২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শনিবার, ১২:৩৫

চাঁদা-টেন্ডারবাজ ও ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান : ধরাছোঁয়ার বাইরে নেপথ্য নায়করা

জড়িত রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ ও প্রশাসনের সাবেক ও বর্তমান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনা না হলে মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে

চাঁদা ও টেন্ডারবাজ এবং অবৈধ ক্যাসিনোবিরোধী চলমান অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু অভিযানের ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও নেপথ্যের ‘নায়করা’ এখনও অধরা।

অবৈধ ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত রাঘববোয়ালদের ধরতে না পারলে এ অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হবে। পাশাপাশি অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, গ্রেফতার হয়ে যারা রিমান্ডে আছেন, তারা জিজ্ঞাসাবাদে যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম বলেছেন, তাদের যত দ্রুত সম্ভব আইনের আওতায় আনা জরুরি।

জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে রাজনীতিবিদ, পুলিশ ও প্রশাসনের বর্তমান ও সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত থাকলেও তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না। অপরাধের গভীরে গিয়ে এর মূল উৎপাটন করতে হবে।

বিশ্লেষকদের আরও অভিমত, যতই কালক্ষেপণ হবে, ততই কঠিন হবে মূলহোতাদের আটক করা। কারণ এ সময়ের মধ্যে তারা বিদেশেও পাড়ি জমাতে পারেন। শুধু তাই নয়, তাদের হাতে থাকা অবৈধ টাকা, ক্যাসিনো সরঞ্জাম, আগ্নেয়াস্ত্রও সরিয়ে ফেলতে পারেন।

১৮ সেপ্টেম্বর থেকে চলছে সারা দেশে টেন্ডার ও চাঁদাবাজি এবং ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান। গত ১০ দিনে মোট ৩২টি অভিযান (র‌্যাব ১৮ ও পুলিশ ১৪) পরিচালিত হয়েছে।

এর মধ্যে ঢাকা মহানগর যুবলীগের দুই নেতা- খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীম, কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ ও বিসিবির পরিচালক লোকমান হোসেনসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

এসব অভিযানে নগদ ১৭ কোটি টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) এবং ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ২০১ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়া হয়েছে।

রিমান্ডে থাকা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং একাধিক সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে বেশকিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার মূলহোতা ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট।

তার মাধ্যমেই ঢাকার ক্লাবপাড়ায় অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার প্রচলন ঘটে। অভিযান শুরুর পর তিনি প্রকাশ্যে থাকলেও তাকে আইনের আওতায় আনা হয়নি। পরে তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী যুবলীগ নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদ এরই মধ্যে সিঙ্গাপুরে পালিয়ে গেছেন।

এছাড়া ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাউছার, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোবাশ্বের চৌধুরী, কাউন্সিলর কাজী আনিসুর রহমান, গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু, তার ভাই রুপন ভূঁইয়া ও আবদুর রশীদের নাম এলেও তারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সম্রাটের অন্যতম সহযোগী যুবলীগ নেতা আরমানুল হক আরমান, বাদল এবং জুয়াড়ি খোরশেদ আলমও গা-ঢাকা দিয়েছেন।

এছাড়া মতিঝিলের দিলকুশা ক্লাবের আবদুল মান্নান, আজাদ বয়েজ ক্লাবের একেএম নাছির উদ্দিন ও হাসান উদ্দিন জামানের ‘ক্যাসিনোর ব্যবসা’র সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেলেও এখনও তাদের গ্রেফতার করা যায়নি।

র‌্যাবের কাছ থেকে পাওয়া এক তালিকা থেকে জানা যায়, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের ক্যাসিনোর মূল নিয়ন্ত্রক ইসমাইল হোসেন সম্রাট। ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনোর মূল নিয়ন্ত্রক স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাউছার।

ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবের মূল নিয়ন্ত্রক যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমদু ভূঁইয়া। আরামবাগ স্পোর্টিং ক্লাব, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব এবং মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ক্যাসিনোর মূল নিয়ন্ত্রক যুবলীগ নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদ।

র‌্যাবের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, যুবলীগের দুই প্রভাবশালী নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া এবং জি কে শামীম জিজ্ঞাসাবাদে অনেক রাঘববোয়ালের নাম বলেছেন।

কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ এবং বিসিবির পরিচালক লোকমান হোসেনের কাছ থেকে এ ব্যাপারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।

তাদের ভাষ্য, পুলিশ, বিভিন্ন সংস্থা, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কিছু অসাধু সদস্যের সহযোগিতায় বছরের পর বছর নির্বিঘ্নে অবৈধ ক্যাসিনোর ব্যবসা চলেছে।

জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, অভিযান অনেক দেরিতে শুরু হয়েছে। বীজ থেকে বেরিয়ে আসা চারাগাছ যখন মহীরুহে পরিণত হয়েছে, অনেক ডালপালা ছড়িয়েছে, তখন অভিযান শুরু করা হয়েছে।

তবে দেরিতে অভিযান পরিচালনা একেবারে না করার চেয়ে অনেক ভালো। তিনি বলেন, এসব কাজে সম্পৃক্ত রয়েছে রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

এদের সবাইকেই আইনের আওতায় আনতে হবে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই অভিযান আরও জোরদার করা উচিত। তবে খেয়াল রাখতে হবে অভিযান যেন ছোটখাটো স্থানে পরিচালিত না হয়। তাহলে মূল লক্ষ্যের বিচ্যুতি ঘটতে পারে।

তিনি আরও বলেন, যাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে এবং রিমান্ডে নেয়া হয়েছে, তাদের ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে নিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করতে হবে, যাতে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসে।

এ সময় এমন কোনো উঁচুস্তরের লোকের নামও যদি বেরিয়ে আসে, যারা ধরাছোঁয়ার বাইরে অবস্থান করে, তাদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিচার দীর্ঘমেয়াদি না করে দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম যুগান্তরকে বলেন, ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে অনেক প্রভাবশালী জড়িত রয়েছেন। প্রশাসনের লোক রয়েছেন।

যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা না হলে এই অভিযান সফল হবে না। এখন পর্যন্ত প্রভাবশালীদের গ্রেফতার করা হয়নি। এই অভিযানকে আইওয়াশ (লোক দেখানো) অভিযান মনে হচ্ছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, সাধারণ মানুষের মতো আমিও এই অভিযানকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি রোগের উপসর্গের পেছনে না ছুটে রোগের মূলে ঢুকতে হবে।

এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা না গেলে অভিযান নিয়ে শঙ্কা দেখা দিতে পারে। এজন্য যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত জুয়া ক্যাসিনো টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করায় প্রধানমন্ত্রীক ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার কথা বলা হয়েছিল।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই অভিযান পরিচালনা করে প্রধানমন্ত্রী তার কথা রেখেছেন। দেশের জনগণ এই অভিযান পছন্দ করেছে। অন্যায় বা দুর্নীতির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান পরিচালিত হোক দেশের মানুষ সেটা চায়।

তাই এ ধরনের অভিযান কোনো বাহিনীর হাতে সীমাবদ্ধ না রেখে এটাকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। তবে এটা শুধু ক্যাসিনোতে সীমাবদ্ধ নয়, এর ব্যাপ্তি অনেক গভীরে। তাই এর শেকড়ে যাওয়া ও অনুসন্ধান করা উচিত।

যারা ধরা পড়েছে তারা সবাই সরকারি দলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেক্ষেত্রে অভিযান কতটা সফল হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের লোকেরা কোনো রাজনৈতিক দলের মতাদর্শে বিশ্বাসী নয়।

তারা ‘পিপিপি বা প্রেজেন্ট পলিটিক্যাল পার্টির’ চর্চা করেন। যখন যে দল আসবে সেই দলে ভিড়ে গিয়ে এসব করতে থাকবে। তাই সরকার এদের বিরুদ্ধে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে।

