২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ৪:০১

খরা কাটছে না পর্যটন শিল্পে নেয়া হচ্ছে মাস্টার প্ল্যান

বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ

নানামুখী উদ্যোগের পরেও খরা কাটছে না দেশের পর্যটন খাতের। ইতঃপূর্বে ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করা হলেও পরের বছরগুলোতে যে গতিতে এ শিল্পটি এগোনোর কথা ছিল আদতে সেই ধরনের কোনো গতিই পায়নি পর্যটন খাত। এরই মধ্যে আজ ২৭ সেপ্টেম্বর পালিত হচ্ছে বিশ^ পর্যটন দিবস। এবারের পর্যটন দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘ভবিষ্যতের উন্নয়নে কাজের সুযোগ পর্যটনে’। উল্লেখ্য, জাতিসঙ্ঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা কর্তৃক ১৯৮০ সাল থেকে প্রতি বছর ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত হয়ে আসছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, তিন বছর আগে ২০১৬ সালের পয়লা জুলাই গুলশানের হোলে আর্টিজান রেস্তোরাঁয় বন্দুকধারীদের হামলার পর আশঙ্কাজনক হারে কমে যায় বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা। গত তিন মাস ঢাকায় ডেঙ্গু আতঙ্কেও কমেছে বিদেশীদের আগমন। তবে সব বাধা কাটিয়ে দেশের পর্যটন বিকাশের জন্য ২৫ বছর মেয়াদি একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নও তা বাস্তবায়নের পথে ইতোমধ্যে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এ খাতের নানা প্রতিবন্ধকতার কথা। নিরাপত্তা, যোগাযোগ, আবাসন, খাবার-দাবার ও সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে রয়েছে পর্যটকদেরই অনেক সমস্যা ও অভিযোগ। তবে অন্যতম অভিযোগটিই হলো রাজধানী ঢাকায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে যানজট ও ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা। অতি সম্প্রতি বিদেশীদের চাহিদার প্রধানতম আবাসিক এলাকা তথা সোনারগাঁও হোটেল ও হোটেল রূপসীর সামনের সড়কে মেট্রোরেলের কাজের জন্য যানচলাচল সীমিত করা হয়েছে। ট্যুর অপারেটরদের পরিসংখ্যানও বলছে দুই বছর আগের তুলনায় দেশে এখন পর্যটকদের সংখ্যা অনেক কমেছে।

২০১৬ সালের পয়লা জুলাই রাতে গুলশানের হোলে আর্টিজানে হামলায় বেশ কয়েকজন বিদেশী নাগরিক নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশ ভ্রমণে পর্যটকদের সতর্ক করে বিভিন্ন দেশ। সেই বছরেই উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায় বিদেশী পর্যটক। বাংলাদেশের বেসরকারি বিভিন্ন ট্যুর অপারেটরদের দেয়া পরিসংখ্যানেই দেখানো হয়েছে তখন পর্যটকও কমেছিল অনেক।

এরপর চলতি বছরের গত জুলাই ও আগস্ট মাসে ঢাকাসহ সারা দেশেই ডেঙ্গুর বিস্তারে অনেক বিদেশী পর্যটক বাংলাদেশে আসতে রাজি হননি। বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন আমাদের নিজস্বভাবে কয়েকটি প্রোগ্রাম হাতে নিয়েও শেষ পর্যন্ত সেগুলো স্থগিত করতে হয়েছে। কেননা অনেক বিদেশী অতিথি আমাদের কাছে ডেঙ্গুর বিষয়ে জানতে চেয়ে পরে অনুষ্ঠানই স্থগিতের অনুরোধ জানিয়েছেন।

