২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, ১:০২

অনলাইন ক্যাসিনো জমজমাট

তিন পাত্তি গোল্ড। হাতের মুঠোয় ক্যাসিনোর সুবিধা। প্রায় সবার পকেটে স্মার্ট ফোন। সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ। খুব সহজেই যুক্ত হতে পারছেন জুয়ার সঙ্গে। ক্যাসিনো নিয়ে ঢাকায় যখন জোরদার অভিযান তখন নীরবে সেই মুঠোফোনে চলছে ক্যাসিনো। তিন পাত্তি গোল্ড মূলত একটি অ্যাপ্লিকেশন। যে কেউ চাইলেই ডাউনলোড করতে পারে। এটি এখন পর্যন্ত ডাউনলোড করেছেন প্রায় ৫০ মিলিয়নের অধিক মানুষ। এই খেলায় সুবিধা হচ্ছে প্রতিদিন ব্যবহারকারীকে ১ লাখ চিপস ফ্রি দেয়া হয়। দিন রাত ২৪ ঘণ্টা খেলা যায়। আরো আগ্রহের কারণ মাত্র ১ বার খেলেও বের হয়ে আসা যায় এখান থেকে। আগ্রহের বসে এই খেলা শুরু করার পরেই নেশায় পড়ে যায় ব্যবহারকারীরা। আর এই জুয়া সব থেকে বেশি খেলে থাকেন শিক্ষার্থীরা।

এই খেলার নেশায় পড়ে পাচার হচ্ছে বিপুল অংকের টাকা। এই জুয়ার জন্য সাড়ে ৭ লাখ চিপস কিনতে হয় ৮০ টাকায়। ১ কোটি ১৫০ টাকায়, ৩ কোটি ৩ লাখ চিপস ৪২০ টাকায়, ৭ কোটি ৫০ লাখ চিপস ৮৫০ টাকায় ও ১৬ কোটি চিপস কিনতে খরচ হয় ১ হাজার ৭ শ’ টাকা। আর জেমস কিনতে খরচ হয় ১শ’ জেমস ৮০ টাকা, ১ হাজার ৭৫ জেমস ১৫০ টাকা, ৫ হাজার ৫শ’ জেমস ৮৫০ টাকা, ১১ হাজার ৫শ’ জেমস ১ হাজার ৭ শ’ টাকা ও ৬২ হাজার ৫শ’ জেমস কিনতে গুণতে হয় ৮ হাজার ৪ শ’ টাকা।

তবে তাদের অ্যাপের নিয়ম অনুযায়ী এই মূল্যে কিনতে প্রয়োজন পড়ে ক্রেডিট বা ডেভিড কার্ড। এ কারণে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকে পড়ছেন তারা। রয়েছে চিপস শেয়ারের সুবিধা।

জানা যায়, বাংলাদেশে আছে এমন চিপস শেয়ারের শতাধিক এজেন্ট। তারা বিভিন্নভাবে খেলায় যুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এদের সবার রয়েছে ফেসবুক পেজও। এমন একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইচ্ছা পোষণ করা হয় ১ কোটি চিপস কেনার। নিয়ম অনুযায়ী ১ কোটি চিপসের মূল্য ১৫০ টাকা হলেও তারা চায় ১ হাজার টাকা। আরেকটি নম্বরে ফোন করেও ঠিক একই পরিমাণ অর্থ চাওয়া হয়।

খেলাটিতে থাকে ব্যক্তিগত টেবিল বানিয়ে পরিচিতজনদের সঙ্গে খেলার সুযোগ। এছাড়াও তিন পাত্তির পাশাপাশি জোকার, ভেরিয়েশন, হাজারি, পোকার, আন্দার-বাহার, রুমি, ডেলিশিয়া খেলা যায়। এছাড়াও খেলা যায় টুর্নামেন্ট। এই খেলাটিতে নেই অর্থ ফেরত পাবার সুযোগ নেই। চিপস শেয়ারের মাধ্যমেই অর্থ আয় করে থাকে তারা। গত এক মাসে ৬০ হাজার টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, শখের বসেই এই খেলা শুরু করি। এখন রীতিমতো নেশায় পরিণত হয়েছে। এই খেলায় লাভের থেকে লোকসান বেশি হয়। ২ বছরে হারিয়েছি ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা।

সম্প্রতি ৮ বন্ধু মিলে ১ লাখ টাকার চিপস বিক্রি করেছেন। তারা সবাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের খেলার জন্য রয়েছে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ। এই গ্রুপের মাধ্যমে তারা কোর্ড অনুযায়ী ৫ জনের টেবিলে ৪ জন বসে। আর ১ জন যিনি আসেন তার চিপস বাগিয়ে নেন। নিজেদের কার্ড সব ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়। এভাবে তারা আয় করে চিপস। এই গ্রুপের সদস্যরা আবার চিপস শেয়ার বা বিক্রি করে আয় করে থাকে অর্থ। তাদের একজন বলেন, আমাদের এটা আয়ের একটা উৎস। আমরা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন কৌশলে আয় করে থাকি। তিনি আরো বলেন, আমারা এই আয় করা চিপস বিক্রি করি। তবে বাংলাদেশে রয়েছে এসব চিপস বিক্রির ডিলার। তারা সরাসরি চিপস কিনে অধিক দামে বিক্রি করে থাকে।

এই গ্রুপের আরেকজন বলেন, আয়ের পাশাপাশি কিনেও বিক্রি করে থাকি আমরা। ১ কোটি চিপস ১৫০ টাকায় কিনে লাভ করা যায় ৫শ’ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত।

কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এত টাকা দিয়ে চিপস কেনার কারণ কী? এই প্রশ্নের জবাবে রাহুল খান নামে একজন বলেন, অনেকের কাছে থাকে না কার্ড। আর কার্ডের মাধ্যমে চিপস কিনলে তথ্য থেকে যায়। তাই অধিকাংশই কেনেন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।

ভারতীয় এক ব্যক্তি এই জুয়ার আসরটি নিয়ন্ত্রণ করেন। বাংলাদেশে আছে প্রায় শতাধিক এজেন্ট। যারা এসব চিপস বিক্রি করে। যার থেকে ২৫ শতাংশ তারা লাভ করে। এসব এজেন্টের নম্বর মেলে অ্যাপ্লিকেশনেই। এমন একজনের সঙ্গে এজেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি জানান, প্রথমে ১০ লাখ টাকার চিপস কিনতে হবে। এরপর যুক্ত হওয়া যাবে এজেন্ট হিসেবে। এই টাকা মূলত পাচার হচ্ছে এসব এজেন্টের মাধ্যমে ভারতে।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=192399