১৩ নভেম্বর ২০১৯, বুধবার, ৭:৪৭

মন্দবাগে দুই ট্রেনের সংঘর্ষে নিহত ১৬

চালকের ভুলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা

তূর্ণা নিশীথার চালকসহ বরখাস্ত ৩ পাঁচটি তদন্ত কমিটি * ৮ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু * নিহতদের পরিবারকে এক লাখ, আহতদের ১০ হাজার টাকা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় দুই ট্রেনের সংঘর্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে ১০ এবং হাসপাতালে নেয়ার পর ছয়জনের মৃত্যু হয়। আহত হয়েছেন ৭৪ জন। সোমবার রাত পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের লুপলাইনের মুখে আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ও তূর্ণা নিশীথার মধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

এতে তূর্ণা নিশীথার একাধিক বগি উদয়নের কয়েকটি কামরার ওপর উঠে যায়। এর মধ্যে দুটির ভেতরে ঢুকে পড়ে তূর্ণার ইঞ্জিনটি। এতে বগি দুটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এ কামরার ঘুমন্ত যাত্রীরাই বেশি হতাহত হয়েছেন। চার শিশুসহ অনেকেই ঘুম থেকে চলে গেছেন চিরঘুমের অচেনা জগতে।

যাত্রীদের চিৎকার ও আহতদের কাতর ধ্বনিতে মন্দবাগের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে ভোরের আলো ফুটতে থাকলে স্বজনরা আসতে থাকেন ঘটনাস্থলে। বাড়তে থাকে চাপ, সেই সঙ্গে উদ্বেগাকুল আত্মীয়-পরিজনের আহাজারি। হাসপাতাল এবং ঘটনাস্থলে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।

মন্দবাগ রেলস্টেশনের মাস্টার জাকির হোসেন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, আউটার ও হোম সিগন্যালে লালবাতি (সতর্ক সংকেত) দেয়া ছিল। কিন্তু তূর্ণা নিশীথার চালক সিগন্যাল অমান্য করে ঢুকে পড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

এদিকে দুর্ঘটনার পর গভীর রাতেই যাত্রীরা স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। পরে রেল কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসন এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তিনটি ইউনিট আর পুলিশ সদস্যরা যোগ দেন।

অধিকাংশ আহত যাত্রীকে তাৎক্ষণিকভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লাসহ আশপাশের হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসকরা গুরুতর আহতদের কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগেই ১৬টি লাশই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে দুর্ঘটনার জন্য তূর্ণা নিশীথার চালকের গাফিলতি চিহ্নিত করা হয়। তার ভুলের কারণেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে রেল কর্তৃপক্ষ মনে করছে। এর দায়ে তূর্ণা নিশীথার চালকসহ তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অপর দু’জন হলেন সহকারী চালক এবং গার্ড।

পাশাপাশি দুর্ঘটনা তদন্তে রেলের পক্ষ থেকে চারটি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটিসহ মোট ৫টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় আট ঘণ্টা পর রুট দুটিতে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।

ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এ ধরনের দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য সংশ্লিষ্টদের সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

রেলপথ মন্ত্রণালয় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ এবং আহতদের ১০ হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাশ দাফনে সহযোগিতার জন্য প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়।

রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিয়া জাহান জানান, সিলেট থেকে ছেড়ে আসা উদয়ন এক্সপ্রেস চট্টগ্রামে যাচ্ছিল। অপরদিকে তূর্ণা নিশীথা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসছিল। মন্দবাগে দুই ট্রেনের ক্রসিং হওয়ার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সিগন্যাল পেয়ে মেইন লাইন থেকে উদয়ন লুপলাইনে প্রবেশ করে।

এর নয়টি বগি লুপলাইনে চলে গেলেও দশম বগিতে আঘাত করে তূর্ণা নিশীথা। এতে তূর্ণা নিশীথার একাধিক বগি উদয়নের কয়েকটি বগির ওপর উঠে যায়। এর মধ্যে দুটি বগি ভীষণভাবে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। মন্দবাগ রেলস্টেশনের মাস্টার জানান, তূর্ণা নিশীথার চালক সিগন্যাল অমান্য করে ঢুকে পড়াতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে ১০ জন এবং বিভিন্ন হাসপাতালে ছয়জনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনাস্থলের কাছে বায়েক শিক্ষা সদন উচ্চ বিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পে ১০ জনের লাশ রাখা হয়েছে।

