১১ অক্টোবর ২০১৯, শুক্রবার, ১:০০

অব্যাহত দরপতনে পুঁজি রক্ষার উপায় দেখছেন না বিনিয়োগকারীরা

শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু ছাড় দিলেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না। উল্টো পতনের বাজারে লেনদেন খরা নতুন মাত্রা পেয়েছে। অব্যাহত দরপতনে পুঁজি রক্ষার উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। লেনদেন খরার থেকে বের হতে পারছে না শেয়ারবাজার। প্রতিনিয়ত দরপতনের কবলে পড়ে পুঁজি হারাচ্ছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। পতনের ধকলে অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা পুঁজি হারানোর ব্যথা যেমন সইতে পারছে না, তেমনি কষ্টের কথা মন খুলে কাউকে বলতেও পারছেন না। ফলে নীরবেই রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবারও সপ্তাহের শেষ দিনেও ঢাকা (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সবকটি মূল্য সূচকের পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসেই দরপতন হলো। টানা দরপতন হলেও শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে সম্প্রতি বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। তারল্য বাড়াতে রেপোর মাধ্যমে অর্থ সরবরাহের সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু শেয়ারবাজারে এর কোনো ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। উল্টো বেড়েছে তারল্য সংকটের মাত্রা। চলতি মাসে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া সাত কার্যদিবসেই লেনদেনের পরিমাণ তিনশ কোটি টাকার ঘরে আটকে রয়েছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩২৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩২০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ছয় কোটি ৯০ লাখ টাকা। লেনদেন খরার সঙ্গে ডিএসইতে অংশ নেয়া সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন হয়েছে। বাজারে লেনদেনে অংশ নেয়া ৫৯ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার বিপরীতে দরপতন হয়েছে ২৭১টির। ২৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৫২ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৮১০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ ১২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১১১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ২০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭০৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, যেভাবে শেয়ারবাজারে দরপতন হচ্ছে, তাতে আমরা বাকরুদ্ধ। আমাদের প্রতিবাদ করার ভাষা নেই। সবকিছু চুপচাপ মুখ বুজে সহ্য করতে হচ্ছে। আর প্রতিদিন বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাতে হবে। এটাই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু পদক্ষেপ নেয়ার পর দুইদিন বাজার ভালো ছিল। মনে হচ্ছিল বাজার কিছুদিন ভালো থাকবে। কিন্তু না এখন দেখছি- যেই লাউ, সেই কদু। বাজারে দরপতন চলছেই। গত কয়েক মাসে বিনিয়োগ করা পুঁজির অর্ধেকও অবশিষ্ট নেই। আর কিছুদিন এ অবস্থা চললে নিশ্চিত পথে বসতে হবে।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বর্তমান চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের আইনে আওতায় আনতে হবে। সেই সঙ্গে তারা যেসব কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন করেছে, সেই কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাইব্যাক করতে হবে। এসব পদক্ষেপ না নেয়া পর্যন্ত শেয়ারবাজর ভালো হবে না।

এদিকে লেনদেন খরার বাজারে গত কয়েকদিনের মতো টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ন্যাশনাল টিউবসের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৪ কোটি ১৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ১৩ কোটি ২৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওয়াটা কেমিক্যাল।

অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্য সূচক সিএএসপিআই ১৪৮ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ৬৫৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাজারে লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৩৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৪টির দাম বেড়েছে। কমেছে ১৮৩টির। আর ২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

https://www.dailysangram.com/post/392471