এদিকে দেশে সার্বিকভাবে বিদেশী পর্যটক কী হারে কমছে এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই জাতীয় পর্যটন সংস্থা বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের (বিটিবি) কাছে। এ প্রসঙ্গে বিমান ও পর্যটন সচিব মহিবুল হক জানান, বিদেশী পর্যটকের সঠিক পরিসংখ্যান এ মুহূর্তে নেই। পুলিশের বিশেষ শাখা ইমিগ্রেশন পুলিশের মাধ্যমে বিদেশীদের হিসাব রাখলেও তাদের কাছ থেকে সব তথ্য পাওয়া যায় না। তাই পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে এ পরিসংখ্যান তৈরির নতুন উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। ‘অ্যাডভান্সড প্যাসেঞ্জারস ইনফরমেশন সিস্টেম’ (এপিআইএস) নামে নতুন একটি সফটওয়ারের মাধ্যমে বিদেশী পর্যটকদের পরিসংখ্যান তৈরি করা হবে বলেও জানান তিনি।
তবে বেসরকারি উদ্যোক্তা ও ট্যুর অপারেটদের কাছে বিদেশী পর্যটক কমে যাওয়ার একটি পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিদেশী পর্যটকদের নিয়ে ট্যুর পরিচালনা করে ‘জার্নিপ্লাস’। এ সংস্থার প্রধান নির্বাহী তৌফিক রহমান জানান, ২০১৫ সালে তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় এক হাজার ৩০০ বিদেশী বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছেন। ২০১৬ সালে সেই সংখ্যা একশতে নেমে আসে। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল ২০০ জন। পরের বছরও প্রায় একই রকম। তবে ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৫৭৫ বিদেশী পর্যটক তিনি পেয়েছেন। বিভিন্ন দেশের ভ্রমণ সতর্কতা না কাটানোকেই পর্যটকের নিম্নমুখী চিত্রের কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন।

কমিউনিটি বেজড ট্যুরিজম (সিবিটি) নিয়ে কাজ করে ‘আজিয়ার ফেয়ার ট্রেড অ্যান্ড ট্যুরিজম’। প্রতিষ্ঠানটির সিইও শাহিদ হোসেন শামিম জানান, ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনিও পর্যটক-খরায় ভুগেছেন। ২০১৭ সালে তিনি ১২৫ জন বিদেশী পেলেও ২০১৮ সালে তা ৬০ জনে নেমে আসে। চলতি বছরেও উন্নতির কোনো আভাস তিনি পাচ্ছেন না।

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া পর্যটন খাতের সম্ভাবনা নিয়ে নয়া দিগন্তকে জানান, দেশে এখন পর্যটকদের আগ্রহ ব্যাপকভাবে বাড়ছে। বিদেশী পর্যটকদের পাশাপাশি দেশের অনেকেই ছুটি কাটাতে দেশের অভ্যন্তরে দর্শনীয় স্পটগুলোতে পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে যান। এই চিত্র কয়েক বছর আগেও তেমন চোখে পড়ত না। মানুষের আয় বেড়েছে, সেই সাথে বেড়েছে খরচ করার মানসিকতাও। অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে শুধু বিদেশী নয়, দেশীয় পর্যটকরা আগ্রহ পাবে। পর্যটন বিকাশে আগ্রহী বেসরকারি উদ্যোক্তাদের আর্থিক প্রণোদনাসহ ব্যাংকের ঋণের সুবিধাও নিশ্চিত করা দরকার বলে তিনি জানান।
পর্যটন দিবসের কর্মসূচি

এদিকে বিশ^ পর্যটন দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে পর্যটন মন্ত্রণালয়। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জনসাধারণের সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এ বছর প্রথমবারের মতো প্রতিটি জেলায় বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে র্যালি ও আলোচনা অনুষ্ঠান হবে। এছাড়া বিশ্ব পর্যটন দিবসে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের আয়োজনে সকাল সাড়ে ৮টায় একটি সাইকেল র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। র্যালিটি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ থেকে শুরু হয়ে ফার্মগেট-কাওরান বাজার-হাতিরঝিল-মগবাজার হয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হবে। সকাল ১০টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ট্যুরিজম বোর্ড ও পর্যটন করপোরেশনের আয়োজনে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/443460/