২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ৪:০৩

মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ১৫৪ কিলোমিটার মহাসড়ক

নেই হাইওয়ে পুলিশের সাইন, সিম্বল ও রোডমার্কিং ; তিন ধরনের পরামর্শক খাতেই ব্যয় হবে ২৫ কোটি টাকা

দেশের জাতীয় মহাসড়কগুলো এখনো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিনিয়তই এই সড়কে জীবনহানি ঘটছে। মহাসড়কগুলোতে ট্রাফিক সাইন ও রোড মার্কিংয়ের হার সন্তোষজনক নয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) জরিপ অনুযায়ী ৩ শ’ কিলোমিটার সড়ক ঝুঁকিপূর্ণ। সংস্কারের পরও এখনো ১৫৪ কিলোমিটার মহাসড়ক মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ ইউনিটের কোনো সাইন-সিম্বল সেখানে নেই এবং সড়কের রোডমার্কিংও নেই। এই সবের উন্নয়নে তিন ধরনের পরামর্শকের পেছনে ব্যয় হবে ২৫ কোটি টাকা। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রস্তাবনা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনায় দেখা যায়, মহাসড়কের ১৫৪ কিলোমিটার এই মারাত্মক ও ঝুঁকিপূর্ণ স্পট ও করিডোরের উন্নয়নের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫১ কোটি ২৬ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। আগামী দুই বছরে এই কাজ সম্পন্ন করা হবে। এখানে হাইওয়ে পুলিশের চিহ্নিহ্নত ঝুঁকিপূর্ণ ৫৮টি স্থানের উন্নয়ন, ৫০টি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের উন্নয়ন, ১৪৯.২০ কিলোমিটার মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ করিডোরের উন্নয়ন, ৮৪ হাজার ৩৩৩টি ট্রাফিক সাইন, ৬ লাখ ৩১ হাজার ৮১৩ বর্গমিটার রোডমার্কিং, ৬৮.৭৫ কিলোমিটার সার্ফেসিং করতে হবে।

ব্যয় বিভাজনে দেখা যায়, এই কাজগুলো করার জন্য কারিগরি পরামর্শক খাতে ৮ কোটি টাকা, সুপারভিশন পরামর্শক খাতে ১৫ কোটি টাকা এবং সচেতনতার জন্য পরামর্শক এনজিও খাতে ২ কোটি টাকা মিলে মোট ২৫ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। এসব কাজ করতে দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণ দিতে খরচ ধরা হয়েছে সাড়ে ৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে ২৫ জনের স্থানীয় প্রশিক্ষণ ৩ কোটি টাকা, বিদেশে ৩০ জনের প্রশিক্ষণে ৩ কোটি টাকা এবং সচেতনতার জন্য প্রশিক্ষণে দেড় কোটি টাকা। এই হিসাব সওজর ২০১৮ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পে গবেষণা খাতে ৩ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। আর এসব খাতের ব্যয়ের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

প্রস্তাবিত ব্যয় থেকে জানা গেছে, হাইওয়ে পুলিশের চিহ্নিহ্নত ঝুঁকিপূর্ণ ৫৮টি স্থানের উন্নয়নে ব্যয় হবে ৪১ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। ফলে প্রতিটি স্থানের পেছনে ব্যয় হচ্ছে ৭০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ৫০টি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের উন্নয়নে ব্যয় হবে ১৭ কোটি ৮৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এখানে প্রতিটিতে খরচ হচ্ছে ৩৫ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। প্রতি কিলোমিটার মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ করিডোর উন্নয়নে ব্যয় হবে ১ কোটি ৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। প্রতিটি ট্রাফিক সাইনের জন্য খরচ হবে ১০ হাজার ৫৪৯ টাকা। মোট ৮৪ হাজার ৩৩৩টি ট্রাফিক সাইন তৈরি করা হবে। প্রকল্পের প্রেক্ষাপট থেকে জানা যায়, বর্তমানে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) আওতাধীন সড়ক হলো ২১ হাজার ৩০২.০৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক হলো ৩ হাজার ৮১২.৭৮ কিলোমিটার এবং আঞ্চলিক ৪ হাজার ২৪৬.৯৭ কিলোমিটার। সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, নির্ভরযোগ্য, নিরাপদ ও টেকসই অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ। জাতিসঙ্ঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) টার্গেট হলো আগামী ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার ফলে বিশ্বব্যাপী মৃত্যু ও হতাহতের সংখ্যা অর্ধেকে কমিয়ে আনা।

এ দিকে, এডিবির অর্থায়নে ২০১২ সালে এক হাজার ৩৭২ কিলোমিটার জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে জরিপ করা হয়। তাতে ৩ শ’ কিলোমিটার মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিহ্নত করা হয়েছে। ওই তিন শ’ কিলোমিটারের মধ্যে কিছু সড়কের উন্নয়ন করা হয়েছে। এখনো প্রায় ১৫৪ কিলোমিটার মহাসড়ক (এন-১, এন-৫, এন-৭, এন-৭০৪, এন-৮ এবং আর-৮৮০) মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ১৫৪ কিলোমিটারে ৬১টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থান এবং হাইওয়ে পুলিশ ইউনিটের কোনো সাইন, সিম্বল নেই। প্রায়ই দুর্ঘটনা হওয়া স্থানের তালিকায় ২০৯টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের ৬৭টি নির্বাচনপূর্বক মোট ১২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ করিডোর বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে, সওজর আওতাধীন মহাসড়কগুলোর ট্রাফিক সাইন ও রোডমার্কিং স্থাপনের হার এখনো সন্তোষজনক নয়। জাতীয় মহাসড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানগুলোতে সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ইতোমধ্যে কিছু স্পটে সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত সাইন-সিম্বল স্থাপন করা হয়। কিন্তু বেশির ভাগ জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক বা সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটারে এখনো নিরাপত্তা যথাযথ মান এবং সঠিকভাবে দৃশ্যমান নেই।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/443464/