এক্ষেত্রে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখাতে হবে। তিনি বলেন, বিদ্যমান অর্থনৈতিক কাঠামোতে মুনাফা অর্জন সর্বোচ্চকরণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পাশাপাশি কোনো নীতি অনুসৃত নয়। তাই এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

তবে যেহেতু এসব অনৈতিকতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া হয়েছে, তাই এটিকে চলমান রাখতে হবে। এর মাধ্যমে যে অর্থ উদ্ধার হচ্ছে সেগুলো উন্নয়ন কাজে ব্যয় করার পরামর্শ দেন তিনি।

বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক যুগান্তরকে বলেন, জুয়া ক্যাসিনো টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে আমি এটাকে সাধুবাদ জানাই। নিঃসন্দেহে আশা করব এই অভিযান চলমান থাকবে এবং রাঘববোয়ালরা ধরা পড়বে।

সেটা না হলে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা এবং অভিযানের উৎস প্রশ্নবিদ্ধ হবে। জুয়া ও ক্যাসিনো অভিযানে আটকৃতদের বিষয়ে তিনি বলেন, জুয়ার বিষয়ে কঠিন কোনো আইন নেই, কিন্তু মানি লন্ডারিং, অস্ত্র ও মাদক আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।

আমি নিশ্চিত যে তদন্ত ভালো হলে এই আইন অনুযায়ী অভিযুক্তদের দোষী প্রমাণ করা যাবে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে যাদের নাম পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের তদন্ত করতে হবে। কারণ এটি একটি উৎস বা সূত্র। এই উৎস ধরে তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার যুগান্তরকে বলেন, সম্রাটসহ যারা অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রেফতারে আমাদের কোনো বিধিনিষেধ নেই। তাদের অবস্থানের বিষয়ে তথ্য পেলেই গ্রেফতার করা হবে।

আরও টাকা পাচারের আশঙ্কা : ক্যাসিনো ব্যবসার মাধ্যমে আয় করা টাকা দেশের বাইরে পাচার করা হতো বলে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য দিয়েছেন র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক এবং বোর্ডের ফ্যাসিলিটিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান লোকমান হোসেন।

তিনি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। যুবলীগ নেতা খালেদ ও শামীমও একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন জিজ্ঞাসাবাদে।

র‌্যাবের অভিযানে খালেদের বাসা থেকে নগদ ২৫ লাখ টাকা, শামীমের কার্যালয় থেকে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, গেন্ডারিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা এনু, তার ভাই রুপন এবং তাদের দুই সহযোগীর বাসা থেকে ৫ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়।

ক্যাসিনো ব্যবসার নেপথ্যের নায়ক এবং তাদের সহযোগীদের কাছেও বিপুল পরিমাণে নগদ টাকা রয়েছে। এখন তাদের গ্রেফতার করা না গেলে এসব টাকা পাচার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শামীম ও খালেদ বিদেশে অবস্থানকারী শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের কাছে টাকা পাঠাতেন। এদিকে বিসিবির পরিচালক লোকমান হোসেন র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, নামে বেনামে এবং নানা কৌশলে তিনি বিদেশে টাকা পাচার করতেন।

অস্ট্রেলিয়ার দুটি ব্যাংকে তার ৪১ কোটি টাকা রয়েছে। তিনি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ক্যাসিনো থেকে প্রতিদিন ৭০ হাজার টাকা পেতেন। যুবলীগ নেতা মমিনুল হক সাঈদের কাছে ক্যাসিনো ভাড়া দিয়ে তিনি এই টাকা আয় করতেন।

প্রশাসনিক তৎপরতা : একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, চলমান অভিযান নিয়ে ‘জিরো টলারেন্স (শূন্য সহিষ্ণু)’ নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে কঠোর মনোভাব পোষণ করেছেন, এখানে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী এবং অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব অত্যন্ত কঠোর।

