১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১১:১৩

বাসা ও ক্লাবে অভিযান : যুবলীগ নেতা খালেদ গ্রেফতার

বাসা থেকে অবৈধ অস্ত্র, গুলি, মাদক, টাকা, ডলার উদ্ধার * ফকিরাপুলের ইয়াংমেন্স ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনো থেকে গ্রেফতার ১৪২, মাদক উদ্ধার * মতিঝিলে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো ও বনানীর গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ, গুলিস্তানের ক্যাসিনো সিলগালা

দীর্ঘ অভিযান শেষে গুলশানের বাসা থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। বুধবার রাতে অবৈধ অস্ত্র, গুলি, মাদকসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া লাইসেন্সের শর্তভঙ্গের অভিযোগে বাসা থেকে দুটি অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।

একই সময় ফকিরাপুলের ইয়াংমেন্স ক্লাবে নিষিদ্ধ ক্যাসিনোতেও অভিযান চালায় র‌্যাব। এখান থেকে দুই নারীসহ ১৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। ক্যাসিনোতে মদ আর জুয়ার বিপুল সরঞ্জামের পাশাপাশি প্রায় ২৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

ক্লাবটির সভাপতি খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। অনেক দিন ধরে এখানে জুয়াসহ নানা অপকর্ম চলছিল। সাম্প্রতিককালে অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ার পর বুধবার অভিযান পরিচালিত হয়। ইয়াংমেন্স ক্লাবের পর ওই রাতেই ঢাকার আরও তিনটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‌্যাব।

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ইয়াংমেন্স ক্লাব থেকে মাদক এবং জুয়ার সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে। ক্লাবের কাউন্টার থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা জব্দ করা হয়।

তিনি বলেন, এদিন মতিঝিলের ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব এবং বনানী এলাকার একটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালানো হয়। ওয়ান্ডারার্স ক্লাব থেকে মাদক, জাল টাকা, বিপুল পরিমাণ টাকা ও ক্যাসিনো সামগ্রী জব্দ করা হয়েছে।

এরপর ক্যাসিনোটি সিলগালা করে দেয়া হয়। বনানীর আহমেদ টাওয়ারে অবস্থিত গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ নামের ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের নেতৃত্বে আছেন মমিনুল হক সাঈদ এবং আবু কাউসার মোল্লা নামের দুই ব্যক্তি।

দু’জনই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এদিকে বুধবার রাতেই গুলিস্তানে পীর ইয়েমেনী মার্কেটসংলগ্ন একটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র‌্যাব। স্থানীয় কয়েকজন জানান, এ ক্যাসিনোর নেতৃত্বে আছেন ইসমাইল হোসেন সম্রাট।

খালেদ মাহমুদের সন্ধানে বুধবার দুপুরের পর থেকে তার গুলশান-২ এর ৫৯ নম্বর রোডের ৫নং বাসা ঘিরে রাখে র‌্যাব। প্রিমোরোজ গার্ডেন নামের ৬ তলাবিশিষ্ট এ ভবনের তিন তলায় পরিবার নিয়ে থাকেন যুবলীগ নেতা খালেদ।

বাড়ির ব্যবস্থাপক জানান, প্রথমে ডিবি পরিচয়ে একদল লোক বাসায় আসে। এরপর আসে র‌্যাব। রাতে এখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় বাসার লকার এবং দেয়াল আলমিরা থেকে অবৈধ অস্ত্র, ইয়াবা, টাকা, ডলার উদ্ধার করা হয়।

এদিকে দুপুরের আগে থেকেই ফকিরাপুলের ইয়াংমেন্স ক্লাবটিও ঘিরে ফেলেন র‌্যাব সদস্যরা। এ সময় কাউকেই ক্লাবের ভেতরে এবং ভেতর থেকে বাইরে আসতে দেয়া হয়নি। জ্যামার দিয়ে এলাকাটির মোবাইল টেলিযোগাযোগও বন্ধ করে দেয়া হয়।

