১৭ নভেম্বর ২০১৯, রবিবার, ১২:২১

সিন্ডিকেটের পকেটে ১৫০০ কোটি টাকা: পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি

চক্রের নায়করা সব সময় অধরা * রাজধানীতে সর্বোচ্চ ২৬০ ও বাইরে সর্বোচ্চ ২৮০ টাকা কেজি * জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে -ড. মির্জ্জা আজিজ

সিন্ডিকেটের কারসাজিতে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রতিদিনই বাড়ানো হচ্ছে এর দাম। দুই মাস ধরে এ অবস্থা চলছে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ছিল ৩০ থেকে ৩৩ টাকা।

ভারত পেঁয়াজের রফতানি মূল্য বাড়ানোর ফলে এর দাম আরও বেড়ে ৭০ টাকায় ওঠে। তবে অন্য দেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি কেজির খরচ পড়েছে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা। ওইসব পেঁয়াজ এই দুই মাসে বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা দরে। এভাবে বাড়তি মুনাফা করে সিন্ডিকেটের সদস্যরা গত দুই মাসে কমপক্ষে দেড় হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ভোক্তার পকেট থেকে।

এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে আমদানিকারক, খুচরা ব্যবসায়ী ও কতিপয় প্রভাবশালী জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবি তোলা হলেও অদ্যাবধি কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অতীতেও এসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা সব সময়ই থেকেছেন অধরা। এ অবস্থায় শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে শনিবার দেশের বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও এক দফা বেড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। যা শুক্রবার ছিল ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। একইদিন পাইকারি বাজারে প্রতি কেজির দাম ছিল গড়ে ২৫২ টাকা। আগের দিন ছিল ২৪০ টাকা। তবে রাজধানীর বাইরে কোথাও কোথাও খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা দরেও বিক্রি হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী আশঙ্কা করেছেন, এর দাম আরও বাড়বে।

কেননা পাইকারি বাজারে চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ মিলছে না। ফলে খুচরা বাজারে দাম বেড়েই চলেছে। এদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় প্রশাসন থেকে পেঁয়াজের পাইকারি বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এতে দোকানে পেঁয়াজের মূল্য না টানানো এবং টানানো মূল্যের চেয়ে বেশি দাম রাখায় জরিমানা করা হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে এ অভিযান চালানো হয়। চুয়াডাঙ্গায় অভিযানের সময় পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটকে অবরুদ্ধ করে ব্যবসায়ীরা। মারধর করে সাংবাদিকদের। কুষ্টিয়ায় অভিযান চালানোর সময় পেঁয়াজের দাম এক লাফে কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কমে যায়। এছাড়া টিসিবির ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রয় কেন্দ্রে ক্রেতারা দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে পণ্যটি ক্রয় করেছেন অনেকে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত জুলাই-আগস্টের শুরুতে প্রতি কেজির দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। এর পর থেকেই এর দাম বাড়তে থাকে। গত ১২ সেপ্টেম্বর দেশের বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৫০-৫৫ টাকা কেজি। ভারত ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজের রফতানি মূল্য বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার করার পর এর দাম হু-হু করে বেড়ে যায়। এই খবরে সেদিন দেশের খুচরা বাজারে ২৫-৩০ টাকা বাড়িয়ে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৮০ টাকা। এই দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করলে এর দাম আরও লাফিয়ে বাড়তে থাকে। দাম বেড়ে ওঠে ১২০ টাকা কেজি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা থাকে ২৪ লাখ টন। সে হিসেবে এক মাসের চাহিদা ২ লাখ টন। একদিনে চাহিদা ৬ হাজার ৬৬৬ টন। এ হিসাবে একদিনে ৩০ টাকা বাড়ানো হলে ১১ দিনে ভোক্তার পকেট থেকে কাটা হয়েছে ২১৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

২৪ সেপ্টেম্বর সংকটের কথা জানিয়ে নতুন করে ৫ টাকা বাড়িয়ে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৮৫ টাকায়। যা দুই দিন ধরে বিক্রি হয়। এ দুই দিনে ভোক্তার পকেট থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে অতিরিক্ত ৪৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এরপর ২৬ সেপ্টেম্বর আরও ৫ টাকা বাড়িয়ে ৯০ টাকা বিক্রি করে শুরু করে সিন্ডিকেট। ২৯ সেপ্টেম্বর বিকাল পর্যন্ত ওই দরে বিক্রি করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক বিক্রির হিসাব অনুযায়ী এ সময়ে প্রায় ২৬ হাজার ৫০০ টন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ওই দরে। এতে ভোক্তার পকেট থেকে সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে ১০৬ কোটি টাকা।

