১ অক্টোবর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৭:১৬

স্কুলে প্রতি বছর ভর্তি নিয়ে বিড়ম্বনায় অভিভাবক

জাকারিয়া শরিফের মেয়ে রাজধানীর বনশ্রীতে অবস্থিত নামকরা একটি বেসরকারি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। তিনি বলেন, প্রথম শ্রেণীতে তিনি তার মেয়েকে ওই স্কুলে ভর্তি করান। এরপর প্রতি বছর বার্ষিক পরীক্ষার পর নতুন করে ভর্তি করাতে হয়। আর ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতি বছর সেশন চার্জ বাবদ আট হাজার টাকা দিয়ে আসছেন। প্রতি বছর বার্ষিক পরীক্ষার পর স্কুল থেকে নোটিশ দিয়ে বলা হয় অমুক তারিখের মধ্যে ভর্তি না হলে আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে।

জাকারিয়া শরিফ বলেন, তার আরেক ছেলে একই স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। তার ভর্তির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। জাকারিয়া বলেন, প্রতি বছর ডিসেম্বরে দুই ছেলেমেয়ের ভর্তি, বেতন পরিশোধ বাবদ ৩০ হাজার টাকার উপরে একবারে ব্যয় করতে হয়। শুধু দুইজনের সেশন চার্জ, মাসিক বেতন, খাতাপত্র কেনা বাবদ দুইজনের জন্য খরচ হয় ২০ হাজার টাকা। দুইজনের মাসিক বেতন মোট দুই হাজার ৯০০ টাকা।

জাকারিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতি বছর ভর্তি আর সেশন চার্জ দিতে দিতে ফতুর হয়ে যাচ্ছি। শহরের স্কুলে প্রতি বছর ভর্তির নিয়ম আমাদের জন্য একটি বোঝা।
জাকারিয়া শরিফের মতো শহরের লাখ লাখ অভিভাবকের একই অভিযোগ। লাখ লাখ অভিভাবক তাদের সন্তান নিয়ে প্রতি বছর শিকার হন ভর্তি বিড়ম্বনায়। রাজধানীতে সীমিত আয়ের যেসব অভিভাবকের দুই থেকে তিনজন সন্তান লেখাপড়ার সাথে যুক্ত তাদের সন্তনাদের লেখাপড়া করানো এখন অনেক কষ্টসাধ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রায় প্রতি বছর বেসরকারি স্কুলে ভর্তি নীতিমালা প্রকাশ করে থাকে। ২০১৮ ভর্তি বেসরকারি স্কুল-কলেজে মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তরে ভর্তি নীতিমালায় বলা হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত এমপিওভুক্ত স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার টাকা, আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও নন এমপিও শিক্ষকদের বেতনভাতার জন্য ভর্তির সময় মাসিক বেতন, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফি বাবদ সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া উন্নয়ন খাতের জন্য তিন হাজার টাকা পর্যন্ত আদায়ের নিয়ম করা হয়েছে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে একই প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এক ক্লাস থেকে আরেক ক্লাসে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতি বছর সেশন চার্জ নেয়া যাবে কিন্তু পুনঃভর্তি ফি নেয়া যাবে না।

নীতিমালায় সেশন চার্জ নেয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও কত টাকা নেয়া যাবে তা বলা হয়নি। ফলে অনেক স্কুল প্রতি বছর বার্ষিক পরীক্ষার পর এক ক্লাস থেকে আরেক ক্লাসে ভর্তির ক্ষেত্রে সেশন চার্জের নামে নতুন ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে পরিমাণ টাকা আদায় করে সেই পরিমাণ টাকা আদায় করে। অনেক স্কুলে সরকার কর্তৃক বেঁধে দেয়া নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে এবং অতিরিক্ত এ টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো রসিদ দেয়া হয় না অভিভাবকদের। অনেক অভিভাবকও এটা চেপে যান।

তবে নীতিমালা জারির পূর্বে প্রতি বছর রাজধানীর বিভিন্ন নামকরা স্কুলে ভর্তি নিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো। নামকরা অনেক স্কুলের সামনে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভর্তির ক্ষেত্রে ডোনেশনের তালিকা টাঙিয়ে দিত। তাতে দেখা যেত বিভিন্ন শ্রেণীতে ভর্তির ক্ষেত্রে নিম্নে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হতো প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে। আবার অনেক স্কুলে অনেক অভিভাবক কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতেন।

নীতিমালা জারির পর ডোনেশনের নামে প্রকাশে টাকা আদায়ের সংস্কৃতি অনেকটা কমলেও অনেক স্কুলে এখনো বিনা রসিদে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আদায় করা হয়ে থাকে। আবার নামকরা কিছু স্কুলে এখনো চলছে ঘুষ দিয়ে ভর্তির প্রথা। সম্প্রতি রাজধানীর কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সময় আদায়কৃত অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করা হলেও সেশন চার্জের বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না অভিভাবকেরা।

তবে অনেক অভিভাবক বলেন, প্রতি বছর বার্ষিক পরীক্ষার পর এক ক্লাস থেকে আরেক ক্লাসে ভর্তি এবং সেশন চার্জের নামে যে টাকা আদায় করা হচ্ছে তাতো সরকারই চালু রেখেছে নীতিমালায়। প্রতি মাসে প্রতি শিক্ষার্থী বাবদ দেড় থেকে দুই হাজার টাকা করে বেতন দিতে হচ্ছে। তারপর আবার কেন প্রতি বছর মোটা অঙ্কের সেশন চার্জ দিতে হবে ভর্তির সময়। নীতিমালায় বলা হয়েছে সেশন চার্জ নেয়া যাবে, পুনঃভর্তি ফি নেয়া যাবে না। কথা তো ঘুরে ফিরে একই হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেশন চার্জ দিয়েই পুনঃভর্তি করানো হচ্ছে।

নতুন বছর না আসতেই অনেক অভিভাবক এখনই উদ্বিগ্ন তাদের সন্তানদের পুনঃভর্তি আর সেশন চার্জ নিয়ে। অনেক অভিভাবক দাবি জানিয়েছেন প্রতি বছর ভর্তি আর সেশন চার্জ প্রথা বাতিল করার।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/444526/