এছাড়া কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে দু’জন এবং কুমিল্লা সদর হাসপাতালে একজনের মৃতদেহ রয়েছে। আহত অর্ধশতাধিক যাত্রীকে কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নিহতদের পরিচয় : পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের সদস্যরা নিহতদের হাতের আঙুলের ছাপ নিয়ে পরিচয় পেয়েছেন। তারা হলেন- হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের পিয়ারা বেগম (৩২), তিরেরগাঁওয়ের সুজন আহমেদ (২৪), বানিয়াচংয়ের আল-আমিন (৩০) ও আদিবা সোহা (২), আনোয়ারপুরের আলী মোহাম্মদ ইউসুফ (৩২), ভোল্লার ইয়াছিন আরাফাত (১২) ও রিপন মিয়া (২৫), চাঁদপুর সদরের ফারজানা (১৫), হাজীগঞ্জের পশ্চিম রাজারগাঁওয়ের মুজিবুর রহমান (৫৫), কুলসুম বেগম (৩০), হাইমচরের মরিয়ম (৪) ও কাকলী (২০), উত্তর বালিয়ার ফারজানা (১৫), মৌলভীবাজারের জাহেদা খাতুন (৩০), ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সোহামনি (৩), নোয়াখালীর মাইজদীর রবি হরিজন (২৩)। লাশগুলো আত্মীয়স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি : ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহ আলম জানান, এ দুর্ঘটনায় পাঁচটি মেডিকেল টিম কাজ করছে। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ৩৯ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা কসবা ও আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং কুমিল্লা সদর হাসপাতালে আছেন। তাদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন। আহতদের মধ্যে তিনজনকে ঢাকায় ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মুন্না মিয়া (২০), মির্জা সাইফুদ্দিন সৈকতকে (২৮) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। সোমা আক্তার সুমিকে (২১) পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার মহলুল সুনাম গ্রামের ওমর আলীর ছেলে আহত মুন্না মিয়া (২০) পেশায় গ্রিলমিস্ত্রি। বন্ধুদের সঙ্গে উদয়ন ট্রেনে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে তিনি দুর্ঘটনার শিকার হন। প্রথমে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে স্বজনরা তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।

তার ডান পা ভেঙে গেছে। বেগমগঞ্জের দুর্গাপুর গ্রামের শহিদুল্লাহর ছেলে আহত মীর্জা সাইফুদ্দিন সৈকত (২৮) চাকরির খোঁজে সিলেটে এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলেন। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন। তার মাথা, মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত রয়েছে।

শ্রীমঙ্গলের গাজীপুর গ্রামের মুসলিম মিয়ার মেয়ে সোমা আক্তার সুমি (২১) চট্টগ্রাম ভাটিয়ারীতে থাকেন। বৃহস্পতিবার তার বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর সংবাদ শুনে তিনি গ্রামের বাড়িতে আসেন। পরিবারের ছয়জন শ্রীমঙ্গল থেকে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন।

পথে দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। ঘটনাস্থলে তার মা জাহেদা বেগম (৪৫) মারা যান। আহত ১৩ জনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (কুমেক) ভর্তি করা হয়। কুমেকের চিকিৎসক ডা. আবুল হাসান সৈকত জানান, কসবায় ট্রেন দুর্ঘটনায় সাতজন পুরুষ, পাঁচ নারী ও এক শিশু এ হাসপাতালে ভর্তি হয়। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ১০ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আর বাকি জাহাঙ্গীর, কাউছার, সোবহান নামে তিনজন কুমেকে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। রেলওয়ে সচিব মোহাম্মদ মোফাজ্জল করিম, জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান, পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, ৬০ বিজিবি সুলতানপুর ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন।

৮ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল আবার শুরু : ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে প্রায় আট ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানান, দুর্ঘটনাকবলিত বগিগুলো সরিয়ে মূল লাইন মেরামতের পর সকাল সোয়া ১০টার দিকে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা হয়। বেলা পৌনে ১১টায় ট্রেন চলাচল আবার শুরু হয়েছে।

রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়া জাহান জানান, দুটি ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামের সঙ্গে সিলেট ও ঢাকার রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ঘটনার পরপরই লাকসাম ও আখাউড়া থেকে দুটি রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে।

উদয়ন এক্সপ্রেস সামনের দিকের অক্ষত নয়টি বগি নিয়ে বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রামে পৌঁছায়। আর মূল লাইন মেরামত শেষে বেলা পৌনে ১১টার দিকে তূর্ণা নিশীথা ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তিনি বলেন, তূর্ণা নিশীথার ইঞ্জিন সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বগিতে তেমন ক্ষতি হয়নি।