বিকালের দিকে র‌্যাব সদস্যরা ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় জুয়া খেলারত ও মাদক সেবন অবস্থায় ক্লাবের স্টাফসহ ১৪২ জনকে গ্রেফতার করেন তারা। ক্লাবের ভেতরে তারা পশ্চিমা ধাঁচের অত্যাধুনিক ক্যাসিনোর সন্ধান পান।

জুয়ার আধুনিক বোর্ড, ক্যাশ টাকার বিকল্প প্লাস্টিক কয়েন, কার্ড, জুয়া খেলার ইলেকট্রনিক মেশিনসহ বেশ কয়েকটি কাউন্টার দেখেন। বোর্ডগুলো পরিচালনার সঙ্গে জড়িত দু’জন নারীকে এখান থেকে গ্রেফতার করা হয়।

বিভিন্ন বারে যে ধরনের বিদেশি মদ পাওয়া যায়, এ ক্যাসিনো থেকেও একই ধরনের মদ উদ্ধার করা হয়েছে। জুয়ার বোর্ডের পাশেই মদের অনেক বোতল দেখা গেছে। যারা মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে নিয়মিত জুয়া খেলতে আসেন, তাদের শুরুতে মদ দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।

পরে তাদের কাছে মদ বিক্রিও করা হয়। স্থানীয়রা জানান, বেশ কিছু দিন ধরে এখানে এসব চলছে। সকাল থেকে শুরু হয়ে পরদিন ভোর পর্যন্ত চলে। মাঝে কয়েক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে সকাল ১০টা থেকে ফের বসে জুয়ার আসর। বুধবারও অন্যদিনের মতো সকাল থেকে চালু হয় জুয়ার বোর্ডগুলো।

কিন্তু দুপুরের আগেই র‌্যাব ঘিরে ফেলায় অবস্থা পাল্টে যায়। মোবাইল সংযোগ বন্ধ থাকায় কেউ ভেতর থেকে বাইরে বা বাইরে থেকে ভেতরে যোগাযোগ করতে পারেননি। ফলে কী হচ্ছে, তা কেউ আঁচ করতে পারেননি।

শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে বেড়ে ওঠা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ফকিরাপুলের ইয়াংমেন্স ক্লাবের সভাপতি। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই ক্লাবটি এক সময় ফুটবল খেলার জন্য বিখ্যাত ছিল। খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে নানা ধরনের অপকর্ম শুরু হয়।

বসে জুয়ার আসর। তরুণ-তরুণীদের আনাগোনা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। জুয়ায় সর্বস্বান্ত হয়ে অনেককে হাহাকার করতে দেখা গেছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে চাঁদা দাবির অভিযোগে সমালোচনার মুখে থাকা রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। যুবলীগের কয়েক নেতা সম্পর্কেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপর বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটির প্রভাবশালী নেতা খালেদকে গ্রেফতার করল র‌্যাব।

বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার ভাষ্য, প্রধানমন্ত্রী যুবলীগের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা শোভন-রাব্বানীর চেয়েও খারাপ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবলীগের ঢাকা মহানগরের একজন নেতা যা ইচ্ছে করে বেড়াচ্ছে, চাঁদাবাজি করছে।

আরেকজন এখন দিনের বেলায় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চলেন। সদলবলে অস্ত্র নিয়ে ঘোরেন। এসব বন্ধ করতে হবে। যারা অস্ত্রবাজি করেন, যারা ক্যাডার পোষেণ, তারা সাবধান হয়ে যান, এসব বন্ধ করুন। তা না হলে যেভাবে জঙ্গি দমন করা হয়েছে, একইভাবে তাদেরও দমন করা হবে।

যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট এবং সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী ওইসব কথা বলেছিলেন বলে জানান অনেক নেতা।

যুবলীগের একটি সূত্র জানায়, গণমাধ্যমে অভিযোগের খবর আসার পরে প্রথম পর্বে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে শোকজ করা হয়।

