১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, ১২:৩৮

ভিন্নমতের সভা-সমাবেশ ও মতামতের সুযোগ অব্যাহতভাবে সংকুচিত করা হচ্ছে

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল : রাজনৈতিক শূন্যতা এবং একইসাথে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে নাভিশ্বাস, অনিশ্চয়তার মধ্যেই আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস। এ উপলক্ষে আজ রোববার বিকেল ৫টায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন দলটি যখন বিশ্বগণতন্ত্র দিবস পালন করছে, তখন দেশে অনেকটা একদলীয় শাসন ও রাজনীতি চলছে। বিরোধী দল বা জোটভূক্ত দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। একইসাথে রয়েছে সরকারি দল ও তাদের প্রশাসনের হুমকি ধামকি। যার সর্বশেষ প্রমাণ হচ্ছে, ছাত্রদলের জাতীয় কাউন্সিল আয়োজনে বাধা প্রদান। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনা বলেই অন্য কোনো দলকে গনতন্ত্র র্চচার সেই সুযোগও দিতে চায় না। তারা আদালতকে ব্যবহার করে ছাত্রদলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচিকে বন্ধ করে দিয়েছে। আদালতকে এভাবে গণতন্ত্র হরণের জন্য ব্যবহার করাকে মোটেও ভালোভাবে দেখছেন না তারা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ হলো, সবাইকে সভা-সমাবেশের সুযোগ দেয়া। মূলত দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধও এই শ্লোগানকে কেন্দ্র করে সূচনা হয়েছিল। কিন্তু এখন যুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া দল আওয়ামী লীগই বিষয়টি বেমালুম ভূলে গেছে। সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও বাস্তবে এর চর্চা শূন্যের কোঠায়।

সূত্র মতে, গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে সরকার দলীয়দের হুমকি ধামকির কারণে রাজনৈতিক শূন্যতা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এটি গণতন্ত্রের জন্য বিপদসংকেত। এদিকে গণতন্ত্রের আশঙ্কাজনক অবনতি ঘটায় সাধারণ মানুষের জীবনযাপনেও মারাত্বক প্রভাব পড়েছে। দেশের সার্বিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সম্প্রতি বলেছেন, এর চেয়ে খারাপ অবস্থা অতীতে ছিল কি না জানা নেই। বলা হচ্ছে দেশ উন্নতি হচ্ছে, কিন্তু এই উন্নতির অন্তরালে মানুষ আর্তনাদ করছে বলে মনে করেন তিনি। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এই শিক্ষাবিদ বলেন, রাষ্ট্রের কোনো মানুষ নিরাপদে নেই। এমন অনিরাপদ অবস্থা আমরা ৭১ সালেই দেখেছিলাম। এর বড় উদাহরণ হচ্ছে ধর্ষণ। এসব অন্যায় রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। দেশের কোথাও কারো কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। বিরোধী রাজনীতির কর্মসূচি পালনেও যেন একপ্রকার নিষেধাজ্ঞা চলছে। এভাবে কোনো দেশ চলতে পারেনা।

