১৫ অক্টোবর ২০১৯, মঙ্গলবার, ১২:৩০

সিলেটের ওসিসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ভারতে ৪৫০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ

দেশ থেকে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে ৪৫০ কোটি টাকা ভারতে পাচার, ঘুষ আদায় ও চোরাই গবাদিপশুর অবৈধ হাট বসিয়ে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে সিলেটের আলোচিত ওসি আহাদ এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রলীগ-ছাত্রদল নেতাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

অভিযোগ আমলে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন স্পেশাল জজ আদালত।

মামলাটি দু’দফা শুনানি শেষে সোমবার সিনিয়র স্পেশাল জজ ও সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. বজলুর রহমান দুর্নীতি দমন কমিশন সিলেটের উপপরিচালককে আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন।

গত ১০ অক্টোবর আইনজীবী এম মঈনুল হক বুলবুলের দায়ের করা মামলা আমলে নিয়ে বিচারক এ রায় দেন।

মামলার আসামিরা হলেন- কানাইঘাটের দীঘিরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী হোসেন কাজল, দর্পনগর পশ্চিম গ্রামের তাজিম উদ্দিন, জহিরুল ইসলাম জহির, মো. আবু রায়হান পাভেল, মুসলিম উদ্দিন, মাছুগ্রাম গ্রামের এম মামুন উদ্দিন, দক্ষিণ কুয়রেরমাটি গ্রামের শাহাব উদ্দিন এবং কানাইঘাট থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ ও গোয়াইনঘাট থানার বর্তমান অফিসার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. আবদুল আহাদ।

এছাড়া মামলার অন্যতম আসামি পুলিশ পরিদর্শক মো. আবদুল আহাদ দুই মাস আগে কানাইঘাটে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। সেখানেই আবদুল আহাদ দুর্নীতি করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সড়কের বাজারে আবদুল গফুর ওয়াকফ স্টেটের ভূমি ব্যবহার করে কানাইঘাট থানার তৎকালীন ওসি মো. আবদুল আহাদের প্রত্যক্ষ মদদে দীঘিরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী হোসেন কাজল ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এম মামুন উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে দীঘিরপাড় ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো আবু রায়হান পাভেলকে বাজারের হাসিল আদায়কারী সাজিয়ে অবৈধ পশুর হাট বসিয়ে পুলিশ ও বিজিবির নামে ঘুষের টাকা আদায় করেন।

জানা যায়, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সড়কের বাজার নামক স্থানে আবদুল গফুর ওয়াকফ এস্টেটের ভূমি ব্যবহার করে কানাইঘাট থানার সাবেক ওসি. আবদুল আহাদের মদদে দীঘিরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী হোসেন কাজল ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এম মামুন উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে দীঘিরপাড় ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. আবু রায়হান পাভেলকে বাজারের হাসিল আদায়কারী সাজিয়ে জহিরুল ইসলাম জহির, শাহাব উদ্দিন ও মুসলিম উদ্দিন বেআইনি হাট বসিয়ে এ অপরাধ করেছেন।

ভারত থেকে চোরাইপথে গবাদিপশু আনতে বাংলাদেশি ৪৫০ কোটি টাকা আলী হোসেন কাজল ও তাজিম উদ্দিন হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার বাদী এম মঈনুল হক বুলবুল জানান, গত ১ আগস্ট এ বাজারে কোরবানির পশু কিনতে গেলে তার কাছেও আসামিরা পুলিশের লাইনের (ঘুষ) নামে ৮০০ টাকা ঘুষ দাবি করেন। এ নিয়ে কথাকাটাকাটি হলে বিষয়টি ওসি মো. আবদুল আহাদকে জানালে তিনি এর কোনো প্রতিকার না করে ম্যানেজ করে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এরপরই বিশাল দুর্নীতির বিষয়টি তার নজরে এলে তিনি ১৮ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আদালতে মামলা করেন।

বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুব হুসাইন জানান, এটি একটি বড় দুর্নীতির মামলা। এ মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় চোরাচালনের গরুর হাট এটি। প্রতিদিন শত শত ট্রাকে এ বাজার থেকে সিলেট ও দেশের বিভিন্ন স্থানে চোরাচালানের গরু সরবরাহ করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে ওসি আবদুল আহাদ তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন।

https://www.dailysangram.com/post/393000