১১ অক্টোবর ২০১৯, শুক্রবার, ১:১৫

জিডিপি অর্জন নিয়ে বিশ্বব্যাংকের ভিন্নমত

আভাস ৭.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ; আর্থিক খাত ঝুঁকিতে রয়েছে

জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়ে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক ভিন্নমত প্রকাশ করেছে। পূর্বাভাস দিয়ে বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ; যা সরকারের প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ শতাংশ কম। রফতানি আয় ও প্রবাসী আয়ে জোরালো প্রবৃদ্ধি এবং জোরালো অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বড় ধরনের বিনিয়োগের ওপর ভর করে এই ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তবে সরকারের সামনে ঝুঁকিও রয়েছে। আর তা হলো আর্থিক খাতে বিশাল অঙ্কের খেলাপি ঋণ। এটা বড় ধরনের একটা সমস্যা। আর্থিক, রাজস্ব খাত, উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সংস্কার দরকার। এ ছাড়া ব্যবসায় পরিবেশও উন্নতি করার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটির প্রতিবেদন। উল্লেখ্য, সরকার বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংস্থাটির ঢাকা অফিসের সিনিয়র ইকোনমিস্ট বার্নার্ড হ্যাভেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়াং টেমবন, পরামর্শক অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ও কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান মেহেরিন এ মাহবুব। উল্লেখ্য, এর আগে গত জুনে বিশ্বব্যাংকের বৈশ্বিক অর্থনীতির হালনাগাদ প্রতিবেদনে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়। এখন সেই আভাস আরো কমলো।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বার্র্নাড হেভেন বলেন, আর্থিক, রাজস্ব খাত, উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সংস্কার দরকার। এ ছাড়া ব্যবসায় পরিবেশও উন্নতি করার তাগিদ আছে। মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধির মধ্যে কৃষিখাতে হবে ৩ শতাংশ, যা গত অর্থবছর সরকারি হিসাবে হয়েছিল সাড়ে ৩ শতাংশ। এ ছাড়া শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে ৯ শতাংশে; যা গত অর্থবছরে ছিল ১৩ শতাংশ। সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়াবে ৭ শতাংশে; যা গত অর্থবছরে ছিল সাড়ে ৬ শতাংশে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতটি এখনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ব্যাংক থেকে যে ঋণ দেয়া হয়, তা ঝুঁকিপূর্ণ থাকে। বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। এতে সরকারি ব্যাংকগুলোই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের জামানত দেয়ার কারণে ঋণপত্র খোলায় খরচ আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে বিভিন্ন রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতা বাড়াতে হবে। আর্থিক খাতে আইনি কাঠামোর সংস্কারের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে। সরকারের বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনার (এডিপি) উন্নয়ন ঘটাতে হবে। মানসম্পন্ন বিনিয়োগ প্রস্তাব, বাস্তবায়ন সময় কমিয়ে আনা এবং ব্যয় বৃদ্ধির প্রবণতাকে হ্রাস করতে হবে। ব্যবসা করার পরিবেশের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে হবে। সুযোগ, দক্ষতা ও মান বৃদ্ধি করতে হবে।

মার্সি টেম্বন বলেন, ২০০৭ সালে এসেছিলাম তখন বাংলাদেশ এ অবস্থায় ছিল না। বাংলাদেশ অনেক বিনিয়োগ করেছে। ধীরে ধীরে সুফল পাওয়া যাবে। প্রবৃদ্ধির সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ নয়। টেকসই প্রবৃদ্ধির গতিধারাই মূল বিষয়। তার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বেশ শক্তিশালী। প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। বাজার চাহিদা অনুযায়ী মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, ইতিবাচক উন্নতি যে হচ্ছে এটিই অনেক বড় ব্যাপার। তা ছাড়া দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশের অর্জন অনেক। গ্রামীণ অর্থনীতি ভালো করছে। তবে টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য চলমান সংস্কার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা, রফতানি বহুমুখীকরণ, খেলাপি ঋণ কমিয়ে নিয়ে আসা, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো উন্নয়নের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় বিশেষ নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে ডুয়িং বিজনেস পরিবেশ উন্নত করতে হবে। কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষাব্যবস্থা খুবই জরুরি। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে দক্ষ জনশক্তির বিকল্প নেই।

সংস্থাটির পরামর্শক ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যের দুর্বলতা হলো পণ্য বিক্রি মূল্য যুক্তরাষ্ট্র বাজারে কমে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে চায়নিজ শুল্ক বসানো হচ্ছে। ক্রেতারা সস্তায় বিকল্প খুঁজছে। তিনি বলেন, আমরা যাদের সাথে বাণিজ্য করি সেই প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে আমাদের মূল্যস্ফীতির হার বেশি। শুল্কের কারণে মূল্য প্রতিযোগিতা কঠিন হচ্ছে। আর আমাদের সক্ষমতা করছে। এটি যদি ক্রমেই বাড়তে থাকে তা হলে তা হবে আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ভিয়েতনাম ও ভারতের সাথে পেরে ওঠা যাচ্ছে না। এসব মোকাবেলা করা অন্যতম চ্যালঞ্জ।

তিনি বলেন, বাজারে চাহিদা অনুযায়ী নেই দক্ষতায় শিক্ষাব্যবস্থায় পাঠদান হচ্ছে না। এখানে মানের ঘাটতি আছে। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত যে ঝুঁকিতে আছে সেটি কত দিন থাকবে তা নির্ভর করছে সরকারের পদক্ষেপের ওপর।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/447143