গণতন্ত্র ও বিচারহীনতার কারণে দেশে দূর্নীতি, লুটপাট, অপশাসন, ধর্ষণ, বেকরত্ব বাড়ছে বলে মনে করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব। তিনি বলেন, সরকারের স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই বাংলাদেশ আজ এ অবস্থানে এসে দাড়িয়েছে। তিনি বলেণ, কোথাও কেউ আজ নিরাপদ নেই। অথচ সরকার মুখে উন্নয়নের ফেনা তুলছে। রব বলেন, কোনো স্বৈরাচার সরকার অভ্যুত্থান ছাড়া পরাজিত হয়নি। বর্তমান সরকারও ক্ষমতা ছাড়বে না। তাদের ক্ষমতা থেকে নামাতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে গণআন্দোলনের মাধ্যমে বিদায় করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এমাজউদ্দিন আহমদ বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্র উঠে গেছে। গণতন্ত্র আর নেই। একদলীয় শাসন এখন একটি ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর মুখে উচ্চারিত হয় বাকশালের কথা। ঢাবির সাবেক এ ভিসি বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্র উঠে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখেও বাকশাল। আমি যেহেতু একজন শিক্ষক, আমার যদি শিক্ষকতার বয়স থাকতো, তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে গণতন্ত্রের বিষয়ে পড়াতাম।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে যে এখন একদলীয় শাসন চলছে তা প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি দলের নেতাদের বক্তব্যেই ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি লন্ডন সফরকালীন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে আসা নিজ দলের নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে এক বক্তব্যে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শেখ হাসিনা। যা বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত ও সামাজিক গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশনেত্রীর মুক্তি যদি প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে তাহলে সেটি শুধু উদ্বেগজনকই নয় বরং তা সামগ্রিকভাবে দেশ ও জনগণের জন্য এক অশুভ আগামীর ইঙ্গিতবাহী। দেশে যে ন্যুনতম গণতন্ত্র নেই বরং একদলীয় শাসনের চরম বহি:প্রকাশ ঘটেছে তা লন্ডনে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সুস্পষ্ট হয়েছে। আইনের শাসন, আইনী প্রক্রিয়া ও ন্যায় বিচার নিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক শক্তি বারবার যে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে সেটি যে ন্যায়সঙ্গত তা আবারও প্রমানিত হলো।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক শক্তি নয়। আওয়ামী লীগ মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে। কিন্তু তার উল্টোটা বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১১ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষের অধিকারগুলো হরণ করে মানুষের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। অর্থনীতির ভয়ংকর অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার শুধু গণতন্ত্রেরই ক্ষতি করেনি, দেশেরও ক্ষতি করেছে। আজকে অর্থনীতির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। যতই বলুক এখানে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, অর্থনীতির ভীষন উন্নয়ন হয়েছে, চারিদিকে একেবারে গম গম করছে অর্থনীতি। বাস্তবে অর্থনীতি ভয়ংকর অবস্থায়। প্রবৃদ্ধি বাড়েনি দাবি করে অর্থনীতির সাবেক অধ্যাপক বলেন, প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়। পুরোপুরিভাবে বানিয়ে-টানিয়ে একটা দিয়ে দেয়া হয়। প্রবৃদ্ধি কার? প্রবৃদ্ধি হচ্ছে আওয়ামী লীগের, তাদের লোকজনের। সাধারণ মানুষের তো অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচেছ না। বরংঞ্চ সাধারণ মানুষ আর্থিক কষ্টে আছে, তাদের গ্যাসের দাম বাড়ছে, তাদের বিদ্যুতের দাম বাড়ছে, তাদের তেলের দাম বাড়ছে। প্রতি মুহুর্তে তাদের প্রকৃত আয় চলে যাচ্ছে। এই বিষয়গুলো চিন্তা করা উচিত। এটা নিয়ে ভাবা উচিত।

দেশের রাজনৈতিক শূন্যতা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে থাকায় একে গণতন্ত্রের জন্য বিপদসংকেত বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদ। রাজধানীর তোপখানা রোডের শিশু কল্যাণ পরিষদ ভবনে দলটির স্থায়ী কমিটির এক সভায় গৃহীত প্রস্তাবে এ কথা বলা হয়। প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ১৪ দল তথা মহাজোট সরকার সংসদ নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগের একক দলীয় সরকারে পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক সরকারের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক পদ্ধতিতে হওয়ার প্রবণতা ক্রমহ্রাসমান হয়ে এখন তা প্রশাসনের একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মধ্যে সীমিত হয়ে পড়েছে। সভার প্রস্তাবে বলা হয়, এ সভা ব্যাংকিং খাতে ও শেয়ারবাজারে বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থা, লাগামহীন দুর্নীতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাংক খুলে ক্ষমতাশ্রয়ী একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী জনগণের টাকা লুটেপুটে নেয়ার পরেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। ‘শিষ্টের দমন ও দুষ্টের পালন’ পদ্ধতির কারণে গোটা অর্থনীতি আজ চোরাবালিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় পড়েছে। একই অবস্থা শেয়ারবাজারে।