যুবলীগের এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুবলীগের কোনো নেতা বা কোনো শাখার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সংগঠনটি নিজস্ব ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এর তদন্ত ও বিচার করবে। এজন্য যুবলীগ চেয়ারম্যান বা সাধারণ সম্পাদক বরাবর অভিযোগ ও প্রমাণ পাঠাতে বলা হয়েছে।

সংগঠনের পক্ষ থেকে এগুলো চলার পাশাপাশি বুধবার র‌্যাব তার বাসা এবং ক্লাবে অভিযান চালায়। এর আগে মঙ্গলবার রাতে খবর ছড়িয়ে পড়ে খালেদকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়; কিন্তু তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলন : অভিযান শেষে ঘটনাস্থলে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, রাজধানীর বুকে অবিশ্বাস্যভাবে ক্যাসিনো চলছিল। আর ক্যাসিনোর আড়ালে এখানে চলত মাদক ব্যবসা।

ইয়াংমেন্স ক্লাবে বিকাল সাড়ে ৪টায় আমরা অভিযান শুরু করি। ক্যাসিনো এবং মাদক সেবনকালে ১৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে ৩১ জনকে ১ বছর করে এবং বাকিদের ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ১৬ জন আছেন ক্লাবের স্টাফ।

এখান থেকে ২৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা এবং বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়। বিয়ার থেকে শুরু করে ইয়াবাও পাওয়া গেছে। এ প্রতিষ্ঠানের মালিক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গুলশানের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে একটি অবৈধ অস্ত্র, গুলি এবং ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করার কারণে তার অপর দুটি অস্ত্র জব্দ করা হয়।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ক্যাসিনো চালানোর সঙ্গে আরও যারা জড়িত তাদেরও খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনা হবে। মাদকের সঙ্গে যারা জড়িত আমরা তাদের কারও কোনো পরিচয় দেখব না।

যিনি অপরাধ করবেন তাকেই অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা হবে। ক্যাসিনোতে একজন বিদেশি নাগরিক কাজ করেন। তাকে আমরা আজ পাইনি।

আমরা তার ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি। তিনি বৈধ ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ করছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অবৈধভাবে কোনো বিদেশি এখানে কাজ করতে পারবেন না।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সারোয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশে ক্যাসিনো চালানোর কোনো আইনি ভিত্তি নেই। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ক্যাসিনো চলছিল। রাজধানীতে আরও যেখানে ক্যাসিনো চলছে সেগুলোর বিষয়েও গোয়েন্দা তথ্য নেয়া হচ্ছে।

সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সব ক্যাসিনোতে অভিযান চালানো হবে। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই।

খালেদকে গ্রেফতারের পর র‌্যাব-১-এর সিনিয়র এএসপি সুজয় সরকার গুলশানে সাংবাদিকদের বলেন, বিকাল ৪টা থেকেই গুলশান ২-এর ৫৯ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাড়িটি ঘিরে রাখে র‌্যাব। এ বাড়ির তৃতীয় তলার এ-৩ ফ্ল্যাটটি খালেদের।

বাড়ির দারোয়ান হেমায়েত হোসেন জানান, তিন তলার এ-৩ ফ্ল্যাটটি খালেদের কেনা। সেখানে দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন তিনি। বুধবার বেলা ৩টা ৩১ মিনিটে খালেদ তার বাসায় প্রবেশ করেন। এর কিছুক্ষণ পরই র‌্যাব-১-এর সদস্যরা ওই বাসাটি ঘিরে ফেলেন।

বাড়ির ম্যানেজার আরিফ হোসেন বলেন, প্রথমে ডিবি পরিচয় বাড়িতে প্রবেশ করে। পরে বিকাল ৪টার দিকে র‌্যাব-১-এর সদস্যরা আসেন। এরপর সাড়ে ৪টার দিকে তল্লাশি করবেন বলে আমাদের জানানো হয়।

তল্লাশি চালিয়ে লকার থেকে দুটি অস্ত্র, ১ হাজার ৫০০ ও ৫০ টাকার নোটে ১০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা এবং ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা পরিমাণ ডলার উদ্ধার করা হয়। ওয়াল আলমারি থেকে দুটি প্যাকেটে ৪শ’ ইয়াবাও উদ্ধার করেন তারা।

