২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বুধবার, ৮:০০

গতি ফেরাতে গতিহীন ঢাকা

রাজধানীর গতি বাড়ানোর আয়োজন। কিন্তু তাতে আরো গতিহীন হয়ে পড়েছে ব্যস্ত এ মহানগরী। দুর্ভোগের সব মাত্রাও যেন ছাড়িয়ে গেছে। সবাই অপেক্ষায়, কবে ফিরবে ঢাকার গতি? দুর্ভোগের অবসানই বা হবে কবে? ‘ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ (লাইন-৬)-এর অধীনে মেট্রোরেলের প্রথম পর্যায়ের কাজ ২০২৪ সালের মধ্যেই সমাপ্ত হওয়ার কথা রয়েছে। কাজ শেষ হয়েছে ৩০ শতাংশ।

রাজধানী ঢাকার এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে সড়ক উন্নয়নে বর্তমানে অন্তত পাঁচটি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এক মেট্রোরেলই অনেকটাই থামিয়ে দিয়েছে নগরের প্রাণচাঞ্চল্য। যদিও সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে দীর্ঘ মেয়াদের সুফল পেতে কিছুটা দুর্ভোগ মানিয়ে চলতে নগরবাসীকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
রাজধানীর মিরপুর কিংবা ওই অঞ্চলের অন্যান্য এলাকা থেকে যারা নিয়মিত মতিঝিল কিংবা পল্টন এলাকায় কাজে আসেন তাদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ ঘণ্টাও গাড়িতে কেটে যায় তাদের। এই রুটে নিয়মিত যারা যাতায়াত করেন, তাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেল স্থবির জীবনের সীমাহীন দুর্ভোগের কথা।

ঢাকা শহরকে উন্নত শহরে রূপান্তর করতে এর যান চলাচল ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে অন্তত পাঁচটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হচ্ছে ‘ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ (লাইন-৬)-এর অধীনে মেট্রোরেল। অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রজেক্ট, গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প ও ঢাকা শহরে সাবওয়ে নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মেট্রোরেল প্রকল্পটি ব্যস্ত ঢাকার গতির লাগাম টেনে ধরেছে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে মেট্রোরেল প্রকল্প পরিচালকের দফতর থেকে কাজের অগ্রগতির সর্বশেষ যে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে সেখানে সার্বিক কাজের গড় অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৩০ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। সূত্র জানায়, মেট্রোরেল প্রকল্পটি দুটি পর্যায়ে ভাগ করে কাজ হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ের উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৪৬ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এই অংশের কাজ হয়েছে মাত্র সাড়ে ২৩ শতাংশ। এখন ঢাকার প্রাণ বা ব্যস্ত ঢাকার মূল অংশটিই পড়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের মধ্যে। অর্থাৎ আগারগাঁও থেকে ফার্মগেট, কাওরানবাজার, শাহবাগ, হাইকোর্ট, প্রেস ক্লাব, সচিবালয়, পল্টন, বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা হয়ে মতিঝিল। এককথায় রাজধানী ঢাকার একেবারেই কেন্দ্রবিন্দু। এ এলাকায় যানচলাচলে স্থবিরতা এলে পুরো ঢাকা শহর অচল হয়ে পড়ে।

মেট্রোরেলের বাইরে ঢাকার উত্তরাংশে চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ। এ প্রকল্পের কাজটিও নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না। রাজধানী ঢাকা থেকে যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে যানবাহন বের হয়ে যেতে পারে সেই লক্ষ্যে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের টঙ্গী চেরাগআলী মার্কেট পর্যন্ত বাস্তাবায়ন হচ্ছে গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প বা বিআরটি (গাজীপুর টু এয়ারপোর্ট)। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। আগস্ট ২০১৯ পর্যন্ত এই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ১৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

মূল ঢাকার বাইরে উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়া হয়ে ঢাকা ইপিজেড পর্যন্তও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এসব বড় বড় প্রকল্পের কাজ ২০২৪ থেকে ২০৩০ সালের মধ্য সমাপ্ত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

‘ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের উপপরিচালক খান মো: মিজানুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে জানান, মেট্রোরেলের কাজ তিনটি পর্যায়ে শেষ হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপের কাজটি (এমআরটি লাইন -৬) শেষ হওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৪ সাল। দ্বিতীয় পর্যায়ের এমআরটি লাইন-১, লাইন-৫ নর্দান রুটের সম্ভাব্য সমাপ্তির সময়কাল ধরা হয়েছে ২০২৬ ও ২০২৮ সাল পর্যন্ত। তৃতীয় পর্যায়ের এমআরটি লাইন-৫ সাউদার্ন রুট, লাইন-২ এবং লাইন-৪-এর সমাপ্তির সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছে ২০৩০ সাল। তিনি আরো জানান, সাময়িকভাবে হয়তো নগরবাসীকে কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হবে কিন্তু প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার পরেই মেট্রোরেলের সুযোগ পাবেন নগরবাসী। তখন গতি ফিরে পাবে ঢাকা।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/442938/