চলমান পরিস্থিতিতে সুস্থ রাজনীতি বাদ দিয়ে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব বলে মনে করেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, জনগণই দেশের মালিক, তাই জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেই সুস্থ রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কামাল হোসেন আরো বলেন, জাতিকে এক ব্যক্তির শাসন থেকে মুক্ত করতে হবে। কারণ, স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বাক-ব্যক্তি-আইনের শাসন থাকে না। দুর্নীতি-দলীয়করণ-লুটপাট-অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসহ সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে গ্রাস করে থাকে। সমাজ ও সভ্যতাকে ধ্বংস করে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তর এখন পচে গেছে। ধর্ষণ, হত্যা অহরহ ঘটছে। সর্বত্র চলছে লুটপাটের মহোৎসব। কোথাও গণতন্ত্র নেই। যারাই গণতন্ত্র চর্চা করতে চায় তাদের বাধা দেয়া হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন একদলীয় শাসন চালাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল ও তাদের জোটগত দলগুলো যখন তখন রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিয়ে সমাবেশ করলেও বিরোধী পক্ষের জন্য সেটি যেন ‘হারাম’। দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম দল বিএনপি বারবার তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হবে বলে ঘোষণা দিলেও সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাতে বর্বর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীতে সমাবেশ করার উপর নিষেধ্জ্ঞাা চলছে। কারাবন্দী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনসহ সভা সমাবেশের আয়োজন করলে সেখানে সরকার বাধা দিচ্ছে। অব্যাহতভাবে চলছে ধরপাকড়ও। বিশ্লেষকরা ক্ষমতাসীন আ’লীগকে বল প্রয়োগের রাজনীতি ত্যাগ করার আহবান জানিয়ে বলেন, যদি সরকার তাদের আচরণের পরিবর্তন না ঘটায় তাহলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। দেশে সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়বে।
এই সরকারের রোষানলে সবচেয়ে বেশি পড়েছে দেশের আরেক জনপ্রিয় দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গণতন্ত্রের মূর্ত প্রতীক হলেও দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর বছর তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে বাধা দেয়া হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের দমনপীড়ন চোখে পড়ার মত। দলটির অভিযোগ, তাদের শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে মিথ্যা অভিযোগ এনে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। এমনিতেই দলটি কোনো সভা-সমাবেশ করতে পারছেনা। দেশব্যাপী তাদের অফিসগুলোও বন্ধ। কেন্দ্রীয় নেতারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে। যারা বাইরে আছেন তাদের অধিকাংশই এখানে-সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারের রোষানলে পড়ে পরিবারগুলোও এখন অসহায়। জামায়াত-শিবিরের উপর সরকারের এমন কু-নজর ছিল যে, দেখামাত্রই তাদের গুলির নির্দেশনা ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি। অভিযোগে প্রকাশ, সরকার শুধু জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের দমন পীড়ন করেই ক্ষান্ত হয়নি, যে কোনো ঘটনা ঘটলেই তদন্তের আগেই তার দায়ভার সংগঠনগুলোর উপর চাপিয়ে দেয়া হয়। আর এর মাধ্যমে শুরু হয় নতুন করে গ্রেফতার ও দমনপীড়ন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের নিজস্ব কোন্দলে ভেম কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও সেগুলোর দায়ও তারা জামায়াত-শিবিরের উপর চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

সভা-সমাবেশে বাধা দেয়া প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির অবৈধ নির্বাচনের পর থেকে যখনই বিএনপি সমাবেশ করতে অনুমতি চেয়েছে, তখনই সরকার অধিকাংশগুলোর অনুমতি দেয়নি। সারা দেশে এখন দুটো আইন। আওয়ামী লীগের জন্য একটি আর অন্য সবার জন্য আরেকটি। তারা ভিন্নমতের জনসভা বা মতামত সহ্য করতে চান না। এই সরকার নিজেরা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু গণতন্ত্রের চর্চা করে না।

অভিযোগে প্রকাশ, ২০০৮ সালে বিতর্কিত এক প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিএনপি ও জামায়াতের সভা-সমাবেশের উপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। শুরুতে বিএনপিকে মাঝে মধ্যে সমাবেশ করতে দেয়া হলেও জামায়াতকে দেখা মাত্রই গুলি করা হতো। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির উপরও চাপ বাড়তে থাকে। কারণ দলটি সরকারের সেই একতরফার নির্বাচনে অংশ নেয়নি। বিএনপি যখনই কোনো ইস্যুতে বা কোনো বিশেষ দিবসে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি চায়, তা নিয়ে গড়িমসি শুরু হয়। এমনকি ঘরোয়া সভাতেও বাধা দেয়া হয়। অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বিএনপির নেতাদের সাক্ষাৎও দেননা। যখনই সমাবেশের দাবি উঠে তখনই আইনশৃঙ্খলার অবনতি, যানজট সৃষ্টিহ নানান অজুহাতে বিএনপিকে অনুমতি দেয়া হয়না। কিন্তু সরকারি দল রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে হর-হামেশাই রাজধানীতে সভা-সমাবেশ করছে। গেল বছরের ৭ নবেম্বর রাজধানীতে একটি সমাবেশ করার অনুমতি চায় বিএনপি। কিন্তু সরকার সেটি করতে দেয়নি। দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে র‌্যালীসহ সমাবেশ করতে চেয়েছিল। তাতেও অনুমতি মিলেনি। বিজয় দিবসে সমাবেশ করতে চাইলে বদ্ধঘরে আলোচনা সভার অনুমতি মিলে।

https://www.dailysangram.com/post/389491