২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, সোমবার, ১২:৫৮

র‌্যাবের পর মাঠে পুলিশ

মতিঝিলে ৪ ক্লাবে অভিযান

মোহামেডান, ভিক্টোরিয়া, আরামবাগ ও দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাবে পুলিশ * ক্যাসিনো বোর্ড, স্লট মেশিনসহ জুয়া খেলার সামগ্রী জব্দ * নগদ টাকা মদ, সিসা পানের সরঞ্জাম উদ্ধার

নিষিদ্ধ জুয়া-ক্যাসিনো বন্ধে মোহামেডান স্পোর্টিংসহ মতিঝিলের চারটি ক্লাবে একসঙ্গে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। ক্লাবগুলোতে বিপুল পরিমাণ আধুনিক ক্যাসিনো সামগ্রী, স্লট মেশিন ও নগদ টাকা পাওয়া গেছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদের বোতল, সিসা খাওয়ার সামগ্রী এবং ওয়্যারলেস সেট উদ্ধার করা হয়েছে।

এ ছাড়া টাকা গোনার মেশিন ও জুয়া খেলার সরঞ্জামও জব্দ করা হয়। রোববার দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান চলে। ঢাকার কয়েকটি ক্লাবে র‌্যাবের পর পুলিশ মাঠে নামে। এদিন ক্লাবগুলো থেকে খেলা অবস্থায় কাউকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি।

র‌্যাব অভিযানের কারণে খেলোয়াড় এবং আয়োজকরা গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানান স্থানীয়রা। ক্লাবগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।

পুলিশের মতিঝিল বিভাগের কমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, রোববার দুপুরের পর মোহামেডান স্পোর্টিং, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং এবং ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। তিনি বলেন, স্পোর্টিং ক্লাবের নাম করে এসব স্থানে চলছিল ক্যাসিনো।

এগুলোতে ভিআইপিদের জন্য আলাদা ছোট ছোট রুম আছে। টাকা গোনা এবং রাখার জন্যও আছে আলাদা রুম। পুলিশের নাকের ডগায় এতদিন কীভাবে ক্যাসিনো চলেছে- জানতে চাইলে ডিসি আনোয়ার হোসেন বলেন, যখনই আমাদের কাছে তথ্য এসেছে, তখনই আমরা অভিযানে নেমেছি।

এর আগেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবৈধ জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে। বিষয়টি তখন সেভাবে চোখে পড়েনি। তিনি বলেন, ক্লাবগুলোতে চাইনিজ-কন্টিনেন্টালসহ সব ধরনের খাবার প্রস্তুত করার ব্যবস্থা আছে।

অভিযানের সময় সরেজমিন দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাবে দেখা গেছে, জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে ক্যাসিনো খেলা চলত। ১০-১২টি টেবিল বসানো আছে। বোর্ডে ক্যাসিনো খেলার লিখিত নিয়ম-কানুনও লক্ষ করা গেছে। অনেকগুলো প্লেয়িং কার্ড এলোমেলো অবস্থায় টেবিল এবং মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

ক্লাবটির সব কটি রুমই দামি আসবাব দিয়ে সাজানো। সেখানে আছে ওপেন বার। জুয়া খেলার সময় মদ পান করা হতো বলে পুলিশ জানিয়েছে। ক্লাবের প্রতিটি রুমেই রয়েছে ক্যাসিনোর আয়োজন। স্পোর্টিং ক্লাব হলেও সেখানে ফুটবল, ক্রিকেট বা অন্যান্য খেলার কোনো সরঞ্জামাদি চোখে পড়েনি।

কোথাও সুন্দরী তরুণী তাস বিছিয়ে দিচ্ছেন। কোথাও টেবিলের ওপর থরে থরে সাজানো ক্যাসিনোর কয়েন, তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন সুন্দরী নারী। কোথাও উল্লাস করছেন ‘চিয়ার্স গার্ল’। ভিক্টোরিয়া ক্লাবের দেওয়ালে এমন অসংখ্য ছবি দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