আরেকটি ইঞ্জিন লাগিয়ে ট্রেনটি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। এ দুর্ঘটনার ফলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ও সিলেটের পথে বেশ কয়েকটি ট্রেনের যাত্রা বিলম্বিত হয়। ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস সকাল ৭টায় নির্ধারিত সময়ে চট্টগ্রাম ছেড়ে গেলেও রাস্তায় আটকে থাকে দীর্ঘ সময়।

চট্টগ্রাম থেকে অন্য সব ট্রেনের সময়সূচি পিছিয়ে দেয়া হয়। পূর্ব রেলের ডিভিশনাল কমার্শিয়াল অফিসার (ডিসিও) আনসার হোসেন জানান, আন্তঃনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় সিলেটের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ছাড়েনি।

সাড়ে ১২টার মহানগর এক্সপ্রেসের যাত্রাও পিছিয়ে দেয়া হয়। তবে ঢাকাগামী মেইল ট্রেন কর্ণফুলী এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম ছেড়ে গেছে সকাল ১০টায়।

তূর্ণা নিশীথার চালক বরখাস্ত, পাঁচ তদন্ত কমিটি : ট্রেন দুর্ঘটনায় তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেসের চালকসহ তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানান, তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের লোকোমাস্টার তাহের উদ্দিন, সহকারী লোকোমাস্টার অপু দে ও গার্ড আবদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, চালকের অসচেতনতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরপরও রেল মন্ত্রণালয় থেকে একটি, রেলওয়ে বিভাগ থেকে দুটি, রেলওয়ে সরকারি পরিদর্শক থেকে একটি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন থেকে একটিসহ মোট পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, রেলওয়ে ও জেলা প্রশাসনের কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির কাজ শেষ করতে কিছুদিন দেরি হবে। মোটামুটি ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পারবে।

রেলপথমন্ত্রী বলেন, এ রুটে কোনো ত্রুটি ছিল না। ওই জায়গায় ট্রেন চলে সিঙ্গেল লাইনে। তূর্ণা নিশীথা বিরতিহীন ট্রেন। এ কারণে ওই স্টেশনে তূর্ণাকে পাশ দিতে গিয়ে উদয়নকে লুপলাইনে প্রবেশের সিগন্যাল দেয়া হয়েছিল। ট্রেনটি লুপলাইনে ঢোকার সময় তূর্ণা নিশীথা উদয়নকে ধাক্কা দেয়।

রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়া জাহান জানান, তূর্ণা নিশীথার চালক সিগন্যাল ‘উপেক্ষা করায়’ এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এদিকে রেলওয়ের বিভাগীয় পর্যায়ের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

এর প্রধান করা হয়েছে পূর্ব রেলের বিভাগীয় ট্রাফিক অফিসার বা ডিটিও নাসির উদ্দিনকে। এর সদস্যরা হলেন- পূর্ব রেলের বিভাগীয় সিগন্যাল অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ার, বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং বিভাগীয় প্রকৌশলী-১।

বিভাগীয় প্রধান পর্যায়ে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সিওপিএস নাজমুল ইসলামকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- পূর্ব রেলের প্রধান যন্ত্রপ্রকৌশলী মিজানুর রহমান, প্রধান সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন প্রকৌশলী অসীম কুমার তালুকদার এবং প্রধান প্রকৌশলী মো. সুবক্তগীন।

জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান যুগান্তরকে বলেন, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিতু মরিয়মকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।

এ বিষয়ে রেলপথ সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন যুগান্তরকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সতর্কমূলক নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করার জন্য বিশেষ প্ল্যান করছি। রেল দিন দিন আধুনিক হচ্ছে- কিন্তু এমন দুর্ঘটনা রেলপথকে অনিরাপদ করে তুলবে।

তিনি বলেন, আন্তঃনগর ট্রেনের চালক-গার্ডদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। একই সঙ্গে সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব সেক্টরে কর্মরতদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা হবে। যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, লোকবল স্বল্পতা আমাদের জন্য একটি বিরাট সমস্যা। আমরা লোকবল নিয়োগ করছি। এখনও প্রায় ১৫ হাজার পদ শূন্য রয়েছে।

এ বিষয়ে রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) খোন্দকার শহিদুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, আমরা পুরো বিষয়টি রেলভবন থেকেও পর্যবেক্ষণ করছি। দুর্ঘটনার পরপরই দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়। বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে তূর্ণা নিশীথাকে ঢাকায় আনা হয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/243172