১৪ অক্টোবর ২০১৯, সোমবার, ১১:১৩

তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক

মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান : শেয়ারবাজারে পতন ঠেকাতে সরকারের নেয়া সব পদক্ষেপই ব্যর্থ হয়েছে। কোনো পদক্ষেপেই শেয়ারবাজারের পতন ধরা আটকানো যাচ্ছে না। বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারিরা আস্থা হারিয়েছে। আস্থা ফেরাতে দৃশ্যমান কার্যকরি কোনো পদক্ষেপ না থাকায় যত দিন যাচ্ছে বাজার তলানির দিকে যাচ্ছে। অব্যাহত দরপতনের কবলে পড়ে রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে। দাবি বাস্তবায়িত না হওয়ায় এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।

মূল্য সূচকের ধারাবাহিক পতনের সঙ্গে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে তারল্য সংকট। কমতে কমতে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ আবার দুইশ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে। এর মাধ্যমে চলতি বছরের জুলাইয়ের পর ডিএসইর লেনদেন আবারও দুইশ কোটি টাকার ঘরে নামল।

শেয়ারবাজারের এমন দুরবস্থায় দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা। প্রতিনিয়ত তারা পুঁজি হারাচ্ছেন। দিন যত যাচ্ছে পুঁজি হারানোর শঙ্কা ততো বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের হাহাকার। পুঁজি হারানোর প্রতিবাদে সম্প্রতি ডিএসইর সামনে বিভিন্ন দাবিতে টানা বিক্ষোভ করেছে বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু তাদের কোনো দাবিই মানা হয়নি। তারা বলছেন, শেয়ারবাজারের উন্নয়নে আমরা বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করে আসছি। কিন্তু প্রশাসন আমাদের কথায় কোনো কর্ণপাত করেনি। কোনো দাবিই মানা হয়নি। ফলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা না থাকায় বাজার দিন দিন তলানিতে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারিদের দাবি বাস্তবায়ন করা হলে আজ বাজার এ পরিস্থিতিতে আসতো না।

বাজারের এমন করুণ দশা দেখা দিলে সরকারের হস্তক্ষেপে সম্প্রতি শেয়ারবাজারের জন্য বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে রেপোর (পুনঃক্রয় চুক্তি) মাধ্যমে অর্থ সরবরাহের সুযোগ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর)।

এদিকে শেয়ারবাজারে তারল্য বাড়ানোর লক্ষ্যে দুই হাজার কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন বাংলাদেশ (আইসিবি)। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি সরকারি ৫টি ব্যাংকের কাছে এ টাকা চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবুল হোসেন জানান, সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী এবং বিডিবিএলের কাছে ২০০ কোটি করে মোট এক হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আরও এক হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো এ টাকা দিলে তা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হবে।

পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে এসব পদক্ষেপ নেয়া হলেও শেয়ারবাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। গত কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সবকটি মূল্য সূচকের বড় পতন হয়েছে।

ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৪৮ পয়েন্ট কমে চার হাজার ৭৬১ পয়েন্টে নেমেছে। এর মাধ্যমে ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বরের পর সূচকটি সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেল। ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর সূচকটি ছিল চার হাজার ৭৫০ পয়েন্টে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি চালু হওয়া ডিএসইএক্স শুরুতে ছিল চার হাজার ৫৫ পয়েন্টে। এরপর উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে সূচকটি ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর প্রথম পাঁচ হাজার পয়েন্ট স্পর্শ করে। এক পর্যায়ে ২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বর সূচকটি ছয় হাজার ৩৩৬ পয়েন্টে উঠে।

এরপর কয়েক দফা উত্থান পতন হলেও সূচকটি চলতি বছরের আগে আর পাঁচ হাজার পয়েন্টের নিচে নামেনি। তবে চলতি বছরের জুলাইতে সূচকটি পাঁচ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যায়। এর কিছুটা উত্থান-পতন হলেও বাজারে পতনের প্রবণতায় থাকে বেশি। ফলে বাজারের গতি ফেরাতে তৎপর হয়ে উঠে সরকার। কিন্তু সব বাঁধ (পতন ঠেকানোর প্রতিবন্ধকতা) ভেঙে দিয়ে পতনের মধ্যেই রয়েছে শেয়ারবাজার। এর ধারাবাহিকতায় ডিএসইএক্স তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেল।

প্রধান সূচকের পাশাপাশি রোববার পতন হয়েছে অপর দুই সূচকের। এর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ ১১ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৯৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৭৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এর মাধ্যমে টানা পাঁচ কার্যদিবস সবকটি সূচকের পতন হল।

মূল্যসূচক ধসে পড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। লেনদেনে অংশ নেয়া মাত্র ৪১ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ২৬৭টির। আর ৩৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এদিকে চলতি বছরের ১৬ জুলাইয়ের পর ডিএসইতে আবারও তিনশ কোটি টাকার কম লেনদেন হয়েছে। রোববার দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৯৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর আগে গত ১৬ জুলাই ডিএসইতে ২৭১ কোটি ৭৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এরপর গত তিন মাসের মধ্যে ডিএসইতে আর তিনশ কোটি টাকার নিচে লেনদেন হয়নি।

লেনদেন খরার বাজারে গত কয়েক কার্যদিবসের মতো টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ন্যাশনাল টিউবসের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওয়াটা কেমিক্যালের ১৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১২ কোটি ২০ লাখ টাকার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস। এছাড়া লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- মুন্নু জুট স্টাফলার্স, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, সিলকো ফার্মাসিউটিক্যাল, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল, বিকন ফার্মাসিউটিক্যাল, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক এবং সামিট পাওয়ার।

অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্য সূচক সিএএসপিআই ১৪৫ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ৫১০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৩৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩০টির দাম বেড়েছে। কমেছে ১৮১টির। আর ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

https://www.dailysangram.com/post/392797