ভেতরে ঢুকলেই এগুলো দেখে মনে হবে- জুয়ার স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করেছেন কেউ। ভিক্টোরিয়া ক্লাবের গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে বোর্ডের ওপর সাজানো তাস। এর মধ্যেই আছে মদের বোতল। তার পাশের টেবিলেই রয়েছে ক্যাসিনোর কয়েন।

আর ক্লাবের ভেতরের প্রতিটি ওয়ালে ঝুলছে জুয়ার সামগ্রীর সঙ্গে সুন্দরী নারীর ছবি। একেবারে পশ্চিম দিকে রয়েছে ক্যাশ কাউন্টার। বিশেষ বিশেষ মাসে এখানে ক্যাসিনো খেলার জন্য বিশেষ ছাড় দেয়া হয়। এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ বোর্ডও চোখে পড়েছে।

সেখানে রয়েছে সিসা পানের জন্য রাজকীয় হুঁকাও।

ক্লাবটিতে অভিযান চালিয়ে ডিসি আনোয়ার বলেন, আমরা অভিযানে নগদ এক লাখ টাকা, মদের বোতল ও জুয়া খেলার সরঞ্জাম পেয়েছি। ক্লাবের ভেতরের পরিবেশ দেখে এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, এখানে নিয়মিত ক্যাসিনো বসত।

মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শিবলী নোমান বলেন, এসব ক্লাবে অবৈধভাবে জুয়া, ক্যাসিনো চলত- এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান। ক্লাবগুলো থেকে উদ্ধার হওয়া টাকা, মদ, সিসা ও ক্যাসিনো-জুয়ার সামগ্রী জব্দ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিকাল সাড়ে ৩টায় আরামবাগ ক্লাবে গিয়ে দেখা যায়, আগে থেকেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা। অন্ধকারে সবকিছু দেখা যাচ্ছিল না। তবে সেখানে ক্যাসিনো চলে বোঝা যাচ্ছিল। তিনি আরও বলেন, অভিযানের খবর শুনে সবাই পালিয়ে যায়। দিলকুশায়ও কাউকে পাওয়া যায়নি।

পুলিশের মতিঝিল জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মিশু বিশ্বাস জানান, অভিযানের সময় ক্যাসিনো সামগ্রী ছাড়াও সিসা খাওয়ার সরঞ্জাম, মদের বোতল ও ব্যাংকের চেক পাওয়া যায়। বেশকিছু কাগজপত্রও জব্দ করা হয়েছে। তবে কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

মিশু বলেন, আমরা এখনও নিশ্চিত নই যে, কারা এসব পরিচালনা করত। তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে। কারণ এতদিন এসবকে আমরা স্পোর্টিং ক্লাব বলেই জানতাম। ক্লাবের আড়ালে এমন কার্যক্রম চলছে বলে আমাদের ধারণা ছিল না।

অভিযানে অংশ নেয়া মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনির হোসেন মোল্লাহ বলেন, ভিক্টোরিয়া ক্লাব থেকে নয়টি ক্যাসিনো বোর্ড, নগদ ১ লাখ টাকা, বিপুল পরিমাণ তাস, কয়েন এবং মদ উদ্ধার করা হয়েছে।

মোহামেডান ক্লাব থেকে ১১টি ওয়্যারলেস সেট, ১০টি বিভিন্ন ধরনের চাকু, কার্ড পাঞ্চ করার ছয়টি মেশিনসহ বিপুল পরিমাণ কার্ড, ৯টি বোর্ড, দুটি ক্যাসিনো বোর্ড জব্দ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার গুলশানের বাসা থেকে যুবলীগ নেতা ও ইয়ংমেনস ক্লাবের সভাপতি খালেদ মাহমুদকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ অভিযান। এরপর সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ে।

গত কয়েক দিনে বিভিন্ন ক্লাব ও অফিসে অভিযান চালিয়ে জি কে শামীমসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/223676/