১৭ অক্টোবর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৪:৩৯

পেঁয়াজের সেঞ্চুরির পর আদার ডবল সেঞ্চুরি

আবারো বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। একদফা সেঞ্চুরী করার পর প্রশাসনের নড়াচড়ায় খানিকটা কমে ফের বাড়তে শুরু করেছে। এখন আকার ভেদে দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে একশো হতে একশো দশ টাকা কেজি দরে। বড় বড় আকারের ভারতীয় পেঁয়াজ আশী থেকে নব্বই টাকার মধ্যে।

রাজশাহীর কাঁচা মালের পাইকারী বাজার মাস্টার পাড়ায় দেখা যায় পেঁয়াজের আমদানী খুব বেশী নয়। সংলগ্ন সাহেব বাজারে বিক্রিত পেঁয়াজের সাথে দামের ফারাক কেজি প্রতি চার পাঁচ টাকা। আড়তে বেশ কিছু বস্তার পেঁয়াজে কলি গজানো অবস্থায় দেখা যায়। ফ্যানের বাতাস দিয়ে পেঁয়াজ পচন রোধর চেষ্টা নজর এড়ায়না। পচা পেঁয়াজের গন্ধ ছড়াচ্ছে। পচন ধরা পেঁয়াজও বিক্রি হচ্ছে ত্রিশ চল্লিশ টাকা কেজি দরে। এসব পেয়াজ এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী কম দামে কিনে খানিকটা বাছাই করে বিক্রি করছে।

এদিকে পেঁয়াজের সেঞ্চুরীর পর আরেক মশলা আদা ডবল সেঞ্চুরী করেছে। দীর্ঘদিন প্রতিকেজি একশো ষাট টাকার মধ্যে থাকলেও গতকাল দেশী আদার দাম উঠেছে দুশো টাকা কেজিতে। তবে চীনা আদার দাম রয়েছে একশো ষাট টাকা। রাজশাহীতে স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজের পাশপাশি সোনা মসজিদ স্থল বন্দর দিয়ে আসা ভারতীয় পেঁয়াজ চাহিদা মেটায়। বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে আসা পেয়াজও বাজারে আসে। বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজশাহীর পেঁয়াজ আদা রসুন সহ মশলার বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তিন ব্যবসায়ী। এদের মর্জি মাফিক দাম ওঠা নামা করে। অভিযোগ রয়েছে এদের বাইরে আর কেউ ব্যবসা করতে গিয়ে সফল হয়নি নানা কারনে। বাজার দেখভালের জন্য রাজশাহীতে বাজার মনিটরিং নামে একটা দপ্তর থাকলেও তারা শুধু বাজারের দর নিয়ে ঢাকায় পাঠানোর মধ্যে কার্যক্রম সীমাবদ্ধ। এসব নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি হলে প্রশাসন দু’একদিন অভিযান পরিচালনা করলে ব্যবসায়ীরা লোক দেখানো সবঠিক আছে এমন ভাব দেখালেও বাস্তব চিত্র উল্টেটাই থাকে।
সোনামসজিদ বন্দর সূত্র জানায়, গত তিন দিনে সোনামসজিদ স্থল বন্দর দিয়ে আগে এলসি করা ৮৩টি ট্রাকে ১৩শ মে.টন. পেঁয়াজ এসেছে। কিন্তু এ পেঁয়াজ বাজারে কোন প্রভাব ফেলেনি। বন্দর সূত্র জানায় ২৮ সেপ্টেম্বরের আগে এলসি করা পেঁয়াজ ২৮ অক্টোবরের মধ্যেই সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে প্রবেশ করবে। কিন্তু কি পরিমাণ পেঁয়াজ আসবে তা নিশ্চিত করতে পারেনি।

এদিকে গত মাসের আকস্মিক বন্যায় রাজশাহীর কৃষি ক্ষেত্রে আঘাত হেনেছে। আগস্টে নদীর পানি নেমে যাবার পর যারা পলি মাটিতে মাসকালাই ডাল, পেঁয়াজসহ আগাম শীতকালীন শাকস্বব্জীর আবাদ করেছিলেন। চারাগুলো বেড়ে উঠেছিল। হঠাৎ করে ভারতের বিহার রাজ্যের বন্যার চাপ সামলাতে ফারাক্কার সবকটি গেট খুলে দেবার ফলে নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। পুরোটায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় চাষাবাদ। এখন পানি নেমে যাচ্ছে। থকথকে কাদা মাটিতে জো না আসা পর্যন্ত কোন আবাদ করা যাবেনা। তবে প্রস্তুতি রয়েছে ফের পেঁয়াজসহ শীতকালীন শাকস্বব্জীর আবাদের। কৃষকের মতে এখন পেঁয়াজ লাগানো হলেও তা উঠতে কমপক্ষে মাস তিনেক সময় লাগবে। এখন আমদানী ছাড়া অন্য পথ নেই। একজন পাইকারী পেয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়ার অনেক কারণ রয়েছে। এরমধ্যে এখন বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। এরপর কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ মজুদ নেই। আর নতুন পেয়াজ সবেমাত্র লাগানো শুরু হয়েছে। ভারত না দিলে সবচেয়ে বেশী পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশ চীন, তুরস্ক থেকে আমদানী করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নচেৎ পেঁয়াজের আরো বড় সংকট হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

https://www.dailyinqilab.com/article/241677/