গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু ও সহসাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়া। ছবি: সংগৃহীত
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শনিবার, ১২:৩৬

ক্যাসিনোর টাকা বৈধ করতে শিটের ব্যবসা এনু-রুপনের

বেশি দামে আমদানি করা স্টিল শিট বিক্রি করা হতো কম দামে

ক্যাসিনো বা জুয়ার বোর্ডে টাকার হাতছানি। কেউ জেতে, কেউ হারে। আর দিন শেষে বস্তা ভরে টাকা যায় ক্লাবের নিয়ন্ত্রকদের ঘরে। এমনই ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রক ছিলেন দুই ভাই পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু ও সহসাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়া। গত পাঁচ বছরে ক্যাসিনো আর জুয়ার ক্লাব চালিয়ে এ দু’জন হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। স্টিল শিট আমদানি করে কেনা দামের চেয়ে কম দামে বিক্রি করে ক্যাসিনোর ওই টাকা বৈধ করতেন তারা। এ টাকায় কিনতেন বাড়ি, ফ্ল্যাট ও স্বর্ণ। স্থানীয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এনু-রুপন স্টিল হাউস নামে ধোলাইখালের ২১নং বানিয়ানগরে একটি এবং একই নামে তাঁতীবাজারে আরেকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিট ব্যবসায়ী বলেন, আমরা যে দামে শিট আমদানি করতাম এর চেয়েও কম দামে শিট বিক্রি করে দিত এনু-রুপন। এদের কারণে বছরের পর বছর ব্যবসায় লোকসান গুনতে হয়েছে শিট ব্যবসায়ীদের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ধোলাইখালের হানিফ স্টিলমিল সংলগ্ন সরকারি জায়গা দখল করে বাঁধন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন এনু-রুপনের অপর ভাই রশিদুল ভূঁইয়া রশিদের ছেলে বাতেনুল হক বাঁধন। তিনি ৪১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও একই কায়দায় জুয়া ও ক্যাসিনোর টাকা বৈধ করা হতো।

মঙ্গলবার এনামুল হক ও রুপন ভূঁইয়ার বাসা এবং তাদের দুই সহযোগী আবুল কালাম ও হারুনুর রশিদের বাসা থেকে ৫ কোটি টাকা, ৮ কেজি স্বর্ণ এবং অস্ত্র উদ্ধারের পর এলাকাবাসী তাদের বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

স্থানীয় দুই আওয়ামী লীগ নেতা শুক্রবার যুগান্তরকে জানান, শুধু ওয়ান্ডার্স ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসাই নয়, এনু-রুপন ও তাদের সহযোগীরা ধোপখোলা মাঠে ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট ক্লাবেও জুয়ার আসর চালাতেন। ক্লাবের প্লেয়ারদের স্থানীয় একটি স্কুলে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়ে তাদের রেস্ট রুমকে ব্যবহার করা হতো অনৈতিক কাজে। এছাড়া নারিন্দার জুনিয়র লায়ন্স ক্লাবকেও নিয়ন্ত্রণ করত তারা।

এদের অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করেননি কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে একজন আওয়ামী লীগ নেতা যুগান্তরকে বলেন, এদের টাকার গরমের কাছে আমরা রীতিমতো অসহায় ছিলাম। তারা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। টাকা দিয়ে পদ বাগিয়ে আওয়ামী লীগার হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, আগামী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৪০, ৪১ ও ৪৪নং ওয়ার্ডে এনু, রুপন ও রশিদের কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের প্রস্তুতিও ছিল।

শুক্রবার নারিন্দা এলাকার বাসিন্দা আবদুস সহিদ যুগান্তরকে বলেন, কিছুদিন আগেও এনামুল হক এনু এবং রুপন ভূঁইয়ার পোস্টারে ছেয়েছিল এলাকার দেয়াল। যেই র‌্যাব অভিযান শুরু করল রাতারাতি পোস্টার সব উধাও হয়ে গেল। উধাও হয়ে গেল এনু-রুপনের স্বজন ও সহযোগীরাও।

এদিকে এনু-রুপন ও তাদের দুই সহযোগী আবুল কালাম ও হারুনুর রশিদের বিরুদ্ধে তিন থানায় করা ৭ মামলার মধ্যে ৪টি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলার তদন্ত করবে সিআইডি। ওয়ারী থানায় আবুল কালামের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অস্ত্র মামলা এবং সূত্রাপুর থানায় এনু-রুপনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া বিশেষ ক্ষমতা আইনের দুটি মামলা তদন্ত করছে পুলিশ।

ওয়ারী থানার ওসি আজিজুর রহমান ও সূত্রাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) স্নেহাশীষ রায় যুগান্তরকে বলেন, মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারেও চেষ্টা চলছে। অভিযানের আগেই এনামুল হক এনু থাইল্যান্ডে যান। রুপন ভূঁইয়া, তার পরিবারের অন্য সদস্য এবং সহযোগীরাও গা ঢাকা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল্লাহ মিনু যুগান্তরকে বলেন, এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়া যে এত বিত্তবৈভবের মালিক তা আমি জানতাম না। তাছাড়া তাদের নাম থানা কমিটিতে যুক্ত করার আগে আমাদের জানানো হয়নি। তিনি বলেন, টাকা, স্বর্ণ ও অস্ত্র উদ্ধারের পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এদিকে আমরা তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী সোমবার জরুরি সভা ডেকেছি।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/225577/