গতকাল বুধবার বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোটের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিভাগীয় সমাবেশ করতে গেলে পুলিশ শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ করে -সংগ্রাম
২৪ অক্টোবর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১০:২৪

পরীক্ষা বর্জন ও বিদ্যালয়ে তালা ঝুলানোর হুমকি

স্টাফ রিপোর্টার: গ্রেড পরিবর্তন ও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষকদের পূর্বঘোষিত সমাবেশে বাধা দিয়েছে পুলিশ। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেয়। এত ১০ শিক্ষক আহত হোন। কিছুক্ষণ পর আবার শিক্ষকরা শহীদ মিনারে ঢোকার চেষ্টা করলেও সফল হয়নি। বেতন বাড়িয়ে বৈষম্য নিরসনের দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দাবি পূরণের জন্য সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। আগামী ১৩ নবেম্ভরের মধ্যে বেতন বৈষম্যের নিরসনসহ দাবি পূরণ না হলে এবং এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা না করা হলে আসন্ন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বর্জন করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন শিক্ষকরা। এরপরও দাবি পূরণ না হলে তারা বিদ্যালয়ে তালা বুঝিয়ে দেবেন। আগামী ১৭ নভেম্বর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা হওয়ার কথা। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা প্রায় ১০ হাজার শিক্ষক শহীদ মিনার এলাকায় জড়ো হতে চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ আগে থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ ঘিরে রাখায় বাধা পেয়ে শিক্ষকরা সড়কে অবস্থান নেন।

গতকাল বুধবার বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত ঢাকায় শিক্ষক মহাসমাবেশ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। আন্দোলনকারী শিক্ষকদের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব মোহাম্মদ শামসুদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, দোয়েল চত্বরে তাদের সংগঠনের আহ্বায়ক আনিসুর রহমান এই আগামী দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে আজকের কর্মসূচি শেষ করেন। কারণ পুলিশী বাঁধায় শিক্ষকরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দোয়েল চত্বরে অবস্থান নেন। সেখান থেকে দাবি পূরণ করার জন্য আগামী ১৩ নবেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন তারা।

এদিকে বুধবার সকাল থেকে শহীদ মিনারের চৌহদ্দিসহ আশপাশের রাস্তায় বিপুল সংখ্যক পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ কাউকে শহীদ মিনারের দিকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। কেউ যেতে চাইলেই পুলিশ তাদেরকে সেখান থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ কিংবা সরিয়ে দিচ্ছেন। সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার শিক্ষকরা বিছিন্নভাবে শহীদ মিনারের সামনে আসলেও কেউ শহীদ মিনারে অবস্থান করতে পারছেন না। প্রাথমিক শিক্ষা ঐক্য পরিষদের আহ্বানে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার থাকলেও পুলিশি বাধার কারণে শিক্ষকরা সেখানে সমবেত হতে পারেনি। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষকরা প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে ১০ জন শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে শিক্ষক নেতারা দাবি করছেন।

ছত্রভঙ্গ হয়ে শিক্ষকরা শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য মানি না মানব না, দাবি মোদের একটাই আদায় ছাড়া যাব না, দাবি মোদের একটাই ১০-১১ গ্রেড চাই ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন। দফায় দফায় শিক্ষকরা সমবেত হয়ে স্লোগান দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

শিক্ষক নেতারা বলেছেন, সরকার দাবি পূরণ না করলে তারা প্রাথমিকের বার্ষিক পরীক্ষাও বর্জন করবেন। এরপারও দাবি পূরণ না হলে তারা বিদ্যালয়ে তালা বুঝিয়ে দেবেন।

উল্লেখ্য যে, অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষা ঐক্য পরিষদ মহাসমাবেশ ডাকলেও ঢাকায় মহাসমাবেশে যোগ না দিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ছুটির দিনে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)। গত সোমবার ২১ অক্টোবর ডিপিই’র মহাপরিচালক ড. এ এফ এম মনজুর কাদির স্বাক্ষরিত এমন নির্দেশনা জারি করা হয়। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার ঢাকায় শিক্ষকদের মহাসমাবেশ পালনের ঘোষণা দেয়ায় এ নির্দেশনা জারি করা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষকরা ছুটে আসছেন।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বুধবার ২৩ অক্টোবর পবিত্র আখেরি চাহার শোম্বার ছুটির দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক সংগঠন বিভিন্ন দাবি নিয়ে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারেন বলে জানা গেছে। এ কারণে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এ দিন ছুটি উপলক্ষে কর্মস্থল ত্যাগের অনুমতি না দিতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

এদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের গ্রেড পরিবর্তনের দাবিতে গত ১৪ থেকে ১৭ অক্টোবর বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে কর্মবিরতি পালন করেছেন শিক্ষকরা। দাবি আদায় না হলে গতকাল বুধবার ২৩ অক্টোবর শিক্ষকরা রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়ে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ছামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, শিক্ষকরা তাদের অধিকার আদায়ে ছুটির দিনে আন্দোলন করতে পারবেন না, তা হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, নিজেদের দাবি আদায়ে শিক্ষকরা কোনো হুমকি ভয় পান না, এ আন্দোলনে প্রায় পৌনে তিন লাখ শিক্ষক অংশগ্রহণ করছেন সারাদেশে। মন্ত্রণালয় বিদ্যালয় ত্যাগের নির্দেশনা দিলেও বুধবার সরকারি ছুটি, এ দিন সব বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, প্রায় ১০ হাজার শিক্ষক তাদের সাথে আছেন। আরও শিক্ষক এই সমাবেশে যোগ দিতে পথে আছেন।

তিনি আরও জানান, সারাদেশ থেকে আগত শিক্ষকরা সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শহীদ মিনারের দিকে যাত্রা শুরু করলে কার্জন হলের সামনে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় শিক্ষকরা সেখানে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থানের পর পুলিশ সরে গেলে তারা শহীদ মিনারের দিতে যাত্রা করেন। ছামছুদ্দীন মাসুদের অভিযোগ, তাদের আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সূত্রে জানাযায়, প্রধান শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেলের দশম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন দেয়ার দাবিতে গত ১৪ অক্টোবর সারা দেশের ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করা হয়। পরদিন ১৫ অক্টোবর পালন করা হয় তিন ঘণ্টার কর্মবিরতি। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বাদ রাখেন শিক্ষকরা। ১৬ অক্টোবর এসব বিদ্যালয়ে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তারা। এরই অংশ হিসেবে গত ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতিতে যান শিক্ষকরা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেন।

শিক্ষক নেতা তপন কুমার দাবি করে বলেন, শিক্ষকরা সমবেত হয়ে স্লোগান দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছে। পুলিশের লাঠিচার্জে ১০ জন শিক্ষক আহত হয়েছেন।

কোতোয়ালি থানার আই আই টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বন্যা খাতুন বলেন, প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের দাবি জানাতে আমরা মহাসমাবেশে যোগ দিতে এসেছি। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে শহীদ মিনারে আসলেও পুলিশ আমাদের ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের ন্যায্য দাবি জানাতে সমবেত হয়েছি। অথচ পুলিশ আমাদের শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ করে সাত-আটজন শিক্ষককে আহত করেছে। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়াও অনেক শিক্ষক লাঠিচার্জে আহত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নের আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না। পুলিশ আমাদের মহাসমাবেশ ছত্রভঙ্গ করে দিলেও শিক্ষকরা চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছেন। সুযোগ পেলে আবারও সবাই শহীদ মিনারের সামনে সমবেত হবেন।

https://www.dailysangram.com/post/393972