এমন পরিস্থিতিতে ক্যাসিনো ব্যবসার হোতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রোববার বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ভোলার এমপি এবং যুবলীগের উপদেষ্টা নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, সম্রাটের ঘনিষ্ঠ সহযোগী যুবলীগ নেতা এ কে এম মমিনুল হক সাঈদের ব্যাংক হিসাবও তলব করা হয়েছে। এর আগে গ্রেফতার দুই যুবলীগ নেতা খালেদ এবং জি কে শামীমের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে।

ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে জড়িত নেপালিদের পালাতে সহায়তার অভিযোগে দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

এছাড়া সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের ওসিদের নিয়ে বৈঠকও করেছেন কমিশনার। শিগগিরই ওসিদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা হবে। তবে ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে পুলিশের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত বলে জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন খালেদ ও শামীম।

এমন পরিস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের দায়ের করা মামলার তদন্ত করতে বিব্রতবোধ করছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা।

এদিকে গণপূর্ত অধিদফতরে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। গণপূর্ত বিভাগের প্রভাবশালী ঠিকাদার শামীমকে বিপুল পরিমাণ টাকাসহ গ্রেফতারের পর তিনি র‌্যাব-পুলিশকে অনেক তথ্য দিয়েছেন।

গত ১০ বছর ধরে তিনি কীভাবে গণপূর্তে এত দাপটের সঙ্গে সব টেন্ডার বাগিয়ে নিতেন, এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, জি কে শামীম নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে চাঁদাবাজি এবং টেন্ডারবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন। এমনকি তিনি গণপূর্তের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে কাজ বাগিয়ে নিতেন।

সাবেক দুই প্রকৌশলীকে তিনি মোটা অঙ্কের ঘুষও দিয়েছেন। তারা হলেন গণপূর্ত বিভাগের সদ্য সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম এবং ঢাকা জোনের সাবেক অতিরিক্ত প্রকৌশলী আবদুল হাই।

গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, যে প্রক্রিয়ায় শামীম ঠিকাদারি কাজ পেয়েছে, সেটি নিয়মের অধীনে ছিল নাকি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কিছু করা হয়েছিল- সে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।

এদিকে মঙ্গলবার রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, দেশে ক্যাসিনো চলার সঙ্গে প্রশাসনের কেউ না কেউ জড়িত থাকতে পারে। এজন্য প্রশাসন দায় এড়াতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রী যখন বললেন, তখনই সবাই সজাগ হল। সরকারি সংস্থাগুলো তাহলে এত দিন কী করল? এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘প্রশাসন জানে না বাংলাদেশে এমন কাজ হতেই পারে না। এখানে যে সভাটি হচ্ছে, তাও প্রশাসন জানে। ক্যাসিনোর ঘটনায় প্রশাসনের কেউ না কেউ, কোনো না কোনোভাবে জড়িত থাকতে পারে। আবারও বলছি, থাকতে পারে।’

ঢাকা শহরে প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ ক্যাসিনো গড়ে ওঠায় বিস্ময় প্রকাশ করে প্রশাসনের ব্যর্থতা ও নির্লিপ্ততার জন্য নিন্দা জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোট।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১৪ দলের সভা থেকে এ বিস্ময় ও নিন্দা জানানো হয়। সভায় সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, কিছু রাজনৈতিক কর্মী দুর্বৃত্তায়নে পরিণত হয়েছে।

আমরা বিস্মিত হয়েছি, দুঃখ পেয়েছি। আমরা আরও বিস্মিত হয়েছি, ঢাকা শহরে প্রশাসনের নাকের ডগায় কীভাবে অবৈধ ক্যাসিনোর কাজগুলো সম্পন্ন হয়েছে? আমরা প্রশাসনের ব্যর্থতা ও নির্লিপ্ততার নিন্দা করি।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/225571/