৯ অক্টোবর ২০১৯, বুধবার, ৩:২৫

লাঠিপেটা, হাত-পা ভাঙা, হল থেকে বিতাড়ণ বুয়েট ছাত্রলীগের নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার

গত এক মাসেই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগ অন্তত আট থেকে ১০টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটায়, যার বেশির ভাগই শিবির সন্দেহে পিটুনি। যদি কেউ ফেসবুকে ধর্মীয় কোনো পোস্ট দেন, ধর্মীয় কোনো পেজে লাইক দেন, সরকারের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ভিন্ন মত প্রকাশ করেন তাহলেই তাঁকে শিবির বলে সন্দেহ করা হয়। রাজনৈতিক কক্ষে নিয়ে তাঁকে মারধর করা হয়। এ ছাড়া নেতাদের দেখলে সালাম না দেওয়া, ডাইনিং ও টিভি রুমে সিট ছেড়ে না দেওয়াসহ অসংখ্য ছোট ছোট কারণেও বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করেন। লাঠি দিয়ে পেটানো, হাত-পা ভেঙে দেওয়া, হল থেকে বের করে দেওয়া বুয়েট ছাত্রলীগের নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নির্যাতন চালানোর বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। আবরারের আগে অনেক শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তুচ্ছ ঘটনায় এমনকি সালাম না দেওয়ার অজুহাত তুলেও তাঁদের পেটানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুয়েটের হলে হলে নিয়মিতই নির্যাতন চলে। আর এ ‘কাজে’ ব্যবহারের জন্য স্টাম্প ও লাঠি প্রস্তুত রাখে ছাত্রলীগ। বুয়েটের আটটি হলের মধ্যে তিনটি হলের সাতটি টর্চার সেল সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে খুবই পরিচিত। এসব কক্ষে শিক্ষার্থীদের ডাক পড়লে ধরেই নেওয়া হয় তিনি মার খেতে যাচ্ছেন। অন্য শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ করলে তাঁর ওপরও চলে নির্যাতন। ফলে বুয়েটে ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ভয়ের ব্যাপার হয়ে উঠেছিল।

কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা যায়, শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষটি টর্চার সেল হিসেবে পরিচিত। এই হলে থাকেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আহসানউল্লাহ হলের ১২৩, ৩২০, ৩২১ ও ৩২২ নম্বর কক্ষে প্রায়ই বিভিন্ন অভিযোগে শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে মারধর করা হয়। এই হলেই থাকেন ছাত্রলীগ সভাপতি। আর কাজী নজরুল ইসলাম হলের ২০৫ ও ৩১২ নম্বর কক্ষও মারধরের জন্য ব্যবহার করা হয়।

পানিসম্পদ পুরকৌশল বিভাগের ১৬তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী কালের কণ্ঠকে বলেন, আবরার হত্যা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দীর্ঘদিন ধরেই এ রকম ঘটনা বিভিন্ন হলে ঘটছে। ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে না গেলে তাঁকে শিবির বানিয়ে মারধর করা হয়। হলগুলোতে নির্দিষ্ট টর্চার সেল রয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী একটু উচ্চবাচ্য করলেই তাঁকে নির্যাতন করা হয়।

১৬তম ব্যাচের সিভিলের শিক্ষার্থী রাওয়াদ বলেন, ‘১০ বছরে বুয়েটের ইতিহাসকে নির্যাতনের ইতিহাস বানিয়ে ফেলেছে ওরা। আবরার হত্যার ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তারাই ওই হলের সাম্প্রতিক সব নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত। প্রশ্রয় পেতে পেতে তারা একজন শিক্ষার্থীকে মেরে ফেলল। কোনো ঝামেলায় না জড়াতে নির্যাতন নিয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না। আমাদের বুয়েট এ রকম ছিল না। ছাত্রলীগ বুয়েটকে কলঙ্কিত করছে।’

১৭তম ব্যাচের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আয়াত আরেফিন বলেন, প্রতিনিয়তই মারধরের ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের নির্দেশনার বাইরে কোনো কথা বললেই নানা অজুহাতে শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়। পরে শিবির বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।

https://www.kalerkantho.com/online/national/2019/10/09/824339