২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বুধবার, ৮:০১

পাবলিক ভার্সিটির ১৭ ভিসির অনিয়ম তদন্তে ইউজিসি

বেশির ভাগ অভিযোগ নিয়োগে অনিয়ম-স্বজনপ্রীতি; নিয়োগ নীতিমালার তোয়াক্কা না করা; আর্থিক অনিয়ম-অস্বচ্ছতা সব ভিসির বিরুদ্ধে

প্রায় দেড় ডজন (১৭টি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের লিখিত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) পক্ষ থেকে। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে নিয়োগবাণিজ্য, অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতি-পদায়ন, অর্থ আত্মসাৎ, উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ভিন্ন খাতে ব্যবহারসহ নানা অনিয়ম। ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ১৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়ার পর এগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় এসব অভিযোগ জমা পড়ার পর, এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে তদন্ত কমিটি কাজ করবে। কমিশনের সদস্যদের নিয়ে এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এসব তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়ে থাকে। ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানের মেয়াদের শেষ সময় এসব বেশির ভাগ অভিযোগ জমা পড়েছে। তবে, তিনি মাত্র কয়েকটি কমিটি করেছিলেন। সেগুলোর তদন্ত শেষ হয়নি। বিদায়ী চেয়ারম্যানের আমলে ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পড়েছিল। নানা কারণে সেগুলোর কমিটি হয়নি বলে জানা গেছে। নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেয়ার পর আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। সব অভিযোগই খতিয়ে দেখার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউজিসির বর্তমান কমিশন।
ইউজিসির নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অনিয়ম তদন্তের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ইউজিসি অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে মাত্র। মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে অভিযোগের গুরুত্ব অনুসারে সুপারিশ করা হয়। কিন্তু ইউজিসি কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা রাখে না। তিনি বলেন, কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়ম প্রমাণ হলে অপসারণেই শেষ পদক্ষেপ নয়, দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

ইউজিসি সূত্রে জানান, দেশে অনুমোদিত ৪৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৭টিতে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে ১৭টির ভিসির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম অব্যবস্থাপনার অভিযোগ লিখিত আকারে জমা পড়েছে ইউজিসিতে। দেশে উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে অভিযোগের অন্যতম কারণ এটিও একটি। সংশ্লিষ্টরা জানান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রোভিসি এবং ট্রেজারার সরকারের শীর্র্ষ পর্যায়ের অনুমোদন এবং রাষ্ট্রপতির সম্মতিতে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। রাজনৈতিক নিয়োগের কারণেই নিযুক্তরা নিয়মনীতি-আইনকানুনের তোয়াক্কা অনেকাংশেই করেন না, বা করতে চানও না।

এ ব্যাপারে নবনিযুক্ত ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ সম্প্রতি সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন, ভিসি রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ হলেও, সৎ ও যোগ্য শিক্ষকদের এ পদে নিয়োগ দেয়া হলে এ ধরনের সমস্যা অনেকাংশেই কমে যাবে।

জানা গেছে, বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া বেশ কয়েকজন সাবেক ভিসির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত শেষ পর্যায়ে। তবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় তদন্তকাজ বিঘিœত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে যোগাযোগ করলেও তারা সহায়তা করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বর্তমানে ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখার কাজ করে যাচ্ছে। এরমধ্যে কয়েকজন সাবেক ভিসিও রয়েছেন। বাকিরা বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছেন। ইউজিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটির তদন্তকাজ শেষ। বর্তমানে প্রতিবেদন লেখার কাজ চলছে। তবে অভিযুক্ত ভিসির ইউজিসি এবং মন্ত্রণালয়ে তদবির চালানোর অভিযোগ রয়েছে।

যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার লিখিত অভিযোগে খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং তদন্তের প্রাথমিক কাজ চলছে, তাদের মধ্যে স্বনামধন্য হজরত শাহজালাল (রহ:) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) অন্যতম।

এ ছাড়া দেশের শীর্ষ স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগরের ভিসির পদত্যাগের দাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। এসব ভিসির বিরুদ্ধে ভর্তিতে অনিয়ম, উন্নয়নের বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে ছাত্রলীগকে চাঁদার টাকা ভাগ-বাটোয়ারাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া হজরত শাহজালাল (রহ:) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন একাধিক শিক্ষক। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়েছে ছাত্রলীগ।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বড় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই চিরকুটের মাধ্যমে ভর্তি নিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের অবৈধ ভর্তির সুযোগ নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে সেখানে। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপর ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের একটি সন্ধ্যাকালীন স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান ৩৪ নেতাকর্মীকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান ও অনুষদের ডিন শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের পদত্যাগ, সেই ৩৪ জনের ছাত্রত্ব বাতিলসহ তাদের মধ্যে ডাকসু ও হল সংসদে নির্বাচিত আট নেতার পদত্যাগ এবং রোকেয়া হলে নিয়োগ-বাণিজ্যের ঘটনায় জড়িত হল প্রাধ্যক্ষ জিনাত হুদা ও হল সংসদের ভিপি ইসরাত জাহান, জিএস সায়মা প্রমির পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ-প্রকৃতি ধ্বংস করে অপরিকল্পিতভাবে হল ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছে। এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বরাদ্দকৃত ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার মধ্য থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ কমিশন বা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিজে জাবি ছাত্রলীগ নেতাদের ২ কোটি টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে দিয়েছেন। জানা গেছে, এ অভিযোগ খতিয়ে দেখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইউজিসি’কে দায়িত্ব দিতে যাচ্ছে। ঢাবি এবং জাবির ভিসিদ্বয়ের এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এখনো আন্দোলনে এবং তাদের পদত্যাগ দাবি করছেন।

