১ অক্টোবর ২০১৯, মঙ্গলবার, ৭:০৯

কুড়িগ্রামে কোটি টাকার নতুন রেল ভবন, ৯ মাস না যেতেই নানা অভিযোগ

নিয়ম মেনেই ভবনটি হস্তান্তর করা হয়েছে -ঠিকাদার যুবলীগ নেতা

বৃষ্টি হলেই ভবনের ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। বৃষ্টির পরিমাণ একটু বাড়লেই ভিআইপি রুমটি পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল। কোনো কিছুর ঘষা লাগলেই ছাদের প্যাটার্ন স্টোন (ওয়ারিং কোর্স) ভেঙে বেরিয়ে আসছে বালু আর ছোট ছোট পাথর।

এই হাল কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত কুড়িগ্রাম রেল স্টেশনের দুই তলা ভবনের। গত জানুয়ারিতে হস্তান্তর করা এই ভবনের ঠিকাদার ছিলেন রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী।

দুই তলাবিশিষ্ট এই ভবন নির্মাণের শুরুতেও নানা অভিযোগ ছিল। নিম্নমানের সামগ্রী দেয়ার অভিযোগে স্থানীয়রা নির্মাণকাজে বাধাও দেয়। তবে ঠিকাদারের লেলিয়ে দেয়া মস্তান ও পুলিশের তোপের মুখে স্থানীয়রা শেষ পর্যন্ত রণে ভঙ্গ দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

আগামী ১৬ অক্টোবর কুড়িগ্রাম থেকে একটি আন্তঃনগর ট্রেনের উদ্বোধন উপলক্ষে রেল স্টেশন জুড়েই চলছে কাজের তোড়জোড়। নতুন এই ভবনের ছাদ চুইয়ে পানি পড়া, নষ্ট হওয়া চুনকাম করতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যাচ্ছে মিস্ত্রিদের।

দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিয়া জাহান আলী স্টেশনটি পরিদর্শনে যান। এ সময় নবনির্মিত এই ভবনের দুরবস্থা দেখে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে রেলওয়ের লালমনিরহাট ডিভিশনের সহকারী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান চৌধুরীর দাবি কোনো অনিয়ম হয়নি। তিনি বলেন, অন্যান্য সরকারি কাজের চেয়ে এই ভবনের নির্মাণ কাজ ভালো হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে ঢালাই হয়েছে।

কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা নুরুজ্জামান খোকার সঙ্গে। তিনি জানান, রাজশাহী যুবলীগের বড় নেতা রমজান আলী ঠিকাদারের কাজটি করেন। কাজের মান ছিল খুবই খারাপ। নির্মাণ কাজে নিম্নমানের ইট, খোয়া ছাড়াও বেশি বেশি বালু দিয়ে ভবনটি নির্মাণ করছিল। সিমেন্টের ব্যবহারও ছিল নামমাত্র।

প্যাটার্ন স্টোন ঢালাই খুবই নিম্নমানের হওয়ায় পানি জমে মূল ছাদই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবদুল হাকিম নামে অপর একজন জানান, কাজের নকশা দেখতে চাইলেও তারা দেখাননি। রডের পরিমাণও ছিল কম। খোয়া আর সিমেন্টের অনুপাত ৪:১ হওয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে ৮:১। আমি নকশা দেখতে চাইলে আমাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে।

স্থানীয় শ্রমিক রায়হান আলী বলেন, সিমেন্ট কম দেয়ার প্রতিবাদে আমাকে কাজ থেকে বাদ দেয়া হয়। এছাড়াও ডিজাইনবহির্ভূতভাবে নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সামগ্রী ব্যবহার ছাড়াও সেপটিক ট্যাংক, রং, দরজাসহ সব কাজেই অনিয়ম ও দুর্নীতির ছাপ।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঠিকাদার রমজান আলী বলেন, আমি প্রায় এক বছর আগে সব নিয়মকানুন মেনে ভবনটি হস্তান্তর করেছি। এ পর্যন্ত কোনো ধরনের ত্রুটির কথা শুনিনি। আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনলাম।

রুমে বৃষ্টির পানি পড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার যতটুকু মনে হচ্ছে, জানালার ওপর কার্নিশ না থাকায় ছাদের পানি চুইয়ে পানি ঢুকতে পারে। নকশায় না থাকায় আমি চাইলেও কার্নিশ দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে ওই অঞ্চলে আমার মতো এত ভালো কাজ আর কেউ করে বলে আমার জানা নেই।

মস্তান দিয়ে স্থানীয়দের হয়রানি করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অভিযোগটি সঠিক নয়। তবে আমি কাজ করতে গিয়ে কারও সহযোগিতা পাইনি। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের অভিযোগ করেন, রেল বিভাগের কর্মকর্তাদের সহায়তায় নিম্নমানের কাজ করেছেন ঠিকাদার। প্রতিবাদ করলেও থানা থেকে পুলিশ আনা হতো। আর চিহ্নিত কয়েক সন্ত্রাসী ভাড়া করে ভয় দেখানো হতো।

হস্তান্তরের ৮ মাস যেতে না যেতেই ভবনের ভিআইপি রুমের দেয়ালে ফাটল ও ছাদ দিয়ে পানি চুইয়ে পড়ে ভিআইপি রুমে জমে থাকা পানির ব্যাপারে জানতে চাইলে স্টেশন মাস্টার কাবিল উদ্দিন জানান, এই বিল্ডিং সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। কে কখন হস্তান্তর করেছে তাও আমার জানা নেই। আমাকে একটি রুম ব্যবহার করতে দেয়া হয়েছে মাত্র।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/226732/