি।

এমনিতেই বিক্ষিপ্তভাবে শ্রমিকরা পরিবহন চালানো থেকে বিরত রয়েছেন। এদিকে ধর্মঘটের কারণে সাধার মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।

হয়রানির শিকার হচ্ছেন জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াতকারীরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষ শ্যালোইঞ্জিন চালিত অবৈধ পরিবহনে যাতায়াত করছে।

মেহেরপুর : মেহেরপুরের আন্তঃসড়কে ও দূরপাল্লার রুটে সোমবার সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগ ও হয়রানির মধ্যে পড়েছেন যাত্রীরা।

মুজিবনগর উপজেলার যতারপুর গ্রামের প্রকৌশলী রয়েল শেখ ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশে মেহেরপুর থেকে ‘রয়েল পরিবহনে’ বেলা ৩টার টিকিট কিনেছিলেন।

দুপুর ২টায় তাকে জানানো হয় যাত্রীবাহী বাস ধর্মঘটের কথা। রয়েল শেখ জানান, পূর্ব ঘোষণা দিয়ে বাস ধর্মঘট হলে তিনি বিকল্প মাধ্যমে চাকরিস্থলে যেতে পারতেন।

মেহেরপুর জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলাম জানান, সড়ক পরিবহনের নতুন আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট প্রত্যাহার হবে না।

নড়াইল : জেলার ৮টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। চলছে না দূরপাল্লার বাসও। রোববার সন্ধ্যা থেকে এ জেলায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছাদেক আহম্মেদ খান জানান, বাস বন্ধ রাখার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

চালক-শ্রমিকরা নতুন পরিবহন আইনের ভয়ে বাস চালানো বন্ধ রেখেছেন।

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) : কালীগঞ্জের সঙ্গে খুলনা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। গন্তব্যে পৌঁছাতে যাত্রীরা মাহেন্দ্র, শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নসিমন বা ইজিবাইক ব্যবহার করছেন। এগুলো ভাড়া নিচ্ছে কয়েকগুণ।

উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) : উল্লাপাড়ার বিভিন্ন রুটে যানবাহন চলাচল একেবারে কম। এতে যাত্রীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। এ সুযোগে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ। উল্লাপাড়া থেকে ঢাকার দূরপাল্লার বাসের ভাড়া সাড়ে ৩শ’ টাকা।

কিন্তু নেয়া হচ্ছে পাঁচশ’ টাকা। হাটিকুমরুল গোলচত্বর থেকে সিরাজগঞ্জের ভাড়া ১৫ টাকা। কিন্তু নেয়া হচ্ছে ৩০ টাকা।

শেরপুর : শেরপুর জেলা শহরের সঙ্গে ঢাকাসহ সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সুজিত কুমার ঘোষ এবং শেরপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান বলেন, বাস চালক-শ্রমিকরা নতুন পরিবহন আইনের ভয়ে স্বেচ্ছায় ঢাকাসহ সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। এ ব্যাপারে সংগঠন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সাতক্ষীরা বাস টার্মিনাল থেকে গাড়ি না ছাড়ায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রী সাধারণ। তারা বিকল্প যানবাহনে গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করেন।

জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ জানান, শ্রমিকরা নিজেরাই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মালিক সমিতি এ বিষয়ে অবহিত নয়।

যশোর : যশোর অঞ্চলের ১৮ রুটে পরিবহন ধর্মঘট চলছে। রোববার দিনব্যাপী অচলাবস্থার পর রাতে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিক নেতারা বৈঠকে বসেন। তারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের আশ্বাস দিলেও সোমবার তা বাস্তবায়ন হয়নি।

এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। দূর-দূরান্তে যাতায়াতে সাধারণ মানুষের ভরসা এখন ট্রেন। যশোর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের এখন উপচে পড়া ভিড়। যাত্রীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্টেশন কর্মকর্তারা।

যাত্রীর বলছেন, ‘সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না।’

যশোরের পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, রোববার রাতে বৈঠকে শ্রমিক নেতারা আশ্বাস দিয়েছিলেন সোমবার পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করবে। কিন্তু এখানে শ্রমিক কিংবা বাস মালিক সংগঠন নয়, শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি পালন করছেন।

ফলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না শ্রমিক সংগঠনগুলো। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।

বেনাপোল : বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় সোমবার বেনাপোল বন্দর থেকে কোনো মালামাল লোড-আনলোড ও খালাস হয়নি। ফলে শত শত খালি ট্রাক পণ্য লোড করার জন্য বন্দরের সামনে অবস্থান করছে।

বেনাপোল-যশোর ও যশোর-সাতক্ষীরার অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল না করলেও কার, মাইক্রোবাস, ইজিবাইক, মাহেন্দ্র, নসিমন-করিমন জাতীয় ছোট যানবাহন এবং অযান্ত্রিক গাড়ি চলাচল করছে।

রাজশাহী : রাজশাহীর সঙ্গে বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিকরা। সোমবার সকালে নগরীর শিরোইল ও নওদাপাড়া বাস টার্মিনালের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।

জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলছেন, এটা ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ডাকা কোনো ধর্মঘট নয়। নতুন সড়ক আইনের ভয়ে শ্রমিকরা নিজেরাই বাস বন্ধ রেখেছেন।

সিলেট : সিলেট-গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ সড়কে বিআরটিসি বাস চলাচল বন্ধের দাবিতে বাস ধর্মঘট শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল ৬টা থেকে কোম্পানীগঞ্জ-গোয়াইনঘাট-হাদারপাড় বাস-মিনিবাস সমিতির ডাকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলছে।

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে বলে জানিয়েছেন সমিতির সভাপতি রিমাদ আহমদ রুবেল।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/245494/