গত ২১ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি)সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে ছাত্র-শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ হয়ে তার পদত্যাগের দাবিতে একাট্টা। বশেমুরবিপ্রবির সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলাসহ সামগ্রিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ বিষয়ে তারা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে। এর আগে বশেমুরবিপ্রবির অচলাবস্থা বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগে আগে আরো একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে বলে ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে।

ইউজিসি বর্তমানে টাঙ্গাইলে অবস্থিত মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) ভিসি মো: আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনার জন্য তিনবার সম্মানী নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ভিসির বিরুদ্ধে। কেবল অতিরিক্ত সম্মানী নেয়া নয়, শিক্ষকদের পদোন্নতি, কর্মকর্তা নিয়োগসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় নিয়মকানুনের চেয়ে তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছাই প্রধান করে দেখেন বলে অভিযোগ জমা পড়েছে।

দেশের অন্যতম অধিভুক্তকরণ বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগবাণিজ্য, জমি ক্রয়ে অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে। তিনি বর্তমানে দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিরুদ্ধে বাড়ি কেনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিয়মের ব্যাপারে খোদ সরকারি অডিট দল আপত্তি তুলেছে। এর মধ্যে ধানমন্ডিতে কেনা বাড়ির ভেতরের রাস্তা দুইবার কেনার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়গুলো ইউজিসির তদন্তের মধ্যে রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ভিসির বিরুদ্ধে নিয়োগের শর্ত লঙ্ঘন করে রাজধানীতে বাড়ি কিনে সেটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ক্যাম্পাস ঘোষণা করে সেখানেই সব দাফতরিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। এখানেই সিনেট বৈঠক করেন ভিসি। গাজীপুরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ভিসি গর হাজির বলে অভিযোগ।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) ভিসি অধ্যাপক ড. এম রোস্তাম আলী, প্রশাসনিক ভবনের অবকাঠামো নির্মাণে ঠিকাদারদের কাছ থেকে বেশি হারে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করায় চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদার তা করছেন না। ফলে, নির্ধারিত সময়ে প্রশাসনিক ভবনের কাজ শেষ হয়নি।

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, তিনি বছরের বেশির ভাগ সময়ই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন না। যদিও তার নিয়োগের অন্যতম শর্তই ছিল ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক অবস্থান করার। গত বছর ২৯৫ দিনই তিনি ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিলেন। ২০১৭ সালে ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলেন ১৩১ দিন। চলতি বছরও তার বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার খুবই কম। এ ছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি, ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে জনবল নিয়োগ, শিক্ষক ও জনবল নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম, সভাপতি হয়েও নিয়োগ বোর্ডে অনুপস্থিত থাকা, অবৈধভাবে গাড়ি বিলাসিতা, অর্গানোগ্রাম লঙ্ঘন করে নিয়োগ, নিয়ম ভেঙে সিটিং অ্যালাউন্স গ্রহণ, ইচ্ছেমতো পদোন্নতি প্রদান, আইন ভেঙে নিয়োগসহ বিভিন্ন কমিটি গঠন, একাধিক প্রশাসনিক পদ দখল, স্বজনপ্রীতি, ক্রয় নীতিমালা লঙ্ঘন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কার্যক্রমে আর্থিক অনিয়মসহ নানা বিষয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন ভিসি নিজেই। উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যত ভিসি নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের সবার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ জমা পড়েছে ইউজিসিতে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে বিতর্কের সৃষ্টি করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এস এম ইমামুল হক। এ ঘটনার প্রতিবাদে ভিসির পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়। পরে শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনের মুখে ভিসিকে ছুটিতে পাঠানো হয়। ছুটিতে থাকা অবস্থায় তার মেয়াদ শেষ হয়। এর আগে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব থেকে অর্থ সরিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিজের নামে নিয়ে একটি ট্রাস্ট ভবন নির্মাণ করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি অবসরে যাওয়ার পর এ সংক্রান্ত সব ফাইলপত্র নিয়ে গেছেন।

এ ছাড়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে নিয়োগবাণিজ্যের অভিযোগ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কয়েক দিন আগে তিন শিক্ষক মামলা করেছেন স্থানীয় আদালতে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাকৃবি) ভিসি অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে নিয়োগবাণিজ্য, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে নিয়োগবাণিজ্যের অভিযোগ, একই অভিযোগ নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ভিসি অধ্যাপক অহিদুজ্জামানের ব্যাপারেও। আরবি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি হিসেবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহর বিরুদ্ধেও লিখিত অভিযোগ খতিয়ে দেখছে ইউজিসি। এটি মাদরাসা অধিভুক্তকরণ বিশ্ববিদ্যালয়। এই ভিসির বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগে অনিয়ম ও নিয়োগে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করার অভিযোগ জমা পড়েছে ইউজিসিতে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/442947/