ভারত থেকে আমদানি বন্ধের অজুহাতে ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় এক লাফে পেঁয়াজের দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বাড়িয়ে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি করা হয়। মঙ্গলবার পর্যন্ত সেটি অব্যাহত ছিল। আরও দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ওই সময়ে ভোক্তারা সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ কিনেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সময়ে দৈনিক গড়ে প্রায় ৮ হাজার টন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। মঙ্গলবার এক নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিনে এতে ভোক্তার পকেট থেকে অতিরিক্ত কেটে নেয়া হয়েছে ১৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ চার ধাপে ভোক্তার পকেট থেকে ন্যূনতম ৫৭২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।
এর পর দুই নভেম্বর কেজিতে ১০-১৫ টাকা কমে পেঁয়াজের দর হয় ১১০-১২০ টাকা। যা ৮ নভেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। দাম কমার পরও সিন্ডিকেট কেজিতে ৬০-৭০ টাকা অতি মুনাফা করে। সে অনুযায়ী এই সাত দিন ভোক্তার পকেট থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় ৩২৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ৯ নভেম্বর কেজিতে ১০ টাকা কমে পেঁয়াজের দর হয় ১০০-১১০ টাকা। যা ১২ নভেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। দাম কমার পরও সিন্ডিকেট কেজিতে ৫০-৫৫ টাকা অতি মুনাফা করে। সে অনুযায়ী এই চার দিন ভোক্তার পকেট থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় আরও ১৪৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। তীব্র সংকটের কথা বলে ১৩ নভেম্বর এক লাফে পেঁয়াজের দর কেজিতে বেড়ে দাঁড়ায় ১৫০-১৬০ টাকা। সে অনুযায়ী একদিনে ভোক্তার পকেট থেকে ৭৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। ১৪ নভেম্বর দিনের শুরুতে ১৬০-১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। যা দিন শেষে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজির দাম সর্বোচ্চ ২২০ টাকায় ওঠে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক বিক্রির হিসাব অনুযায়ী এ সময়ে ১১০ কোটি টাকা ভোক্তার পকেট থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়।

পরের দিন ১৫ নভেম্বর শুক্রবার আরও এক দফা বাড়ে পেঁয়াজের দাম। সেদিন প্রতি কেজি পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ২৫০ টাকা। যা শনিবার ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। সে অনুযায়ী এই দুই দিনে ভোক্তার পকেট থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ২৬৬ কেটি ৬৬ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে গত দুই মাসে আট ধাপে ১৪৯৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অসাধু চক্রটি।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তা স্বাভাবিক নয়। এটি এখন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তার মতে, পণ্যের দাম বাড়লে একজন আরেকজনের দোষ দেয়। তবে বিষয়টি নজরদারির দায়িত্ব সরকারের। কোনো ধরনের কারসাজি হলে তাদেরই চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। জানতে চাইলে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, পণ্যমূল্যের ওঠানামা বাজারের ধর্ম। তবে দাম যখন অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে তখন জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে। তাই এটা দূর করতে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। তারা একবার দাম বাড়ালে আর কমান না।

তার মতে, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের একাধিক সংস্থা রয়েছে। কিন্তু সেগুলো তেমন কার্যকর নেই। যার কারণে এখন পর্যন্ত সিন্ডিকেট ধরা যাচ্ছে না। দোষীরা শাস্তির আওতায় আসছে না। তাই দোষীদের শাস্তির আওতায় এনে বাজার নিয়ন্ত্রণ জরুরি।

এদিকে যেদিন থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে সেদিন থেকে বাণিজ্যমন্ত্রী ও বাণিজ্য সচিব একাধিকবার বলে আসছেন, দেশে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। যে বা যারা বিভিন্ন অজুহাতে দাম বাড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা কাউকেই ছাড় দেব না। বিভিন্ন জায়গায় অভিযান শুরু হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি সেল, ভোক্তা অধিকার অধিদফতর ও বিভিন্ন সংস্থা বাজার তদারকি শুরু করেছে। কয়েকদিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতায় চলে আসবে। কিন্তু এর পরও বাজার নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বরং এর দাম আরও বেড়েছে। ভোক্তাকে এখন এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ২৫০-২৮০ টাকায়।

