১২ অক্টোবর ২০১৯, শনিবার, ২:৩৫

সম্রাটের ক্যাসিনো সঙ্গীরা কোথায়

ক্যাসিনো দুর্নীতিবিরোধী চলমান অভিযানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিস্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের আলোচিত অনেক সহযোগী এখনও গ্রেফতার হননি। তাদের কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। কেউ দেশেই আত্মগোপনে। এদিকে সম্রাট ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু যুবলীগের বহিস্কৃত নেতা এনামুল হক আরমানের বিরুদ্ধে রমনা থানায় দায়ের করা দুটি মামলা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশে স্থানান্তর করা হচ্ছে।

বুকে ব্যথার কথা বলে গত ৮ অক্টোবর কারাগার থেকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন সম্রাট। পুলিশ ও কারারক্ষী পাহারায় সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকরা বলছেন, সম্রাটের হার্ট-সংক্রান্ত কোনো সমস্যা নেই। তিনি ভালো আছেন। হাসপাতালের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আজ শনিবার সম্রাটকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হতে পারে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে নামে র‌্যাব। ক্যাসিনোর ঘটনায় ওই দিন র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। গ্রেফতারের পরই তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর যুবলীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা ও ঠিকাদার জগতের মাফিয়া জি কে শামীমকে নিকেতনের বাসা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। দু'জন গ্রেফতার হওয়ার পর ক্যাসিনো-সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনায় আসেন সম্রাট, আরমান, মতিঝিল এলাকার কাউন্সিলর ও দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ, দক্ষিণ যুবলীগের সহসভাপতি সোহরাব হোসেন স্বপন, সরোয়ার হোসেন মনাসহ সম্রাটের অনেক সহযোগীর নাম। চলমান অভিযানে গা-ঢাকা দেন তারা। কেউ কেউ বিদেশে পালিয়েছেন। অবশ্য কাউন্সিলর সাঈদ অভিযানের আগেই সিঙ্গাপুরে যান।

অভিযান শুরু হওয়ায় গ্রেফতার আতঙ্কে পরে তিনি আর দেশে ফেরেননি। অভিযান শুরুর পর দু-একদিন সম্রাট ও আরমান অনেকটা প্রকাশ্যে থাকলেও গ্রেফতার হতে পারেন- এমন আশঙ্কায় তারাও আত্মগোপনে চলে যান। সম্রাটের ঘনিষ্ঠদের অনেকেই তাকে ছেড়ে গেলেও ছায়ার মতো ছিলেন আরমান। ৬ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও আরমানকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ওই দিন দুপুরে তাদের ঢাকায় আনা হয়। সম্রাটকে নিয়ে তার কাকরাইলের অফিসে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান চালানো হয়।

সেখান থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, ইয়াবা ও দেয়ালে লাগানো ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়া যায়। অবৈধভাবে ক্যাঙ্গারুর চামড়া সংরক্ষণ করার অপরাধে সম্রাটকে ছয় মাস এবং মাদক সেবন অবস্থায় থাকার অপরাধে আরমানকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাদের কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয় ওই দিন সন্ধ্যায়। সম্রাট গ্রেফতার হওয়ার পর তার সহযোগীদের গ্রেফতার আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। তখন তারাও আত্মগোপনে চলে যান। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসাও বন্ধ করে দিয়েছেন সম্রাটের ঘনিষ্ঠ অনেক নেতা। দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ক্যাসিনো সম্রাটদের মধ্যে এখনও যারা গ্রেফতার হননি তাদের মধ্যে অন্যতম কাউন্সিলর সাঈদ, দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদুর রহমান, সহসভাপতি সরোয়ার হোসেন মনা, সোহরাব হোসেন স্বপন, যুবলীগ নেতা জসীম উদ্দিন, গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক ওরফে এনু ভূঁইয়া ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়া প্রমুখ।

মামলা যাচ্ছে ডিবিতে :সম্রাট ও আরমানের বিরুদ্ধে রমনা থানায় দুটি মামলা করে র‌্যাব। অস্ত্র আইনের মামলায় শুধু সম্রাটকে আসামি করা হয়। মাদক আইনের মামলায় দু'জনকেই আসামি করা হয়। রমনা থানার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা গতকাল জানান, মামলা দুটি ডিবিতে যাওয়ার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। আজ-কালের মধ্যেই এই মামলা ডিবিতে স্থানান্তর করা হবে।

আজ কারাগারে ফিরতে পারেন সম্রাট :গত ৮ অক্টোবর বুকে ব্যথার কথা বলে কারাগার থেকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন সম্রাট। পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টে তার হার্টে কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি। যেহেতু তিনি বুকে ব্যথার কথা বলেছেন, তাই তাকে অবজারভেশনে রাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সম্রাটের শারীরিক অবস্থা ভালো আছে। আজ শনিবার তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হতে পারে। কারা সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিলে সম্রাটকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হবে।

https://samakal.com/capital/article/1910930