১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শুক্রবার, ৩:৪৫

নূর হোসেন নেই, আছে ভাতিজার সাম্রাজ্য

চাঁদাবাজি, দখল বাণিজ্য থেকে মাসে বাদলের আয় ২০ লাখ টাকা

নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার প্রধান আসামি, অপরাধ জগতের অঘোষিত সম্রাট নূর হোসেনের পতন হয়েছে পাঁচ বছর আগে। নূর হোসেন নেই তো কী হয়েছে। তার স্বজনরা এখন সেই সাম্রাজ্যে রাজত্ব করে যাচ্ছে। আর এই সাম্রাজ্যের অধিপতি এখন তারই ভাতিজা শাহজালাল বাদল। তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ডিএনডি খালের বিশাল এলাকা। এই খালের ওপর দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে চলে বাদলের চাঁদাবাজি। প্রতিদিন এসব অবৈধ স্থাপনা থেকে অর্ধলক্ষাধিক টাকা হিসেবে মাসে প্রায় ২০ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হয়। নিজ ওয়ার্ডের বাইরে বাদলের এই অবৈধ স্থাপনার বিস্তৃতি রয়েছে পাশের ৪ নম্বর ওয়ার্ডেও। নূর হোসেনের ভাতিজা হওয়ায় পাশের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাদলের এই দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না।

সরেজমিন সিদ্ধিরগঞ্জে নাসিকের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে দেখা গেছে, চিটাগাং রোডের উত্তর পাশে ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খালের প্রধান পানি নিস্কাশন খালের বিশাল অংশ দখল ও ভরাট করে প্রায় আড়াইশ' অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে খাবার হোটেল, বাস কাউন্টার; ফোন-ফ্যাক্স, ফটোকপি, ওষুধ, চা-পান, এলপি গ্যাস, গাড়ির যন্ত্রাংশ, মুরগির দোকানসহ নানা স্থাপনা। বাদল তার অবৈধ স্থাপনার ছোবল বসিয়েছেন পাশের ৪ নম্বর ওয়ার্ডেও। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সঙ্গে ৩ নম্বর ওয়ার্ডকে বিভক্ত করেছে ডিএনডির একটি খাল। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পাশাপাশি ৪ নম্বর ওয়ার্ডের এই খালের ওপর মাচা করে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে সেগুলো ভাড়া দিয়ে চলে বাদলের দৈনিক চাঁদাবাজি।

এদিকে ডিএনডি খালের উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গত এক সপ্তাহে দু'বার মাইকিং করেছে খালের ওপরে থাকা অবৈধ স্থাপনা নিজ উদ্যোগে সরিয়ে নিতে। কিন্তু কেউ এ আহ্বানে কর্ণপাত করেনি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও তাতে কারও সাড়া পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব দোকানের অধিকাংশ বরাদ্দ (পজিশন) মৌখিকভাবে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে দিয়েছেন শাহজালাল বাদল। এসব অবৈধ স্থাপনার প্রায় পুরোটাই তার নিয়ন্ত্রণে। এ ছাড়াও ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরা হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড পর্যন্ত যেসব লেগুনা চলাচল করে, সেগুলো থেকে বাদলের লোকজন চাঁদা আদায় করে থাকে। বাদলের দখলদারিত্ব তার নিজ ওয়ার্ড ছাড়িয়ে পাশের ৪ নম্বর ওয়ার্ডেও বিস্তৃতি বিষয়ে জানতে ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুল হক হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, এগুলোর সঙ্গে কারা জড়িত, আমার জানা নেই। যেহেতু ডিএনডি এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে সেনাবাহিনী কাজ করছে, তাই এসব অবৈধ স্থাপনা ভবিষ্যতে অবশ্যই থাকবে না।

দখলের অভিযোগ বিষয়ে শাহজালাল বাদল বলেন, এসবের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। যারা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে, তিনি তাদের কাছ থেকে এসব বিষয় জানতে বলে ফোন কেটে দেন। এর পর তার মোবাইলে কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি। এ বিষয়ে পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিন বলেন, ডিএনডি প্রজেক্টের উন্নয়ন কাজ চলছে। সিটি করপোরেশনের রাস্তার কাজের জন্য ডিএনডির অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে এসব স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য মাইকিং করেছি। কিন্তু এর নিয়ন্ত্রণকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যেও তা সরিয়ে নেয়নি। তবে শিগগিরই ডিএনডি খালের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে।

২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুন ঘটনার পর চাচা নূর হোসেনের সঙ্গে শাহজালাল বাদলও এলাকা থেকে পালিয়ে যান। এক বছর পর ওই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়ার পর বাদল এলাকায় ফিরে আসেন। এসেই তিনি চাচার রাজত্ব নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন।

https://samakal.com/whole-country/article/19091026/