৩ অক্টোবর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১১:৫৪

বিপাকে বিদ্যুৎ খাত

প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিনিয়োগ

প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করে এখন সঙ্কটে পড়েছে বিদ্যুৎ খাত। ২০২০ বা ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে যে চাহিদা তৈরি হবে, এখনই তা পূরণ করার সক্ষমতা রয়েছে। এরপরও নতুন অনেক কেন্দ্র রয়েছে পাইপলাইনে। এসব কেন্দ্র চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছর শুরুতে উৎপাদনে আসবে।

দেশের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত কেন্দ্রের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ১৯ হাজার ৫৭ মেগাওয়াট। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) বলছে, এখন সান্ধ্যকালীন মোট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১২ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। আর দিনের সর্বোচ্চ চাহিদার পিজিসিবি গ্রিডে ১০ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন করছে। এই হিসেবে সান্ধ্যকালীন অলস পড়ে থাকছে ৬ হাজার ৭৫৭ মেগাওয়াট। অর্থাৎ এখন তীব্র গরমের সময়ই ৩৫ ভাগ বিদ্যুতের কাজ নেই। আমাদের বিদ্যুতের প্রতিবছরের প্রবৃদ্ধি মাত্র ১২ ভাগ। এটি ২০ ভাগ হয়ে যেতে পারে, যদি শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ে। তখন আমরা কী করব এই বিদ্যুৎ দিয়ে? সব সময় যে বিদ্যুতের উৎপাদন ৮ হাজার মেগাওয়াটই থাকতে হবে, তা তো নয়। কমপক্ষে ১০ ভাগ হাতে রাখতে হয়। ২০৪১ সাল পর্যন্ত আমরা যে ক্যালকুলেশন করেছি, তা একেবারে সঠিক। যদি শিল্প প্রবৃদ্ধি বাড়ে। প্রয়োজনের বেশি বিনিয়োগ করে এখন সংকটে পড়েছে বিদ্যুৎ খাত। ২০২০ বা ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে যে চাহিদা তৈরি হবে, এখনই তা পূরণ করার সক্ষমতা রয়েছে। এরপরও নতুন অনেক কেন্দ্র রয়েছে পাইপলাইনে। এসব কেন্দ্র চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছর শুরুতে উৎপাদনে আসবে।

সরকারি হিসাব বলছে, দেশের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত কেন্দ্রের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৯ হাজার ৫৭ মেগাওয়াট। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) বলছে, এখন সান্ধ্যকালীন মোট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১২ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। আর দিনের সর্বোচ্চ চাহিদার পিজিসিবি গ্রিডে ১০ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন করছে। এই হিসেবে সান্ধ্যকালীন অলস পড়ে থাকছে ৬ হাজার ৭৫৭ মেগাওয়াট। অর্থাৎ এখন তীব্র গরমের সময়ই ৩৫ ভাগ বিদ্যুতের কাজ নেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার শীতে অন্তত ৬৫ ভাগ কেন্দ্রকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বাইরে থাকতে হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন করুক বা না করুক, তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়। যাকে বলা হয়, ক্যাপাসিটি পেমেন্ট। সুতরাং পিডিবিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বসিয়ে রাখলেও ঠিকই অর্থ পরিশোধ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে দুই দিক থেকে ক্ষতি হয়েছে। প্রথমত, এই খাতে অতি বিনিয়োগ হওয়ায় অন্যখাতে বিনিয়োগ প্রবাহ কমছে। দ্বিতীয়ত, চাহিদা নিরূপণের ব্যর্থতার কারণে কেন্দ্র বসিয়ে রেখে অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে হচ্ছে।

পিডিবি থেকে বলা হয়, দেশে মোট তেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ৬ হাজার ৬৯৩ মেগাওয়াট। যার মধ্যে ২৫ দশমিক ৬৫ ভাগ রয়েছে ফার্নেস অয়েলচালিত। এর পরিমাণ ৪ হাজার ৪৮৮ মেগাওয়াট। আর ডিজেলচালিত কেন্দ্রর পরিমাণ ১১ দশমিক ৫৭ মেগাওয়াট। যার পরিমাণ ২ হাজার ২০৫ মেগাওয়াট। সরকার বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা করেছিল, তাতে সর্বোচ্চ ১০ ভাগ চালিত কেন্দ্র থাকার কথা বলা হয়েছে। এখন যা রয়েছে ৩৭ দশমিক ২২ ভাগ। হতাশার কথা হচ্ছে, মহাপরিকল্পনা তৈরির পর গত দুই বছরে ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্প আখ্যা দিয়ে বেশিরভাগ তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, এই ধরনের আরও ৮টি কেন্দ্র এখন নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে। যেগুলো আগামী বছরের জুনের মধ্যে উৎপাদনে আসার কথা। যার মোট উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৮৯৭ মেগাওয়াট। এর বাইরে ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে আরও দুটি কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। তাও তেলচালিত। এই দুটি কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা হবে ২৬২ মেগাওয়াট। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তেলচালিত আরও ১ হাজার ১৫৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র জাতীয় গ্রিডে যোগ হতে যাচ্ছে। বছরে বিদ্যুতের ১০ ভাগ চাহিদার প্রবৃদ্ধি ঘটছে। সরকারের এই দাবি অনুযায়ী, ২০২০ সালের গ্রীষ্মে বিদ্যুতের বর্ধিত চাহিদা সৃষ্টি হবে ১ হাজার ২৩০ মেগাওয়াট। অর্থাৎ মোট চাহিদা হবে ১৩ হাজার ৫৩০ মেগাওয়াট। এর পরের বছর ২০২১ সালে ১০ ভাগ বর্ধিত চাহিদা হিসাব করলে পরিমাণ দাঁড়াবে ১ হাজার ৩৫৩ মেগাওয়াট। মোট পরিমাণ হবে ১৪ হাজার ৮৫৩ মেগাওয়াট। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের একজন সদস্য বলেন, গ্রীষ্মে ৪০ ভাগ আর শীতে ৬৫ ভাগ কেন্দ্র যেখানে বন্ধ থাকছে, সেখানে এই বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা কী তা, বোধগম্য নয়।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ইনকিলাবকে বলেন, যারা বিদ্যুতে বিনিয়োগ করেছেন, তাদের যারা অর্থ দেন, তারা ফিজিবিলিটি স্টাডি করেন। আগামী দশ বছরে বাংলাদেশের চাহিদা কী হবে, ২০ বছরে বাংলাদেশ এটি প‚রণ করতে পারবে কি না, তারা এসব চিন্তা করেই বিনিয়োগ করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আমাদের বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রয়োজন তো পড়বেই।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, এটিকে ব্যাড প্ল্যানিং বলে। পরিকল্পনাকারীরা বিদ্যুতের যে উৎপাদনের পাশাপাশি দেশের উন্নতি যে পরিমাণ চিন্তা করছিলেন, সে পরিমাণ হয়নি। আর তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সংকটের সময় আনা হয়েছিল। এখন সেগুলো বন্ধ করার সময় হয়ে গেছে। বন্ধ না করে চালানো হলে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ একটি বড় অংশ আমাদের বের হয়ে যাবেই। আমদানির করা গ্যাস ও তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কোনটি বেশি লাভজনক, সেটি যাচাই করা দরকার। কয়লার বিষয়টিও আমাদের বিবেচনা করা দরকার। বড় কেন্দ্রগুলো বিষয়ে জোর দিতে হবে অবশ্যই।

https://www.dailyinqilab.com/article/238471/