শনিবার কারওয়ান বাজারে মনিটরিংকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নাজমুল হক যুগান্তরকে বলেন, দোষীদের ধরতে ও পেঁয়াজের দর নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা প্রতিদিন বাজার তদারকি করছি। কেউ কারসাজি করছে কিনা সেটা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। দোষীদের পেলে শাস্তির আওতায় আনছি।
একইদিনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রাজধানীর পেঁয়াজের পাইকারি আড়ত শ্যামবাজারে অভিযান পরিচালনাকালে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মন্ডল বলেন, মূল্য তালিকা না টানিয়ে কারসাজি করে বেশি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করার দায়ে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। টিসিবির বিক্রয় কেন্দ্রে দীর্ঘলাইন : রাজধানীর ৩৫টি স্থানে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ন্যায্যমূল্যে কেজিপ্রতি ৪৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। এসব স্থানে সাধারণ ক্রেতাদের দীর্ঘলাইন লক্ষ করা গেছে। ক্রেতারা চার-পাঁচ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কিনতে পেরেছেন মাত্র এক কেজি পেঁয়াজ। অনেকেই আবার পণ্যটি না পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন। রাজধানীর খামারবাড়ি স্থানে টিসিবির বিক্রয় কেন্দ্র থেকে পেঁয়াজ কিনতে আসা আমেনা বেগম বলেন, সকাল থেকে ৪ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে পেরেছি। তারা যদি দুই কেজি করেও পেঁয়াজ বিক্রি করত তাহলে ভালো হতো।

শনিবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। কয়েকদিন ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মির্জাপুরে বিভিন্ন আড়ত ও পাইকারি বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতেও দাম কমছে না। চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, পেঁয়াজ কারসাজির দায়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম ও টেকনাফের ১৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করে। পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে যাদের অভিহিত করে চট্টগ্রামে তারাই পেঁয়াজের দাম নিয়ে খেলছেন বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু তালিকা প্রকাশ করেই দায় সেরেছে প্রশাসন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার কারণেই তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। সিন্ডিকেট করে গত দেড়-দু’মাসে কেবল পেঁয়াজ বেচেই কোটি কোটি টাকা ভোক্তার পকেট থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ও টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে কমবেশি পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত থাকলেও দামের লাগাম টানা যাচ্ছে না কোনোমতেই। গত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৩৬ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে গত চার মাসে ৩৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত দেড় মাসে পেঁয়াজ আমদানির একটি চিত্র পাওয়া গেছে। বন্দর সচিব ওমর ফারুক শনিবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত দেড় মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ২৩৬ কনটেইনার (৪০ ফুট)। যাতে পেঁয়াজ ছিল ৬ হাজার ৭৩৩ টন। সব পেঁয়াজই জাহাজ থেকে এরই মধ্যে খালাস হয়েছে। তবে ডেলিভারি হয়েছে ২১৮ কনটেইনার। যার পরিমাণ ৬ হাজার ২০৪ টন। এছাড়া ১৩ নভেম্বর বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় ছিল আরও ৬ কনটেইনার (৪০) ফুট বা ১৬৮ টন পেঁয়াজ।

এছাড়া দুটি জাহাজে করে আগামী দু-একদিনের মধ্যে ১৮ কনটেইনারে ৫২০ টন পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছার কথা রয়েছে। মিসর, তুরস্ক ও চায়না থেকেই এসব পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, শনিবার পেঁয়াজের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজশাহীতে ওয়ার্কার্স পার্টি মানববন্ধন করেছে। নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচি থেকে বাজার মনিটরিং জোরদার করার দাবি করেন বক্তারা। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পেঁয়াজের সিন্ডিকেট সরকারের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে গেছে। পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পাল্লা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্য দ্রব্যগুলোরও দাম বাড়ছে। বক্তারা বলেন, কিছুদিন আগে রাজশাহীর বাজারে প্রশাসন লোক দেখানো অভিযান চালাল। কর্তৃপক্ষ বলেছে, ৬০ টাকার বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করলে গ্রেফতার করা হবে। শনিবার সাহেববাজারে ২৫০ এবং অন্য স্থানগুলোতে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। মন চাইলেই পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে সরকারের বদনাম হচ্ছে। মানুষের মনে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তাই আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানাই।

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি জানান, পেঁয়াজের কেজি ২২০ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে নতুন পেঁয়াজপাতা বিক্রি হচ্ছে ৫ কেজির পাল্লা সাড়ে ৩০০ টাকায়। পুরনো পেঁয়াজের বেশ মুজদ রয়েছে। পাশাপাশি নতুন পেঁয়াজপাতাসহ পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে ব্যাপকভাবে। তারপরও কমেনি দাম। বরং দুই দিন আগে ২০০ টাকা বিক্রি হলেও শনিবার বিক্রি হয়েছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা দরে। এর সঙ্গে নতুন মৌসুমের পাতাওয়ালা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি। প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) ৩৫০ টাকায়।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/244615/