গুলিস্তানের ক্যাসিনো : র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক শাফিউল্যাহ বুলবুল জানান, গুলিস্তানের পীর ইয়েমেনী মার্কেটসংলগ্ন একটি ক্যাসিনো থেকে ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় ৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকা, কষ্টিপাথর, মদ ও বিয়ার উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। সেখানে থাকা ৭টি জুয়ার বোর্ডের মধ্যে দুটি ভিআইপিদের।

ইয়াংমেন্স ক্লাবের চেয়ারম্যান রাশেদ খান মেনন : ‘রাজধানীর ফকিরাপুলে ইয়াংমেন্স ক্লাবের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন। তিনি দাবি করেছেন, এ ক্লাবের ভেতরে জুয়ার আসর বসত এমন খবর তার জানা ছিল না।

তিনি ক্লাবটিকে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার ক্লাব হিসেবেই জানতেন এবং সেই কারণেই তাদের অনুরোধে চেয়ারম্যান হয়েছেন। তবে একবারের বেশি ওই ক্লাবে যাননি তিনি। ইয়াংমেন্স ক্লাবে র‌্যাবের অভিযানের পর এক প্রতিক্রিয়ায় রাশেদ খান মেনন এ কথা বলেন।

মেনন দাবি করেন, মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হাজী সাব্বির এ ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক। হাজী সাব্বিরই তাকে ওই ক্লাবের চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন।

অপকর্মের শেষ নেই খালেদের : ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। মতিঝিল-ফকিরাপুল ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো থেকে শুরু করে কমপক্ষে সাতটি সরকারি ভবনে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ ও সরকারি জমি দখলের মতো নানা অভিযোগ এ নেতার বিরুদ্ধে।

তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলাও। রিয়াজ মিল্কি ও তারেক হত্যার পর পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেন খালিদ। ২০১২ সালের পর মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের ছত্রছায়ায় ঢাকার এক অংশের নিয়ন্ত্রণ আসে খালেদের হাতে। নিজের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহার করেন তিনি।

সূত্র জানায়- রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল এলাকায় কমপক্ষে ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করেন এ যুবলীগ নেতা। এর মধ্যে ১৬টি ক্লাব নিজের লোকজন দিয়ে আর ফকিরাপুল ইয়াংমেন্স ক্লাবটি সরাসরি তিনি পরিচালনা করেন। প্রতিটি ক্লাব থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে এক লাখ টাকা নেন তিনি। এসব ক্লাবে সকাল ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত ক্যাসিনো চলে।

খিলগাঁও-শাহজাহানপুর হয়ে চলাচলকারী লেগুনা ও গণপরিবহন থেকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয় খালেদকে। প্রতি কোরবানির ঈদে শাহজাহানপুর কলোনি মাঠ, মেরাদিয়া ও কমলাপুর পশুর হাট নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। খিলগাঁও রেল ক্রসিংয়ে প্রতিদিন রাতে মাছের বাজার বসান এ নেতা।

সেখান থেকে মাসে কমপক্ষে এক কোটি টাকা আদায় হয়। একইভাবে খিলগাঁও কাঁচাবাজারের সভাপতির পদটিও দীর্ঘদিন তিনি ধরে রেখেছেন। শাহজাহানপুরে রেলওয়ের জমি দখল করে দোকান ও ক্লাব নির্মাণ করেছেন।

জানা যায়- মতিঝিল, শাহজাহানপুর, রামপুরা, সবুজবাগ, খিলগাঁও, মুগদা এলাকার পুরো নিয়ন্ত্রণ এ নেতার হাতে। এসব এলাকায় থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যথাক্রমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), রেলভবন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ওয়াসার ফকিরাপুল জোনসহ বেশিরভাগ সংস্থার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন এ নেতা। ‘ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া’ নামের প্রতিষ্ঠানটি দিয়ে তিনি তার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/222165/